৪ এপ্রিল ২০২৩, মঙ্গলবার, ১২:৫৩

সংকটে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা : মাদরাসা শিক্ষা

-ড. মো. নূরুল আমিন

এখন আমি মাদরাসা শিক্ষা সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করতে চাই। ইসলামের প্রাথমিক যুগে আধুনিককালের প্রাতিষ্ঠানিক ধরনের মাদরাসা ছিল না বললেই চলে। বহু আলেম/ওস্তাদ নিজেরা গৃহ নির্মাণ করে সেখানে হাদিসের বর্ণনা শুনাতেন এবং ফিকহের অধ্যাপনা করতেন। এ ছাড়া মসজিদ সমূহ ছিল জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র স্থল। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে ফাতেমী সুলতানদের আমলে প্রাচ্যে মাদরাসা ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। ১০০৫ সালে আল হাকিম একটি সুন্নী দারুল ইলম মাদরাসা স্থাপন করেন। নিশাপুরে আল শাইথ আল নিশাপুরীর জন্য একটি বিশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। আবু আলী হুসায়নী ১০০৩ সালে হাদিস শিক্ষা দানের জন্য একটি শিক্ষায়তন স্থাপন করেন।

দ্বীনি প্রতিষ্ঠান হিসাবে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সাথে সালজুক সুলতান আলপ আরসালান ও মালিক মাহের প্রধানমন্ত্রী নিজামুল মুলক এর নাম বিশেষভাবে জড়িত। তিনি ইমামুল হারামাইন ও আল জুয়াবনির জন্য ১০৬৫-৬৭ সালে নিজামীয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। নিজামুল মুলক এর সময় এবং তার অব্যবহিত পরে ইরাক, খুরাশান, আল জাজিরা প্রভৃতি স্থানে মাদরাসা ব্যবস্থা বিস্তৃতি লাভ করে। হিজরী অষ্টম শতাব্দীতে পূর্বাঞ্চলে বহু মাদরাসা বিদ্যমান ছিল। এর মধ্যে নিজামিয়া মাদরাসা ছিল সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। খলিফা আলমুসতানসির ১২৩৪ সালে সুলতান সিরিয়া নামক মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। হালাকু খান কর্তৃক বাগদাদ বিধ্বস্ত করার পর ও নিজামিয়া ও মুসতানসিরিয়া মাদরাসা বিদ্যমান ছিল। তাতারগণ বহু মাদরাসা ধ্বংস করার সত্ত্বে ও হিজরী অষ্টম শতাব্দীতে পূর্বাঞ্চলে বহু মাদরাসা বিদ্যমান ছিল। মোঘলগণও অনেক মাদরাসা স্থাপন করেন। সমরকন্দে তীমুর বংশীয় সুলতানদের আমলে মাদরাসাগুলো সর্বাধিক সমৃদ্ধি লাভ করে। হিজরী পঞ্চম শতকে ও পরবর্তীকালে ইরাক ও সিরিয়ার নগর সমূহে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা প্রসারিত হয়। দামেস্ক শহরে নূরুদ্দীন জংগী (১১৪৬-১১৬৩) এবং সালাহউদ্দিন (১১৭৪-১১৯৩) মাদরাসা প্রতিষ্ঠাকল্পে উদার বদান্যতা প্রদর্শন করেন।

নিজামুল মুলকের পরে আলাউদ্দিনের নাম মাদরাসা প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সমধিক প্রসিদ্ধ। তিনি জেরুজালেমে মাদরাসা প্রবর্তন করেন। সালাহউদ্দিনের সময় হিজাজ প্রদেশেও মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৩৪৯ সালে ইউসুফ আল হাছান স্পেনের গ্রানাডা নগরীতে একটি বিরাট মাদরাসা স্থাপন করেন।

