১৬ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার, ১১:৩২

ঈদের ৭ দিন আগে ফুটওভারব্রিজ ভাঙতে হবে কেন?

ঢাকা নিউমার্কেটের নিউ সুপার মার্কেটে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনায় ফুটওভারব্রিজ ভাঙাকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। কেউ বলছেন, ফুটওভারব্রিজ ভাঙার সময় শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুন লেগে যায় যেটি আর নেভানো সম্ভব হয়নি। কেউ বলছেন, সিটি করপোরেশন রাতে কেন ব্রিজ ভাঙতে আসবে? ব্রিজের মাথায় কেন আগুন? এটি পরিকল্পিত। ব্যবসায়ীদের পথে বসানোর জন্য এই আগুন।

ওবায়দুল্লাহ রনি নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, তার পাঁচটি দোকান রয়েছে মার্কেটটির দ্বিতীয় তলায়। তিনি বলেন, গত রমযানে ব্রিজ ভাঙার কথা বলেছিল, আমরা রোজায় না ভাঙার কথা বললে সিটি কর্পোরেশন রাজি হয়েছিল। এবার মাত্র ৭ দিন পর ঈদ। কেন এখন ভাঙতে হবে? রোজার পরে ভাঙলেই হতো। তিনি বলেন, আগুনের খবরে আমরা সিকিউরিটিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের জানিয়েছে ফুটওভারব্রিজ ভাঙার সময় বিদ্যুতের শর্টসার্কিট থেকে আগুন ধরে যায়। পরে এ আগুন আর নেভানো সম্ভব হয়নি। ব্যবসায়ী মাহবুব শেখ বলেন, তারও চারটি দোকান রয়েছে মার্কেটে। সব মালামাল পুড়ে গেছে। প্রতিটি দোকান ৩০ লাখ টাকা করে অ্যাডভান্স দেওয়া। মাহবুব শেখ বলেন, আমার সব শেষ। গতকালও কোটি টাকার বেশি মাল ছিল, আজ শূন্য। আমি কার কাছে কী চাইবো? একথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন এ ব্যবসায়ী।

এর আগে শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে মার্কেটে আগুন লাগার তথ্য জানতে পারে ফায়ার সার্ভিস। ৫টা ৪৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর একে একে ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এর আগে গত ৪ এপ্রিল সকালে রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি পোশাকের মার্কেট বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন লাগে। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের মার্কেটগুলোতে। আগুনে কয়েক হাজার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পথে বসেন হাজারো ব্যবসায়ী।

আগুনের ঘটনা নাশকতা কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে : র‌্যাব
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটে লাগা আগুন নাশকতা কি না, তা খতিয়ে দেখতে মাঠে নেমেছে র‌্যাবের তদন্ত দল। গতকাল শনিবার বিকেলে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ কথা বলেন। তিনি বলেন, নিউমার্কেট এলাকায় অগ্নিকা-ের খবর পাওয়ার পর ঢাকার ব্যাটালিয়নের টহল দল ও সাদা পোশাকে র‌্যাব সদস্যদের দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসকে সহযোগিতা করেন তারা। র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার করেন। পাশাপাশি মাইকিং করে উৎসুক জনতাকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সার্বক্ষণিক কাজ করেন। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, আগুনের ঘটনায় কোনো ধরনের নাশকতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে র‌্যাবের গোয়েন্দারা কাজ করছেন। নিউ সুপার মার্কেটের বিভিন্ন দোকান থেকে মালামাল বের করে দোকান মালিকদের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সহযোগিতা করেন র‌্যাবের সদস্যরা। এছাড়াও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের খাবার পানি সরবরাহ করেন তারা।

এর আগে গতকাল শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে নিউমার্কেটের নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার তথ্য জানতে পারে ফায়ার সার্ভিস। ৫টা ৪৩ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এরপর একে একে ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিউমার্কেট এলাকায় র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি ১২ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। যোগ দেন সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরাও। ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে ভবনের তৃতীয় তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।

