১৯ এপ্রিল ২০২৩, বুধবার, ২:২৯

অন্যরকম বঙ্গবাজার

উপর থেকে দেখলে মনে হবে রঙিন ছাতার সমাহার, অথচ ক’দিন আগেও এখানেই ছিল মার্কেট ছবি: জীবন আহমেদ
ভয়াবহ আগুনে রাজধানীর বঙ্গবাজারের প্রায় পাঁচ হাজার দোকান পুড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী। ক্ষতি হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ক্ষত কিছুটা লাঘব করতে চৌকি পেতে ব্যবসার অনুমতি দেয়া হলেও ক্রেতার দেখা মিলছে না। এর মধ্যে মাথার ওপর চৈত্রের প্রখর রোদ। বিক্রেতারা কেউ কেউ ঘেমে একাকার। রোদ থেকে বাঁচতে মাথায় ছাতা ধরে হাঁকডাক দিয়ে ক্রেতা খুঁজছেন তারা। এদিকে গত ৪ঠা এপ্রিলের অগ্নিকাণ্ডের পর এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা ফান্ডে জমা হয়েছে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার মতো। আরও ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা পাইপ লাইনে আছে।

বিক্রেতারা জানান, আমরা পাইকারি পণ্য বিক্রি করতাম। খুচরা বিক্রি করতাম না।

অথচ এখন কাঠফাটা রোদে মাথার উপরে ছাতা ধরে খুচরা ক্রেতার অপেক্ষায় আছি। তবে বঙ্গবাজারে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা ব্যবসায়ীদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ দেখা গেছে।

এদিকে গতকাল রাজধানীর বঙ্গবাজারের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তা হিসেবে ২ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ডিএসসিসি’র নগর ভবনের বুড়িগঙ্গা হলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির নেতাদের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেন ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এ সময় ডিএসসিসি মেয়র বলেন, বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতে পুনর্বাসিত হতে পারে, সেজন্য আমরা দুই কোটি টাকার অনুদান দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ঈদের আগেই সেই টাকা আমরা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতাদের হাতে হস্তান্তর করেছি। তিনি বলেন, আমরা মনে করি, এই অনুদানের অর্থ কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুঁজি ও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে কাজে লাগবে। আমরা বিশ্বাস করি যে, অচিরেই পর্যাপ্ত তহবিল তাদের সহায়তায় গঠন হবে। প্রধানমন্ত্রীও এই তহবিলে অংশগ্রহণ করবেন। এর আগে গত ১২ই এপ্রিল বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের চৌকি বিছিয়ে অস্থায়ী ব্যবসা পরিচালনা কার্যক্রমের উদ্বোধন শেষে ডিএসসিসি’র পক্ষ থেকে ২ কোটি টাকা সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, মোট ৬ কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ডিএসসিসিসহ মোট ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা ফান্ডে জমা হয়েছে। বাকিগুলো শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।

বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাজনরা এভাবে বসতে না চাইলেও কর্মচারীরা বসেছেন। গভীর রাত পর্যন্ত কেনাবেচা চললেও ইফতারের পরই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলছেন তারা। রাতে মালামাল নিয়ে যাচ্ছেন বাসায়। রোদে একটু কষ্ট হলেও ব্যবসা করতেই হবে।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে লুঙ্গি, গেঞ্জি ও শীতের চাদরের দোকান ছিল হালিম মিয়ার। আগুনে পুড়ে তার ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। তার পরও নতুন আশায় বুক বেঁধেছেন তিনি। এই ব্যবসায়ী বলেন, আগুনে কিছুই বাঁচাতে পারিনি। এখন পার্টির থেকে বাকিতে পণ্য এনে এখানে অস্থায়ীভাবে বসবো। ঈদের আগে আমাদের ভালো ব্যবসা হতো। এখন সেটি না হলেও আপাতত খেয়ে-পরে বাঁচার ব্যবস্থা হবে।

ছেলেকে নিয়ে বঙ্গবাজারে মার্কেট করতে এসেছেন রাজধানীর কামরাঙ্গীচর এলাকার প্লাস্টিক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ তুহিন। তিনি বলেন, প্রতিবারই এখান থেকে কমবেশি মার্কেট করি। এবারো এসেছি। দেখি কী কিনতে পারি। না হলে অন্য মার্কেট থেকে কেনাকাটা করতে হবে।

বঙ্গবাজার ইউনিটে রবিউল নামে এক বিক্রেতা বলেন, তেমন বেচাকেনা নেই। এখানে কেউ আসছে না। হয়তো অন্য মার্কেটে গিয়েছিল। এখান দিয়ে যাওয়ার সময় কাপড় দেখছে, দামে হলে নিয়ে নেয়। তিনি বলেন, আগে এই দোকানে পাইকারি কেনাবেচা হতো। কিন্তু এখন খুচরা কেনাবেচা করছি। তাও টুকটাক হচ্ছে। দিনে হয়তো দু-চারটা কেনাবেচা হয়। প্রতিদিন মালামাল গোডাউনে নিয়ে রাখি।’ পাশের আরেক ব্যাগের দোকানিও একই কথা বলেন।

পায়েল ফ্যাশনের মালিক নুরুল হোসেন বলেন, ‘বেচাকেনা খুবই খারাপ। ক্রেতা আসছে না। সব ব্যবসায়ী বসে আছে। সন্ধ্যার পরেও কেউ আসছে না। এই মালামালগুলো গোডাউনে ছিল, তাই নিয়ে বসছি।

জসিম হোসেন বলেন, বছরে এই মার্কেটের প্রতিটি দোকানে কয়েক কোটি টাকার কেনাবেচা হতো। তার অধিকাংশ হতো ঈদকে সামনে রেখে। কিন্তু এবার আমরা একেবারে পথে বসে গেছি।

গত ৪ঠা এপ্রিল সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। সকাল ৮টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ৪১টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। এরপর ৪৩টি ইউনিট যাওয়ার খবর জানায় ফায়ার সার্ভিস। এরপর শুক্রবার (৭ই এপ্রিল) সকালে আগুন সম্পূর্ণভাবে নেভানোর ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় ডিএসসিসি’র পক্ষ থেকে গঠন করা তদন্ত কমিটি তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে মোট ৩ হাজার ৮৪৫ জন ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরমধ্যে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি মার্কেটে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ২ হাজার ৯৬১ জন। সিগারেটের অবশিষ্টাংশ বা কয়েলের আগুন থেকে মার্কেটে আগুন লাগার কথাও জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।


https://mzamin.com/news.php?news=51922