মাদরাসাতে অধিত বিষয় সমূহের মধ্যে কুরআন হাদিস ছিল প্রধান। পরে কিতাবে কালামের বিকাশের সাথে এ দু’টি বিষয় এবং আরবি ভাষা ও যুক্ত হয়। ধীরে ধীরে মাদরাসার পাঠ্যসূচীতে উলম আত তাবিঈয়াত ও উলম আন নকলিয়া স্থান পায়। উলুম আত তাবিঈয়াত ছিল বস্তুসমূহের স্থিতি, গতি বিদ্যা, জ্যোতিষ্ক, মানুষ, ইতর প্রাণী, উদ্ভিদ, খনিজ পদার্থ, কৃষি বিদ্যা ও ভেষজ বিদ্যা ইত্যাদি। উলম আল নকলিয়া বলতে বুঝানো হয় কুরআনকে, এর আনুষঙ্গিক তাফসির এবং তাজবীদ, হাদিস ও তার আনুষঙ্গিক উসুলে হাদিস, ফিকাহ, ইজতিহাদ কিয়াস, ফারায়েজ ও কালাম শাস্ত্র। অর্থাৎ মাদরাসার লক্ষ্য ছিল এবং এখনো আছে সব ধরনের জ্ঞান অর্জন তা আধ্যাত্মিক হোক বা জাগতিক হোক। এই কারণেই আমরা মাদরাসা থেকে উপহার পেয়েছি ইমাম আবু হানিফা, মালেক প্রমুখের মত ইমামদের, বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ প্রমুখ মুহাদ্দিসদের, হানিফ, সাদী গাজ্জালী প্রমুখ কবি দার্শনিকদের, অন্য দিকে তেমনি পাই ইবনে সিনা, ইবনে রুশদ ও ওমর খৈয়াম প্রমুখ অসংখ্য বৈজ্ঞানিক, চিকিৎসক, গণিতবিদ ও জ্যোতির্বিদদের।

আমার এখানে ইতিহাসকে টেনে আনার উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা বলা যে ইসলামের প্রচার প্রসার ব্যক্তি এবং মুসলমানদের আকিদা বিশ্বাস ও জীবনাচারকে ইসলামী ছাঁচে ঢালাই করার ক্ষেত্রে মাদরাসা অতীতে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এখনো করছে। মানব জাতির জন্য যে জ্ঞান উপকারী তারা তারই প্রসার ঘটাচ্ছে।

একটু অতীতে ফিরে যাই। ২০১৪ সালের ১০ এপ্রিল আমার ই-মেইলে মুসলিম মিল্লাতের অন্যতম বরেণ্য শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও চিন্তাবিদ অগ্রজ প্রতীম জনাব শাহ্ আবদুল হান্নানের কাছ থেকে Please fight against this conspiracy' শীর্ষক একটি মেইল পেয়েছিলাম। মেইলে তিনি ওই দিনের প্রথম আলো পত্রিকায় ‘মাদরাসার উপযোগী করতে পাঠ্যবই-এ অদ্ভুত পরিবর্তন’- শিরোনামে প্রকাশিত একটি রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে ইসলামবিদ্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

মাদরাসা শিক্ষার পাঠ্যক্রমে তখন সময়োপযোগী কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তাকে পথভ্রষ্ট করার জন্য মহলবিশেষের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তার সজাগ দৃষ্টি সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে বলে আমি মনে করি। বস্তুত বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশ এবং এদেশের শতকরা ৯২ ভাগ মানুষ মুসলমান। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান শিক্ষা ও দিকদর্শনের প্রতিফলন হওয়া বাঞ্ছনীয়। পাশাপাশি এই শিক্ষা শিক্ষার্থীদের আধুনিক ও বৈষয়িক জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ করে একটি উন্নত জাতি হিসেবে দেশকে গড়ে তুলতে অবদান রাখতে সহায়তা করবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এজন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা ও কর্মকৌশলতা, যোগ্যতা এবং অনুকূল দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনে শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠক্রম মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করবে। দেশবাসী দীর্ঘদিন ধরে এই কামনা করে আসছে। দুর্ভাগ্যবশত শুধু বাংলাদেশ আমল নয়, পাকিস্তান আমলেও এই লক্ষ্য অর্জনে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা এবং তার পাঠক্রমকে আমরা ঢেলে সাজাতে পারিনি। এর জন্য শাসক শ্রেণী যেমনি দায়ী, তেমনি আমরাও দায়ী। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সামগ্রিকভাবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা দ্বিধা-বিভক্ত। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার নামে যে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত আছে তা মূলত স্বাধীন, স্বনির্ভর ও আত্মমর্যাদাশীল জাতি গঠনের জন্য তৈরি করা হয়নি বরং একটি কেরানিগোষ্ঠী তৈরির জন্যই তা প্রণয়ন করা হয়েছিল এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে অবয়ব পরিবর্তন করে তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। মাদরাসা শিক্ষাও দ্বিধা-বিভক্তি থেকে রক্ষা পায়নি। এখানে সরকারি ও বেসরকারি দু’টি পদ্ধতি বিদ্যমান এবং সরকারি পদ্ধতিটি ১৭৮০ সালে বৃটিশরা প্রবর্তন করেছিলেন তাদের ধাঁচে লোক তৈরি করার উদ্দেশে। বেসরকারি পদ্ধতিটি আমাদের বিজ্ঞ আলেম-সমাজ ইসলামের স্বকীয়তা রক্ষা করে আলেম সৃষ্টির জন্য তৈরি করেছিলেন। এ দু’টি পদ্ধতির ক্ষেত্রেও বেশকিছু মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে যার অনেকটাই অভিপ্রেত ছিল না। ইসলামের জ্ঞান-বিজ্ঞান গবেষণা, সমীক্ষা ও অধ্যয়নের বেশির ভাগই হয়েছে আরবী, উর্দু ও ফার্সি ভাষায়। আমরা আধুনিকতার নামে ইংরেজি ও অন্যান্য ভাষার উপর অত্যধিক গুরুত্ব দিতে গিয়ে এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, মাদরাসা শিক্ষাকে এবং আলেমদের অনেকটা আরবী, ফার্সি ও উর্দুমুক্ত করে ফেলেছি। বলাবাহুল্য ভাষা কোন অঞ্চলের সম্পদ নয়, এটা মানবজাতির সম্পদ। জ্ঞান অন্বেষণের জন্য ভাষার ব্যুৎপত্তি অপরিহার্য। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের আলেমদের বেশির ভাগই এখন ইসলামের এই তিনটি ভাষায় কথা বলতে পারেন না। যেমন পারেন না এগুলো লিখতে, বুঝতে অথবা এগুলো থেকে অনুবাদ করতে।

