৭ এপ্রিল ২০২৩, শুক্রবার, ৭:৫২

সেবা খাতে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করতে পারবে সরকার

সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে অত্যাবশ্যক পরিষেবার ক্ষেত্রে (সেবা খাত) ধর্মঘট নিষিদ্ধ করতে পারবে। এমনকি জনস্বার্থে যেকোনো প্রতিষ্ঠানে লক-আউট ও লে-অফ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন ধর্মঘট শুরু করলে বা চলমান রাখলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

এমন বিধান রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা বিল-২০২৩’ উত্থাপন করা হয়েছে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

১৯৫৮ সালের এসেনশিয়াল সার্ভিসেস (মেইনটেন্যান্স) অ্যাক্ট এবং ১৯৫৮ সালের এসেনশিয়াল সার্ভিসেস (সেকেন্ড) অর্ডিন্যান্স রহিত করে নতুন আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে আনীত বিলে বলা হয়েছে, সরকার প্রয়োজন মনে করলে জনস্বার্থে কোনো প্রতিষ্ঠানে লক-আউট (মালিক কর্তৃক কোনো কর্মস্থল পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ বা কাজ স্থগিত রাখা) ও লে-অফ (কাঁচামালের স্বল্পতা বা মাল জমে থাকা বা যন্ত্রপাতি বিকল হওয়ার কারণে শ্রমিকদের কাজে নিয়োজিত করতে মালিকের ব্যর্থতা) নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে।

বিলে অত্যাবশ্যক পরিষেবা বলতে উল্লেখ করা হয়েছে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি; ই-কমার্স ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল সেবা; ডিজিটাল আর্থিক সেবা; বিদ্যুৎ সঞ্চালন, বিতরণ, সরবরাহ ও বিক্রয় এবং এসংক্রান্ত স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারণ; স্থলপথ, রেলপথ, জলপথ বা আকাশপথে যাত্রী বা পণ্য পরিবহন সেবা; বিমান ও বিমানবন্দর পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত পরিষেবাসহ বাংলাদেশ বেসামরিক ও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কার্যপরিধিভুক্ত অন্য যেকোনো পরিষেবা; স্থলবন্দর, নদীবন্দর, সমুদ্রবন্দর বা বিমানবন্দরে পণ্য বোঝাই-খালাস, স্থানান্তরসহ সংশ্লিষ্ট বন্দর বা বন্দর সম্পর্কিত পরিষেবা; কোনো পণ্য বা যাত্রীকে ছাড়পত্র প্রদান সম্পর্কিত পরিষেবা; চোরাচালান প্রতিরোধ সম্পর্কিত পরিষেবা; সশস্ত্র বাহিনীর আওতাধীন যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত পরিষেবা এবং দেশের প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র বাহিনীর স্থাপিত বা প্রতিষ্ঠিত কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো পরিষেবা; দেশের প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় পণ্য বা মালপত্র উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো পরিষেবা; খাদ্যদ্রব্য ক্রয়, বিক্রয়, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, মজুদ, সরবরাহ বা বিতরণের কাজে নিযুক্ত সরকারি মালিকানাধীন বা সরকারের নিয়ন্ত্রিত কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো পরিষেবা; সরকারি মালিকানাধীন বা সরকারের নিয়ন্ত্রিত সংরক্ষণব্যবস্থা এবং পানি সরবরাহ বা পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা সম্পর্কিত পরিষেবা; হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা এরূপ প্রতিষ্ঠান এবং ডিসপেনসারি সম্পর্কিত কোনো পরিষেবা; ওষুধ উৎপাদন, সরবরাহ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা কারখানার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো পরিষেবা; রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত পরিষেবা; কয়লা, গ্যাস, বিদ্যুৎ, ইস্পাত ও সার উৎপাদন, পরিবহন, সরবরাহ বা বিতরণের কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো পরিষেবা; কোনো তেলক্ষেত্র, তেল শোধনাগার, তেল সংরক্ষণাগার এবং পেট্রোলিয়াম বা পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থ উৎপাদন, পরিবহন, সরবরাহ ও বিতরণের কাজে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান, টাঁকশাল ও নিরাপত্তামূলক মুদ্রণকাজের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো পরিষেবা।

আইনে কিছু ক্ষেত্রে চাকরি বা চাকরিসংশ্লিষ্ট কোনো পরিষেবাকে অত্যাবশ্যক পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করার বিধান রাখা হয়েছে। কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে জনকল্যাণমূলক সেবা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এ রকম কয়েকটি ক্ষেত্র সরকার অত্যাবশ্যক পরিষেবা ঘোষণা করতে পারবে। বিশেষ করে জননিরাপত্তা বা জনগণের জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ সেবা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা হওয়ার আশঙ্কা থাকে এ ধরনের কোনো পরিষেবা। জনগণের জন্য অসহনীয় কষ্টের কারণ হচ্ছে বা হওয়ার আশঙ্কা আছে এমন পরিষেবা এবং দেশের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সারা দেশ বা দেশের কোনো অংশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আবশ্যকীয় কোনো পরিষেবা।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/04/07/1268838