১০ এপ্রিল ২০২৩, সোমবার, ৩:২০

আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে চিনি

চিনির কেজিতে তিন টাকা কমানোর ঘোষণার চার দিন পরও বাজারে দেখা যায়নি নতুন দরের চিনি। ফলে এখনও আগের মতোই প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়। কোথাও কোথাও চিনির সরবরাহও কম। অথচ এর আগে তিন দফায় চিনির দাম বাড়ানোর ঘোষণার দিনই নতুন দরে চিনি বিক্রি হতে দেখা যায়।

ক্রেতারা বলছেন, প্রতি কেজি চিনিতে মাত্র তিন টাকা কমানোর ঘোষণা ভোক্তাদের সঙ্গে এক ধরনের প্রহসন। এর আগে কয়েক দফা দাম বাড়িয়ে নির্ধারণ করা দরেও চিনি পাওয়া যায় না। এর চেয়ে বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে। এখন সামান্য দাম কমানোর ঘোষণায় কতটুকুইবা স্বস্তি মিলবে।

চিনির আমদানিকারকরা বলছেন, বাজারে এখনও আগের বাড়তি দরের প্রচুর চিনি রয়েছে। সেগুলোই বিক্রি হচ্ছে। রোববার থেকে কম দরের চিনির অর্ডার নেওয়া হচ্ছে। যেগুলো বাজারে চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ পৌঁছাতে পারে।

এর আগে সরকার চিনি আমদানিতে শুল্ক কমানোর পর আমদানিকারকরা বলেছিলেন, শুল্ক কমানোর আগে যেসব চিনি আমদানি করা হয়েছে, সেগুলো বিক্রি করা শেষ হয়নি। তাদের গুদামে এখনও অনেক চিনি রয়ে গেছে।

ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানিকারকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট চার বার চিনির দাম বাড়ানো হয়। ফলে খোলা চিনির কেজি ৮৪ টাকা থেকে বেড়ে হয় ১০৭ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনির কেজি দাঁড়ায় ১১২ টাকায়। এরপরও বাজারে চিনির অস্থিরতা কাটেনি।

এরপর আমদানিকারকরা চিনির আমদানি শুল্ক কমানোর অনুরোধ জানায় সরকারকে। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চিনি আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করেছে। একই সঙ্গে প্রতি টন অপরিশোধিত চিনি আমদানিতে তিন হাজার টাকা এবং পরিশোধিত চিনিতে ছয় হাজার টাকা আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। শুল্ক ছাড়ের এ সুবিধা আগামী ৩০ মে পর্যন্ত পাবেন আমদানিকারকরা। আমদাকিারক ও বাজারজাতকারীদের তথ্যমতে, শুল্ক ছাড়ের এই সুবিধার আওতায় চিনি আমদানি হলে কেজিতে ৫ থেকে সাড়ে ৫ টাকা পর্যন্ত দাম কমার কথা। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার কেজিতে তিন টাকা কমিয়ে নতুন দর ঘোষণা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত শনিবার থেকে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১০৪ এবং প্যাকেটজাত চিনি ১০৯ টাকায় বিক্রি করার কথা। কিন্তু গতকাল রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ কাঁচা বাজার ও মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটসহ বিভিন্ন বাজারে এ দরে চিনি পাওয়া যায়নি।

খুচরা ব্যবসায়ীরা আগের মতোই পরিশোধিত সাদা খোলা চিনির কেজি ১১৫ থেকে ১১৮, প্যাকেটজাত চিনি ১১২ থেকে ১২০ টাকা এবং দেশীয় হালকা লাল চিনি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক বছরের ব্যবধানে খুচরা বাজারে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ।

কারওয়ান বাজারে কিচেন মার্কেট থেকে ১৫০ টাকায় এক কেজি লাল চিনি কেনার পর মো. জাকারিয়া নামে এক ক্রেতা সমকালকে বলেন, ‘দ্যাখেন প্যাকেটের গায়ে লেখা ১১২ টাকা। কিন্ত কিনলাম দেড়শ টাকায়। এটা হলো দেশের ব্যবসায়ীদের ডাকাতি কারবার। ২০-৩০ টাকা দাম বাড়ায়া তিন টাকা কমাইলো। এটা মানুষের সঙ্গে এক ধরনের প্রহসন। এখনকার যুগে তো ফকিরও পাঁচ টাকার কম দিলে ভিক্ষা নিতে চায় না।’

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম কমেনি। পাইকারিতে না কমলে খুচরা বাজারে দাম কমার সুযোগ নেই। মালিবাগ কাঁচা বাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের বিক্রয়কর্মী আল-আমিন সরকার সমকালকে বলেন, এখনও পাইকারিতে খোলা চিনি ১১০ এবং প্যাকেট চিনি ১১২ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক খরচ আছে। তাই ১২০ টাকার কমে তো বিক্রি করা যায় না।
এদিকে বাজারে এখনও চিনির সরবরাহ বাড়েনি বলে জানান কারওয়ান বাজারের রতন স্টোরের স্বত্বাধিকারী রতন। তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো এখনও এক বস্তা চিনি চাইলে এর সঙ্গে দুধের প্যাকেট বা হালিম মিক্সড কিংবা বিরিয়ানির প্যাকেট কিনতে বাধ্য করেন। বিক্রয় রসিদও দেয় না তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে, সে দরেই বিক্রি করা হবে। ভোক্তা পর্যায়ে হয়তো সপ্তাহের শেষ নাগাদ এ চিনি পৌঁছে যাবে।

 

https://samakal.com/economics/article/2304166966