আমি মাদরাসার পাঠ্য বইয়ের বিষয়ে আলোচনা করছিলাম। প্রথম আলোর রিপোর্টে সাধারণ শিক্ষার মূল পাঠ্যবইগুলোকে মাদরাসা শিক্ষার বৈশিষ্ট্য উপযোগী করতে গিয়ে বইগুলোর আঙ্গিক ও মৌলিক কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং অন্যান্য প্রসঙ্গের সাথে বলা হয়েছে যে, বোর্ডের পাঠ্যবই থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাথে যুক্ত জর্জ হ্যারিসনের ঐতিহাসিক ছবি বাদ দেয়া হচ্ছে। লালন শাহ্, বিপ্রদাস বড়–য়া, নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জ্ঞান দাসসহ কয়েকজনের লেখাও এর থেকে বাদ পড়ছে। পত্রিকাটির এখানেই আপত্তি। তারা পশ্চিমবঙ্গের উদাহরণ দিয়ে এও বলছেন যে, সেখানে মাদরাসাগুলোতে হিন্দুরাও পড়ে এবং বাংলাদেশেও এ ধরনের ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়।

রিপোর্টটি গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এদেশের মাদরাসাগুলোর ইসলামী বৈশিষ্ট্য থাকুক অনেকেই তা চান না এবং মাদরাসা থেকে কেউ হক্কানী আলেম হয়ে বেরিয়ে আসুকÑ এটাও তাদের কাম্য নয়। অতি সম্প্রতি অর্থাৎ ২০২৩ সালে সাধারণ শিক্ষার সাথে মাদরাসায় শিক্ষার প্রথমিক স্তরে সিলেবাসের যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তাতে মানুষকে আল্লাহর সৃষ্টি আদম (আ:) এর পরিবর্তে বানরের বংশধর হিসাবে পরিমিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে ষড়যন্ত্র আমাদের দেশে নতুন নয়। পাঠকের হয়তো মনে আছে যে, ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আবুল বারাকাতের প্রকাশিত একটি বই দেশের আলেমদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। এই বইতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে মাদরাসা শিক্ষার ব্যাপক প্রসার রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য মুখ্যত দায়ী। তার অভিমত অনুযায়ী মাদরাসা শিক্ষা সম্প্রসারণের কারণে অনেক দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাই শুধু ধ্বংস হচ্ছে না অর্থনৈতিক ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। মাদরাসাকে তিনি রাষ্ট্রব্যবস্থা ও অর্থনীতির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন।

