১৪ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার, ১২:২৭

তাপদাহে বোরো নিয়ে শঙ্কায় কৃষক

সব সময় ধানের গোড়ায় পানি রাখার পরামর্শ

গত সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে তাপদাহ। তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রিও ছাড়িয়ে যাচ্ছে কোথাও কোথাও। তীব্র তাপদাহ তথা হিটশকে মাঠের বোরো ধানের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বছর দু-এক আগেও হিটশকে হাওরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বোরো ধানে চিটা হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার হন কৃষকরা। আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে কৃষিবিদরা বলছেন, তাপদাহে বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসলও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে হাওরাঞ্চলের ৭ জেলায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এই অঞ্চলের মাঠে বিআর ২৮ ও ২৯ ধানের চাষ হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকায় হাওরাঞ্চলে ব্যাপক বোরো ধান চাষ হয়েছে। ক্ষেতে ক্ষেতে ধানের শীষ সোনালি রং ধারণ করতে শুরু করেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে ধানের ব্যাপক ফলন আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে কিছু কিছু জায়গায় বিআর-২৮ ধানে চিটা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু দিন থেকে তীব্র তাপদাহ শুরু হওয়ায় ফের হিটশকে বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয় কি না- এ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষক।

তবে, ফসলের ক্ষতি রোধে কৃষকের করণীয় জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ এই সংস্থার বাস্তবায়নাধীন ‘কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো: শাহ কামাল খান আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিয়ে বলেছেন, দেশের ৪৯টি জেলার উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গত ১০ এপ্রিল থেকে এই তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে, আগামী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। জেলাগুলো হলো- বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরিয়তপুর, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, মেহেরপুর, নড়াইল, সাতক্ষীরা, বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মৌলভীবাজার।

তাপদাহের প্রেক্ষাপটে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি আবহাওয়া তথ্য সেবার পক্ষ থেকে কৃষকদের জন্য কিছু বিশেষ পরামর্শও প্রদান করা হয়। তাপপ্রবাহের ক্ষতি থেকে ধান রক্ষার জন্য বোরো ধানের জমিতে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। ধানের শীষে দানা শক্ত না হওয়া পর্যন্ত জমিতে অবশ্যই ২-৩ ইঞ্চি দাঁড়ানো পানি রাখতে হবে। অন্য দিকে চলমান আম মৌসুমে আম গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সেচ প্রদান এবং প্রয়োজনে গাছের শাখা প্রশাখায় পানি স্প্রে করার পরামর্শ কৃষিবিদদের।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে বোরো ধান মাঠে রয়েছে। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ধানে ফুল, কোথাও থোড় হয়েছে। কিছু কিছু দুগ্ধ আর কিছু কিছু ক্ষীর অবস্থায় আছে। বর্তমানে পোকা-মাকড় ও রোগবালাই তেমন না থাকলেও তাপমাত্রা দিন দিন বাড়ছে। তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে গেলে ধানে চিটা ধরার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় ধানে ফুল অবস্থায় পানি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধান গাছের গোড়ায় সর্বদা ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পানি ধরে রাখা দরকার।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমরা সারা দেশের জেলা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি। লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। তাপদাহের সময় যাতে বোরো ধানের গোড়ায় সব সময় পানি রাখা হয়। কারণ পানির ঘাটতি হলে ধানে চিটা হবে। এখন পর্যন্ত কোথাও তাপদাহে ক্ষতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে কিছ ুদিন আগে ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছিল। এখন আর সেটা নেই।


https://www.dailynayadiganta.com/first-page/741281