৯ এপ্রিল ২০২৩, রবিবার, ১:৫৭

ফুটপাতই এখন ভরসা বসল অস্থায়ী মার্কেট

পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার থেকে এখনো পুরোপুরি সরানো সম্ভব হয়নি ছাই ভস্মসহ ধ্বংসস্তূপ। গতকাল শনিবার সেখানে অস্থায়ীভাবে মার্কেট চালুর কথা থাকলেও খুলে দেওয়া হয়নি পোড়া জায়গাটি। ফলে ঈদকে সামনে রেখে বাধ্য হয়ে ফুটপাতে দোকান নিয়ে বসেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। গতকাল সকালে দেখা যায়, উদ্ধারকর্মীরা এখনো তাদের কাজ পরিচালনা করছেন।

বঙ্গবাজার মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীদের তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সর্বস্ব হারানো ক্ষতিগ্রস্তরা এখনো রয়েছেন আশঙ্কায়।
এর আগে গত মঙ্গলবার অগ্নিকা-ে বঙ্গবাজার লাগোয়া ৫টি মার্কেট পুরোপুরি পুড়ে গেছে। আগুনে ৫ হাজারের বেশি দোকানপাট পুড়েছে।

ফুটপাতই এখন ভরসা: ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ফুটপাতে দোকান বসিয়েছে। গতকাল সকাল থেকে এলাকার ফ্লাইওভারের নিচে যেসব কাপড় বাঁচাতে পেরেছিলেন সেগুলো নিয়েই বসেছেন অনেকে। দোকানগুলো ঘিরে উৎসাহী জনতার ভিড় থাকলেও বিক্রি শুরুতেই জমে উঠেনি। তবুও ফুটপাতই এখন ভরসা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবাজারের অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বঙ্গবাজার অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঈদের আগে অস্থায়ীভাবে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘এই জায়গা পরিষ্কার করে দিলে ব্যবসায়ীরা অস্থায়ীভাবে বসেও যদি ঈদের আগে কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারেন, সেটিই ভালো। পুরোটা তো রিকভার করা যাবে না। কিছুটা যদি রিকভার করা যায়।’

আরিফুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী বঙ্গবাজারের ফ্লাইওভারের নিচে বসেছেন লেডিস আইটেম নিয়ে। তিনি বলেন, ‘ইসলামিয়া মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় আমার দোকান ছিল। এখন ঈদের বাজার। যদি বসে থাকি কেউ তো আর টাকা দিয়ে যাবে না। তাই যেটুকুই বিক্রি করতে পারি আশা নিয়ে বসছি।’

ফ্লাইওভারের নিচে দোকান নিয়ে বসেছেন বঙ্গ মার্কেটের ব্যবসায়ী রাহিম মিয়াও। তিনি বলেন, ‘আমার দুইটি দোকান ছিল কাঠের মার্কেটে। দুইটি দোকানই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যে মালামালগুলো সরাতে পেরেছিলাম এগুলো নিয়ে বসেছি। হাত একেবারে খালি। চলবো কী করে। যদি বিক্রি বাড়ে, মাল শেষ হলে আরও নিয়ে আসবো।’

কথা হয় ব্যবসায়ী শাহ আলমের সঙ্গেও। সব হারিতে নতুন করে গেঞ্জি, পায়জামা, ট্রাউজার নিয়ে বসেছেন ফুটপাতে। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবাজারের আর্দশ মার্কেটে দুটি দোকান ছিল। দুটিই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোনও মালামাল উদ্ধার করতে পারিনি। নতুন করে কিছু মাল কিনে আজকে দোকান নিয়ে বসেছি। এখনও জানাজানি হয়নি। সে কারণে বেচাবিক্রিও কম।’

ক্ষতিগ্রস্তদের তথ্য নিচ্ছে ঢাকা জেলা প্রশাসন: অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার জন্য তথ্য নিচ্ছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। গতকাল সকাল থেকেই বঙ্গবাজারের এনেক্সকো টাওয়ারের সামনে নিজ নিজ দোকানের তথ্য দিতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন বহু সংখ্যক ব্যবসায়ী। সময়ের সঙ্গে সেখানে জড়ো আরও ব্যবসায়ী, লাইনও ক্রমান্বয়ে বড় হচ্ছে। যা এখনো চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, চারদিন আগেও যারা দিনে লাখ টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন, তারা আজ নিঃস্ব। সরকারি সহায়তার জন্য তথ্য দিতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন তারা। এতে নিজেদের ছোট মনে হচ্ছে, লজ্জাও লাগছে। তবুও নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়েছেন লাইনে।
গুলিস্তান মার্কেটের একটি দোকানের মালিক মো. ফাহাদ হোসেন বলেন, আমার তিনটি দোকান ছিল, গোডাউন ছিল।

দোকানগুলো মাঝের দিকে হওয়ায় কোনো মালামাল বের করতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, তিন দোকানের প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাল (টি-শার্ট) পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দোকানের চিহ্নটুকুও নাই। আজ আমি নিঃস্ব।

ফ্যাশন গার্মেন্টসের মালিক মো. মাহবুব বলেন, আমার তিনটি দোকান এবং বড় একটি গোডাউন ছিল। ৫০ লাখ টাকার বেশি জ্যাকেট, ট্রাউজার আর রেইনকোট ছিল। আমি একটি মালও আনতে পারিনি।

জান্নাত গার্মেন্টসের মালিক কবির হোসেন বলেন, এক কোটি টাকার মাল ঢুকেছে আগের রাতে, সকাল হতে না হতেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আমার এক্সপোর্ট কোয়ালিটি জ্যাকেট ছিল সব। সব মিলিয়ে আমার ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। জানি এত পরিমাণ সহায়তা কেউ দিতে পারবে না। তবে সরকারের কাছে অনুরোধ করব, ব্যবসা করার সুযোগটা আবার দিন। আমরা ব্যবসা করে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে চাই।

এদিন ব্যবসায়ীরা নিজ দোকানের নাম, জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া ফরম, জাতীয় পরিচয়পত্র, ট্রেড লাইসেন্স এবং দোকানের নাম বা দোকানের ভিজিটিং কার্ড এনেছেন অনেকেই। কারও কারও ট্রেড লাইসেন্স দোকানেই পুড়ে গেছে। তারা শুধু দোকানের ভিজিটিং কার্ড নিয়ে এসেছেন।

গতকাল সকাল ৯টা ২০ মিনিটের দিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসেন। সুশৃঙ্খল লাইনের ব্যবস্থা করতে সহযোগিতা করেছে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা।

https://dailysangram.com/post/521699