১৮ এপ্রিল ২০২৩, মঙ্গলবার, ১১:২৫

দেশের মানুষের গড় আয়ু কমলো

দেশে প্রথমবারের মতো মানুষের গড় আয়ু কমেছে। এখন একজন মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স-২০২১’- শীর্ষক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। আগের জরিপে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২ দশমিক ৮ বছর। গতকাল বিবিএস অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে দেশের মানুষের গড় প্রত্যাশিত আয়ু ছিল ৬৬ দশমিক ৮ বছর। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাড়ার পরে ২০২০ সালে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেড়ে ৭২ দশমিক ৮ বছর হয়। কিন্তু ২০২১ সালে সেটি কমে ৭২ দশমিক ৩ বছর হয়েছে। অর্থাৎ মানুষের গড় আয়ু কমেছে ৬ মাস। জরিপের তথ্য অনুযায়ী গতবারের মতো এবারও পুরুষের তুলনায় নারীর গড় আয়ু বেশি।

আর গড় আয়ু বেশি কমেছে পুরুষদের। ২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী দেশের পুরুষ বাঁচে গড়ে ৭০ দশমিক ৬ বছর, নারীর গড় আয়ু ৭৪ দশমিক ১ বছর। আগের বছর পুরুষের গড় আয়ু পাওয়া যায় ৭১ দশমিক ২ বছর। আর নারীর ছিল ৭৪ দশমিক ৫ বছর। অর্থাৎ পুরুষের গড় আয়ু কমেছে ০ দশমিক ৬ বছর, নারীর কমেছে ০ দশমিক ৪ বছর।

গড় আয়ু কমে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স জরিপের প্রকল্প পরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, গড় আয়ু কমে যাওয়ার চিত্রটি অত্যন্ত নগণ্য। এটি কোভিডের কারণে কমতে পারে। তবে পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে এটিকে কম বলা যাবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা যে হাউজহোল্ড থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করেছি সেটি অনুযায়ী প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর হয়েছে। কিন্তু অন্য কোনো হাউজহোল্ড থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করলে আরেকটি রেট আসতো। এখানে তো আমরা শতভাগ কাউন্ট করিনি। আমরা শুধুমাত্র স্যাম্পল নিয়েছি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পল্লী হতে পল্লীতে স্থানান্তর প্রতি হাজারে ৩১ দশমিক ৯ জন, যা ২০২০ ছিল ৩২ দশমিক ৭ জন। শহর হতে পল্লীতে স্থানান্তর ৮ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৪ দশমিক ৭ জন। এক্ষেত্রে শহর থেকে গ্রামে মানুষের ফিরে যাওয়া মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। শহর এলাকার অর্থাৎ শহরের মধ্যেই স্থানান্তর ১২৫ দশমিক ৯ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ১০৯ দশমিক একজন। পল্লী হতে শহরে স্থানান্তর ৩০ দশমিক ৮ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৩১ দশমিক ৩ জন। শহর হতে শহরে স্থানান্তর ৯৫ দশমিক ১ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৭৭ দশমিক ৮ জন। বহির্গমন হার প্রতিহাজারে ৫৫ দশমিক ৯ জন, যা ২০২০ সালে ছিল ৭০ দশমিক ৩ জন। প্রতি পরিবারের (খানা) সদস্য সংখ্যা ৪ দশমিক ৩ জন। এটি আগের জরিপেও একই ছিল। খানা প্রধানের শতকরা পুরুষের হার ৮৪ শতাংশ, অর্থাৎ ৮৪ শতাংশ পরিবারের প্রধান হচ্ছেন পুরুষ। যেটি ২০২০ সালে ৮৫ শতাংশ। কিন্তু নারী প্রধানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ১৫ শতাংশ।

পরিবারের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্যাপ এবং নলকূপের খাবার পানি ব্যবহার করে শতকরা ৯৭ শতাংশ মানুষ, যা ২০২০ সালে ছিল ৯৮ দশমিক ৩ শতাংশ। উন্নত উৎস হতে খাবার পানি ব্যবহার করে ৯৮ দশমিক ২ শতাংশ। নিরাপদ খাবার পানি ব্যবহার করে ৭৩ দশমিক এক শতাংশ। বিদ্যুৎ ব্যবহার করে শতকরা ৯৬ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ। সোলার ব্যবহার করে ২ দশমিক ৩ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ২ দশমিক ৪ শতাংশ। স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার করে শতকরা ব্যবহার করে ৮৫ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ। উন্মুক্ত স্থানে মল ত্যাগ করে ১ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

দেশের ৭ বছর থেকে তার উপরে সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ। পুরুষের হার ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ৭৭ দশমিক ৪ শতাংশ। নারী ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ। ১৫ বছর ও তার উপরে জনসংখ্যার সাক্ষরতার হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এরমধ্যে পুরুষের হার ৭৭ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ৭৮ দশমিক ২ শতাংশ। নারী ৭১ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০২০ ছিল ৭৩ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ৮৮ দশমিক ৪ শতাংশ। হিন্দুসহ অন্যান্য কমে হয়েছে ১১ শতাংশ, যা ২০২০ সালে ছিল ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার বেড়েছে। ২০২১ সালের জরিপে এটি দাঁড়িয়েছে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশে, যেটি ২০২০ সালের জরিপে ছিল ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এক্ষেত্রে দেখা যায় গ্রাম ও শহর উভয় ক্ষেত্রেই বেড়েছে। পল্লীতে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে ৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৬৩ দশমিক ১ শতাংশ। শহরে ব্যবহার করে ৬৫ শতাংশ, যা আগের জরিপে ছিল ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া জন্ম নিয়ন্ত্রণের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ৬৫ দশমিক ৬ শতাংশ। সনাতন পদ্ধতি ব্যবহার করে মাত্র ১ শতাংশ দম্পতি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ। তাই এটি আগামীতে প্রকল্পের আওতায় না করে বিবিএস’র রাজস্ব খাত থেকে নিয়মিতভাবে পরিচালিত হবে। এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশের হাঁড়ির খবর উঠে এসেছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. শামসুল আলম বলেন, এই জরিপের মাধ্যমে এসডিজি’র ২৬টি ইন্ডিকেটরের তথ্য পাওয়া যাবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপ। এখানে দেখা গেছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। যেটি উদ্বেগজনক। এক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্যাপ বা টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় খুশি হওয়ার কিছু নেই। কেননা দেশের ৬১ জেলায় টিউবওয়েলের পানিতে আর্সেনিক আছে। সেইসঙ্গে ট্যাপের পানি পান করা কতটুকু নিরাপদ সেটিও প্রশ্ন সাপেক্ষ। তিনি আরও বলেন, শহর থেকে মানুষ গ্রামে যাচ্ছে কেন? এর অন্যতম কারণ হলো- এখন গ্রামে কর্মসংস্থান বেড়েছে। কৃষির বহুমুখীকরণ হয়েছে। কৃষিজ কাজ বেড়েছে। তাই শহরের চেয়ে গ্রামে কাজ বেশি। ফলে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছে।

https://mzamin.com/news.php?news=51782