১১ এপ্রিল ২০২৩, মঙ্গলবার, ১২:৩৬

গোদাগাড়ীতে সেচের পানি না পেয়ে কৃষকের বিষপান

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বোরো ধানের খেতে সেচের পানি না পেয়ে আবারও এক সাঁওতাল কৃষক বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তার নাম মুকুল সরেন। গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের বর্ষাপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। বাবার নাম গোপাল সরেন।

মুকুলের বাড়ি যে গ্রামে, তার পাশের গ্রামের নাম নিমঘটু। এ গ্রামের দুই সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বোরো ধানের জমিতে সেচের পাানি না পেয়ে গত বছরের মার্চে বিষপান করেছিলেন। এতে দুজনেরই মৃত্যু হয়।

বিষপানের পর রোববার দুপুরে অসুস্থ অবস্থায় মুকুলকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তার পাকস্থলি ধুয়ে বিষ বের করা হয়েছে। তিনি এখন শঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।

অভিনাথ ও রবি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) যে গভীর নলকূপের আওতায় জমি চাষ করতেন, সেই একই নলকূপের আওতায় কৃষক মুকুল সরেনেরও চাষাবাদ। মুকুল এবার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুকুল সরেন বলেন, সেচের পানির জন্য তিনি এক সপ্তাহ ধরে গভীর নলকূপে ঘুরছেন। কিন্তু অপারেটর হাসেম আলী বাবু তাকে পানি দিচ্ছিলেন না। রোববার তিনি আবার পানির জন্য যান। তখন বাবু তাকে এক বোতল কীটনাশক দেন ও এটা বাবুর জমিতে দিয়ে আসতে বলেন। এ সময় মুকুল বলেন, পানি না দিলে তিনি এই কীটনাশক পান করবেন। তার পরও তার জমিতে পানি দেওয়া হয়নি।

দেওপাড়া ইউনিয়ন (ইউপি) চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, তিনি শুনেছেন যে রোববার দুপুরে মুকুল পানি না পেয়ে বিষের বোতল নিয়ে ঘুরে বেরিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। তারপর বিষপান করেছেন কিনা তা জানি না। চেয়ারম্যান বলেন, এবার বোরো চাষ করে মুকুল দুদিন তার কাছে গিয়েছেন। তিনি পানি পাচ্ছেন না বলে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন।

গভীর নলকূপের অপারেটর হাসেম আলী বাবু বলেন, কয়েক দিন আগে বৃষ্টি হয়েছে। তখন কেউ পানি নিতে আসেনি। এখন একসঙ্গে সবাই এসেছে। আমার ডিপোর মুখ একটা, সবাইকে তো একসঙ্গে পানি দিতে পারব না। গতকাল (রোববার) মুকুল মনে হয় চুয়ানি (দেশীয় মদ) আর গাঁজা খেয়ে এসেছিল। এসে বলছে, পানি দিবি না তোকে সাখাওয়াতের মতো (আগের নলকূপ অপারেটর) জেল খাটাব। তখন তার হাত থেকে একজন বিষের বোতল কেড়ে নেয়। এই গভীর নলকূপ থেকে পানি না পেয়ে গত বছর বিষপান করে দুই কৃষক আত্মহত্যা করলে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে তৎকালীন গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করা হয়। এরপর সাখাওয়াত গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এখন তিনি জামিনে। তার বিরুদ্ধে মামলা দুটির অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। ওই ঘটনার পর কৃষক লীগ নেতা সাখাওয়াতকে বাদ দিয়ে নতুন করে হাসেম আলীকে অপারেটর নিয়োগ দেয় বিএমডিএ।

বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, অপারেটর পরিবর্তনের পরেও কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটল? একজন নির্বাহী প্রকৌশলীকে আমি হাসপাতালে পাঠিয়েছিলাম। তিনি কৃষক মুকুল সরেনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার পরেও আমরা বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ নেব।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/664399