১০ এপ্রিল ২০২৩, সোমবার, ৩:১২

দাবদাহে মানুষের হাঁসফাঁস

মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ ডিগ্রি

বৈশাখের বাকি আরও কয়েকদিন। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে খরতাপ। গত কয়েকদিন ব্যারোমিটারের পারদ ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে রাতে অপেক্ষাকৃত স্বস্তি ছিল। শনিবার পরিস্থিতি পালটে যেতে শুরু করে। দিনে-রাতে প্রায় অপরিবর্তিত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রোববার যা আরও অসহনীয় হয়ে ওঠে। দেশের অন্তত পাঁচ বিভাগ পুড়ছে গরমে। সিলেটের মৌলভীবাজারেও চলছে একই পরিস্থিতি। এসব অঞ্চলের ওপর দিয়েও মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষসহ রোজাদারদের হাঁসফাঁস অবস্থা। বৃদ্ধ এবং শিশুরাও আছে নিদারুণ কষ্টে। নাভিশ্বাস উঠেছে খেটে খাওয়া মানুষের। আগামী ৫ দিনে এই পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যায় এই তাপপ্রবাহ। বঙ্গোপসাগরে একটি মৌসুমি লঘুচাপ অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। পাশাপাশি অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। এ অবস্থা আগামী ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, আগামী ৫ দিনে পরিস্থিতি পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা নেই।

সাধারণত ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচের তাপমাত্রাকে মাঝারি এবং ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। ৪০ ডিগ্রির বেশি হলে তাকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলে।

বিএমডির বুলেটিনে দেখা যায়, রোববার মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে দেশে। ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায়। এরপরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ধরা পড়ে রাজশাহীতে ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে রাজশাহীতে শনিবার ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, সর্বশেষ ৩ এপ্রিল রাজশাহীতে ৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। তখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রিতে নেমে আসে। পরে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। বুধবার রাজশাহীতে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। বৃহস্পতিবার রেকর্ড করা হয় সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া খবর হলো-দাবদাহের কারণে মানুষের চলাফেরায় কষ্ট হচ্ছে। দুপুর বেলা একান্ত জরুরি ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। আর শ্রমজীবী মানুষ তীব্র রোদে কাজ করার সময় হাঁপিয়ে উঠছেন।

রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ আলী জানান, তার দুটি গাড়ি। দুই শিফটেই তিনি গাড়ি চালান। কিন্তু রমজান মাসে লোক তেমন নেই। এ কারণে আগে দুপুর ২টার পরপরই বাসা থেকে বের হলেও এখন আসরের পরে বের হচ্ছেন। কিন্তু তখনো বাইরে তেমন লোক থাকছে না। সন্ধ্যার পরে বাজারের দিকে কিছু লোক হচ্ছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম জানান, ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ হিসাবে ধরা হয়। সে হিসাবে রাজশাহীর ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এর আগে শনিবার রাজশাহীতে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। যেটা মৃদু তাপপ্রবাহ হিসেবে ধরা হয়। রোববার সেটা ছাড়িয়ে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে। আর তাপমাত্রা সামনে আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে।

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, এক সপ্তাহ ধরে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রার পারদ বাড়তে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকছে এখানে। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রবার রেকর্ড করা হয় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। রোববার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস; যা এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

চুয়াডাঙ্গা কোর্টপড়ার নির্মাণ শ্রমিক রনি ও রিপন জানান, প্রচণ্ড রোদ। কাজ করতে পারছেন না। সকাল ৯টায় কাজে আসার কথা থাকলেও প্রতিদিন সকাল ৬টার মধ্যে কাজে যোগ দেন। বেলা ২টার মধ্যে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে যান।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/663993