৭ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার, ৭:৫৪

চট্টগ্রামে টিসিবি পণ্য বিতরণে নয়ছয়

চট্টগ্রামে টিসিবির পণ্য বিতরণ নিয়ে চলছে নয়ছয়। রমজানের শুরুতে প্রথম পর্যায়ে কার্ডধারী ১৭ হাজার ভোক্তার কাছে ছোলাসহ ৯০ হাজার ২১৪ কেজি টিবিসির পণ্য পৌঁছার কথা থাকলেও ডিলারদের গাফিলতির কারণে তা পৌঁছেনি। পণ্য বিতরণ নিয়ে ডিলারদের কথার সঙ্গে মিলছে না জনপ্রতিনিধির দেওয়া তথ্য।

মার্চের পণ্য এপ্রিলে তুলেছেন চট্টগ্রামের ১৪ ডিলার। কোনো কোনো ডিলার তা বস্তায় ভরে গুদামে রেখে দিয়েছেন। কেউ কেউ পণ্য বিলি করেছেন– দাবি করলেও সংশ্লিষ্ট স্থানে খবর নিয়ে পণ্য বিতরণের সত্যতা পাওয়া যায়নি। সরকার রমজানের শুরুতে ছোলা, তেল, চিনি ও ডাল বরাদ্দ দিলেও তা হাতে পাননি সংশ্লিষ্ট ভোক্তারা। ডিলাররা এক মাসের পণ্য পরের মাসে বিলি করায় পণ্য বিতরণে চলছে গোলমেলে পরিস্থিতি।

চট্টগ্রামের ১৮৪ ডিলারের মাধ্যমে জেলা ও মহানগরের ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫০ জন কার্ডধারী টিসিবির পণ্য পাচ্ছেন। রমজান উপলক্ষে এক কেজি ছোলা, দুই কেজি ডাল ও দুই কেজি তেল ভর্তুকি দরে ৪৭০ টাকায় তাদেরকে বরাদ্দ দেয় সরকার।

টিসিবি চট্টগ্রাম বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মার্চের টিসিবির পণ্য ওই মাসেই কার্ডধারী ভোক্তার কাছে পৌঁছে দেওয়ার নিয়ম। অধিকাংশ ডিলার মার্চের পণ্য মার্চেই পৌঁছে দিয়েছেন। কিছু ডিলার এপ্রিলে তুলেছেন। ডিলারদের কিছু সমস্যার কারণে তাঁরা পণ্য নিতে দেরি করেছেন। ১৪ ডিলার পণ্য এপ্রিলে তুললেও নয়ছয় করার সুযোগ নেই। অনিয়মের দায়ে গেল তিন বছরে ১৩ ডিলারকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে কয়েকজনের লিডারশিপ।

পটিয়ার ধলঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রণবীর ঘোষ বলেন, প্রতি মাসে আমার ইউনিয়নে ৭৮৮ কার্ডধারীর টিসিবির পণ্য পাওয়ার কথা। তবে তাঁরা প্রতি মাসে ঠিক সময়ে পণ্য পাচ্ছেন না। আমার ইউনিয়নের কোনো কার্ডধারী ফেরুয়ারিতে টিসিবির পণ্য পাননি।

মার্চের পণ্য ১ এপ্রিলে তুলেছে চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা কাজিরহাট এলাকার এএস এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী মো. মনছুর আলম বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম। তাই ৪৫০ কার্ডের পণ্য তুলতে দেরি হয়েছে। প্রতি মাসে ২৯৫০ কার্ডধারীর কাছে পণ্য বিতরণ করি। মার্চে আড়াই হাজার করা হয়েছে। আমি ১ এপ্রিল দি কিং অব মোহরা কমিউনিটি সেন্টারে বাকি ৪৫০ জনের কাছে টিসিবির পণ্য তুলে দিয়েছি।’ তবে দি কিং অব মোহরার পরিচালক শহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, ‘১ এপ্রিল আমাদের কমিউনিটি সেন্টার থেকে কোনো টিসিবির পণ্য বিতরণ করা হয়নি।’

স্থানীয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী নুরুল আমিন বলেন, ‘মার্চের টিসিবির পণ্য মার্চেই বিতরণ করা হয়েছে। মার্চের পণ্য এপ্রিলে বিতরণের সুযোগ নেই। এএস এন্টারপ্রাইজ মার্চের পণ্য এপ্রিলে তুলে বিতরণ করেছে কিনা– এক প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর বলেন, ১ এপ্রিল আমার এলাকায় কোনো পণ্য বিলি হয়নি।

দেরিতে পণ্য তোলে চট্টগ্রাম মহানগরের চাক্তাইয়ের আরেক ডিলার মেসার্স এসএম ট্রেডিং। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী হাজি মো. আবুল কালামের মোবাইল ফোনে কল দিলে তা ধরেন তাঁর স্ত্রী আমেনা বেগম। তিনি জানান, তাঁর স্বামী তিন মাস আগে মারা গেছেন। ব্যবসা এখন দুই ছেলে দেখেন। ১ এপ্রিল টিসিবির পণ্য তুলে আনার পর তা গোডাউনে রেখেছেন। ২ এপ্রিল বিলি করার কথা থাকলেও বিতরণ হয়নি।

একইভাবে পটিয়ার ডিলার হক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী এহসানুল হক ১৮৭০ কার্ডধারীর মার্চের পণ্য তোলেন এপ্রিলে। রাউজানের ডিলার মদিনা এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ আলী বলেন, মার্চের পণ্য আমরা তুলেছি ১ এপ্রিল। ১২৭৩ জনের পণ্য তোলার পর রাউজান পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড অফিসে ২ এপ্রিল কিছু পণ্য বিলি করেছি। তবে রাউজান পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলমগীর আলী বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আমার এখানে টিসিবির পণ্য বিতরণ হয়েছে। এপ্রিলের ১ বা ২ তারিখে কোনো পণ্য বিলি হয়নি।’

সন্দ্বীপের ডিলার কাজী ট্রেড এন্টারপ্রাইজের মালিক সামসুল কবির বলেন, ‘৩০ মার্চ সর্বশেষ পণ্য তুলেছি। সেগুলো উপজেলা পরিষদ গুদামে রাখা হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে পৌরসভার বাউরিয়া এলাকায় ৫ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ে ৪০০ জনের কাছে পণ্য বিতরণ করা হয়েছে।’

https://samakal.com/whole-country/article/2304166451