৮ এপ্রিল ২০২৩, শনিবার, ১১:০০

বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শুরুতেই অনিশ্চয়তা

আরো সময় নিতে চান কয়েকজন ভিসি

দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) গঠন প্রক্রিয়া শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে। যদিও মাত্র তিন দিন আগেই সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা সবাই একমত হয়েছিলেন যে, একটি পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য একটি কাঠামোগত প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই এনটিএ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু করা হবে। কিন্তু মাত্র তিন-চার দিন পরেই উল্টো সুরে কথা বলছে বেশ কয়েকটি প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়। তারা এখন একক ভর্তি প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকতে রাজি হচ্ছেন না। এটি নিয়ে আরো সময় চান কয়েকজন ভিসি।

এর আগে গত ৩ মার্চ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য এখন থেকে একটি মাত্র পরীক্ষা নেয়া হবে। আর এই পরীক্ষার পদ্ধতি ও নানা কৌশল বা কর্মপরিধি নিয়ে গঠন করা হবে ন্যাশনাল টেস্টিং অথোরিটি বা এনটিএ। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই এনটিএর মাধ্যমেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে শিক্ষার্থীরা। সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়, এনটিএর গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে শিগগিরই কমিটি গঠন করবে বিশ্ববিদ্যায়ল মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি। গত রোববার ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত সভায় এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কিংবা তাদের প্রতিনিধিরা ওই দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এই পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়ে অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে বড় পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়। একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগের অবস্থান থেকে সড়ে এসেছে।

জানা গেছে, উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কেবল একটি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে গত সপ্তাহে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সভাকক্ষে আয়োজিত ওই সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি উপস্থিত থাকলেও সভায় আমন্ত্রিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক ভিসি বা দায়িত্বশীল পর্যায়ের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এতে সভার সফলতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ইউজিসির ওই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা কেউই উপস্থিত ছিলেন না। ঢাবির পক্ষে প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল উপস্থিত ছিলেন। ফলে এই সভার সফলতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য (পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, সভায় কারা উপস্থিত ছিল আর কারা ছিল না সেটি মূল বিষয় না। আমাদের সভা ফলপ্রসূ হয়েছে। এখন আমরা একটি নীতিমালা তৈরি করব। এটি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়েই করা হবে। নীতিমালা করার পর কারো আপত্তি রয়েছে কি না তখন সেটি দেখা হবে।

অন্য দিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাশ্রয় এবং ভোগান্তি কমাতে দুই বছর আগে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে এই ভর্তি পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করেনি ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত বড় চারটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া বুয়েটও নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে। ফলে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। এই অবস্থায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একক ভর্তি পরীক্ষা সফলতার মুখ দেখবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

বড় বিশ্ববিদ্যালয়গেুলো বলছে, উন্নত বিশ্বে একটি ভর্তি পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তবে বাংলাদেশে এটি একেবারেই নতুন। কাজেই এই পদ্ধতির পরীক্ষা কিভাবে হবে, কারা এর নেতৃত্বে থাকবে সবকিছুই স্পষ্ট করতে হবে। এই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা সেটিও দেখতে হবে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলেও জানান তারা।

একক পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে জানতে চাইলে বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার গণমাধ্যমকে জানান, অনেক সময় জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তেমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আমরা বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা করব। এরপর সিদ্ধান্ত জানানো হবে। তবে এই পদ্ধতির পরীক্ষার ফ্রেম ওয়ার্কটি আগে জাতির সামনে তুলে ধরা উচিত।

জাবি ভিসি অধ্যাপক ড. মো: নূরুল আলম বলেন, একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি কেবল প্রাথমিক আলোচনা। কাজেই এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করার সময় হয়নি।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/740069