“পলিটিকেল ইকোনমি অব মাদরাসা এডুকেশন ইন বাংলাদেশ : জেনেসিস গ্রোথ এন্ড ইমপেক্ট” শীর্ষক এই বইটি গ্রন্থনায় আরও চারজন শিক্ষক ও গবেষক জনাব বারাকাতকে সহায়তা করেছেন বলে জানা যায়। বইতে মাদরাসাসমূহকে উগ্র জঙ্গিবাদী বিভিন্ন সংগঠন সৃষ্টি ও সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য দায়ী করা হয়েছে। দেশের আলেম সমাজ এর প্রতিবাদ করেছেন এবং বইটি বেআইনি ঘোষণার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। আমার দৃষ্টিতে বারাকাতের এই বইটি দেশী-বিদেশী চক্রের মাদরাসাবিরোধী তৎপরতার একটি অংশ মাত্র। এ অনন্য তৎপরতা অক্ষুণœ রেখে শুধুমাত্র একটি বই বাজেয়াপ্ত করলে সমস্যার সমাধান হবে না। এজন্য দেশের আপামর জনসাধারণ ও আলেম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আমাদের দেশের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ থেকে এটা অত্যন্ত পরিষ্কার যে, বাংলাদেশের সামগ্রিক জীবন ধারাকে ইসলাম ও তার অনুশাসন থেকে মুক্ত করার জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বহুমুখী হামলা শুরু হয়েছে। প্রথম প্রথম এই হামলায় রাখঢাক থাকলেও এখন আর তা নেই; প্রকাশ্যে এই হামলা শুরু হয়েছে। আবার এই হামলার কৌশলও পরবর্তন হয়েছে। আগে বহিঃশক্তির মাধ্যমে এই হামলা হতো এবং তাতে ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধ এবং সংহতির ব্যাপক কোনও ক্ষতি করতে না পেরে হামলাকারী এই শত্রুরা ইসলামী উম্মাহর মধ্য থেকেই একটি গ্রুপ তৈরি করে সন্ত্রাস নৈরাজ্যের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কাজে লাগানোর কৌশল অবলম্বন করেছে। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে জেএমবিসহ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের উত্থান এবং পরবর্তীকালে দেশব্যাপী ধ্বংসাত্মক বোমাবাজিতে তাদের সম্পৃক্তি এই কৌশলেরই অংশ ছিল। দেশের বরেণ্য আলেম উলামা এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী বিশেষজ্ঞরা সন্ত্রাস ও বিনা কারণে মানুষ হত্যাকে কুরআন-সুন্নাহ তথা ইসলামের মৌলিক আকিদা বিশ্বাসের পরিপন্থী ঘোষণা করলেও তারা ইসলামকে জঙ্গি প্রমাণের অপপ্রচার থেকে বিরত হয়নি। তবে এ ব্যাপারে তারা সাফল্য সম্পর্কে পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত হতেও পারছে না। তাই তারা দ্বিতীয় আরেকটি কৌশল গ্রহণ করেছে এবং তা হচ্ছে মাদরাসা শিক্ষার ওপর পর্যায়ক্রমিক আঘাত এবং যুগ চাহিদার নামে মাদরাসা সিলেবাসকে এমনভাবে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন যাতে মাদরাসা থাকলেও এদেশের আলেম তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। বলাবাহুল্য, আলেমরাই প্রবল প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে এ দেশে ইসলামকে জিন্দা রেখেছেন। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান, খুতবা, ওয়াজ মাহফিল, সিরাত মাহফিল, কুরআন-হাদিসের তাফসীরসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক দিকনিদের্শনা ও শিক্ষা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইসলামের বাণী ও শিক্ষাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছিয়ে দিয়েছেন এবং দিচ্ছেন। মাদরাসা শিক্ষাকে পঙ্গু করে আলেম তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে পারলে এ দেশে ইসলামের ধ্বংস প্রক্রিয়া সহজতর হবে; বাঁশ না থাকলে বাঁশিও থাকবে না। এটাই তাদের বিশ্বাস। এই বিশ্বাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তারা তৎপর থাকলেও নিভৃতে ও উন্নয়নের খোলসে এর আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের আমলে। সেনা সমর্থিত বিগত কেয়ারটেকার সরকারের আমলে অবশ্য ইহুদী মুশরিকদের মদদে এর পটভূমি রচিত হয়েছিল।

https://dailysangram.com/post/521132