নিউ সুপার মার্কেটের আগুনের সঙ্গে ফুটব্রিজ ভাঙার সম্পর্ক নেই : ব্যবসায়ীদের সন্দেহ উড়িয়ে দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, নিউ সুপার মার্কেটের অগ্নিকা-ের সঙ্গে সেখানকার ফুটব্রিজ ভেঙে ফেলার কোনো সম্পর্ক নেই। গতকাল শনিবার নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকা-ের পর ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছেরের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা বলা হয়। অগ্নিকা-ের সঙ্গে ডিএসসিসির কাজকে সম্পর্কিত করার ‘অপচেষ্টা’ থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানান হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

ঢাকা নিউ মার্কেট লাগোয়া তিন তলা ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের দোতলায় গতকাল শনিবার সকালে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস। ওই মার্কেটের সামনে যে ফুটব্রিজ ছিল, তা দিয়ে দোতলায়ও সরাসরি যাওয়া যেত। পুরনো ওই ফুটব্রিজটি ভাঙার কাজ করছিল ডিএসসিসি, তার মধ্যেই অগ্নিকাণ্ড ঘটল মার্কেটে। আগুন লাগার পর মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ ওই ফুটব্রিজ ভাঙার সঙ্গে আগুনের সম্পর্ক থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেন, যা তারা ফায়ার সার্ভিসকেও বলেন।
আবু ইউসুফ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ঈদের এই সময়ে ফুটব্রিজ ভাঙার বিরোধিতা করেছিলেন।

মনসুর আলী নামে এক দোকানকর্মী বলেন, “আমরা বারবার বলছি, যা করার ঈদের পরে করেন। কিন্তু তারা শোনেনি।”
ডিএসসিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “আগুন লাগাকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু ব্যক্তি/ স্বার্থান্বেষী মহল নিউ মার্কেটের সঙ্গে সংযুক্ত পথচারী পারাপার সেতুর (ফুটব্রিজ) সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণে সিটি করপোরেশনেরে গৃহীত উদ্যোগকে সম্পর্কিত করার অপচেষ্টা করছেন। “ফলে গণমাধ্যমে ‘বিভ্রান্তিকর ও অনাকাক্সিক্ষত’ সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে, যা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।”

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ঢাকা নিউ মার্কেটের সঙ্গে সংযুক্ত পথচারী পারাপার সেতুটি (ফুটব্রিজ) গত বছরই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ফলক ঝুলিয়ে দেয়া হয় এবং সেতুটি বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে সেটি (নোটিস) সরিয়ে লোকজন চলাচল করছিল, যা অত্যন্ত অনিরাপদ। “এমতাবস্থায় দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গত ১২ এপ্রিলে সেতুটির সঙ্গে মার্কেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৫ এপ্রিল রাত ২টা হতে ভোর ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত সেতুটির সঙ্গে মার্কেটের দ্বিতীয় তলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং আজকের মতো কার্যক্রম শেষ করে।”

সংবাদ মাধ্যমের বরাতে ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে আগুন লাগার কথা জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “সুতরাং অগ্নিকা-ের সূত্রপাতের সময় হতে আধা ঘণ্টারও বেশি আগে সেতুর সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ কার্যক্রমের দৃশ্যত ও অদৃশ্য কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই। “তারপরও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সেতু অপসারণের সঙ্গে আগুন লাগাকে একসূত্রে গাঁথার অপচেষ্টায় লিপ্ত। এই অগ্নিকা-ের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের সেতু বিচ্ছিন্নকরণের ন্যূনতম কোনো সংযোগ নেই।”

ফুটব্রিজ যেখানে ভাঙার কাজ চলছে, সেখান থেকে ৪০০ ফুটেরও বেশি দূরে আগুন লেগেছে বলে দাবি করা হয় ডিএসসিসির বিজ্ঞপ্তিতে।

https://dailysangram.com/post/522257