৩ এপ্রিল ২০২৩, সোমবার, ১:২৪

খরচ বেশি, কোটা পূরণ হচ্ছে না

চলতি বছর অস্বাভাবিক মূল্যে হজ প্যাকেজ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হলেও খরচ কমানোর ঘোষণা সরকারের পক্ষ থেকে আসেনি। এ অবস্থায় ৭ দফা সময় বাড়িয়েও হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। এরই মধ্যে আগামী বছর হজের খরচ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এদিকে হজের বিমান ভাড়া কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়েছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)।

রোববার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং সৌদি আরবের হারাম শরিফের নিকটবর্তী বিভিন্ন হোটেল ভেঙে ফেলায় এ বছর হোটেল ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বেশি খরচে হোটেল ভাড়া করতে হচ্ছে। এই বিবেচনায় চলতি বছরের হজ প্যাকেজকে বেশি না বলে কম বলা যায়। ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, আগামী বছরগুলোতে হজ প্যাকেজের মূল্য আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।

কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ভেঙে ফেলা বাড়ি বা হোটেলগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হতে ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগবে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হজযাত্রীদের এ বছরই হজ প্যাকেজে নিবন্ধিত হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালনের অনুমতি পেয়েছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করার কথা। কিন্তু হজের খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে প্রাক-নিবন্ধন করেও শেষ পর্যন্ত হজে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে কোটা বাকি থাকায় ৭ম দফা সময় বাড়িয়ে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত হজ নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার রাত ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হজ কোটা পূরণ হতে আরও প্রায় ৯ হাজার জনের নিবন্ধন প্রয়োজন। এবার হজে গতবারের চেয়ে দেড় লাখ টাকারও বেশি খরচ পড়ছে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন : এদিকে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে স্বতন্ত্র টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের মাধ্যমে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। গতকাল দেওয়া চিঠিতে সংগঠনটি বলেছে, যেসব হজযাত্রী ২০২৩ সালে হজ করবেন তাঁদের অধিকাংশই ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রাক-নিবন্ধিত হয়ে তখনকার করা আর্থিক বাজেটে হজে যাওয়ার অপেক্ষা করছেন। কিন্তু হজযাত্রীদের অতিরিক্ত বিমান ভাড়াসহ হজের খরচ বাড়ায় এরই মধ্যে হজযাত্রীসহ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ জানিয়েছে হাব।

একই দিন বিকেলে রিলিজিয়াস রিপোর্টার্স ফোরাম (আরআরএফ) আয়োজিত ‘ঘোষিত হজ প্যাকেজ-২০২৩ ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সেমিনারেও হজের প্যাকেজের অস্বাভাবিক চিত্রের কথা উঠে এসেছে। হজের খরচ বৃদ্ধির হার বেশি হয়েছে স্বীকার করেই অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, ডলার ও রিয়ালের দাম বৃদ্ধি, একই সঙ্গে সৌদি আরবের হজসেবা সংক্রান্ত দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে হজ প্যাকেজের দাম বাড়াতে হয়েছে। তিনি বলেন, আগামী বছর বিমান ভাড়া যাতে আরও কম রাখা যায় সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবেন।

হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসেন তসলিম বলেন, হজের খরচ বৃদ্ধির পেছনে অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে বিমান ভাড়া অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া। তিনি বলেন, করোনার কারণে গত কয়েক বছরে যাঁরা হজে যেতে পারেননি তাঁরা এবার যাচ্ছেন। কিন্তু খরচ যেভাবে বাড়ানো হয়েছে তাতে আগামী বছর এবারের অর্ধেক হজযাত্রী পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

আরআরএফের সভাপতি ও দৈনিক আজকের পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি উবায়দুল্লাহ বাদলের সভাপতিত্বে সেমিনারটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও নিউ নেশনেরর সিনিয়র রিপোর্টার কামরুজ্জামান বাবলু ।

ওমরাহ যাত্রীদের নগদ অর্থ বেশি না নেওয়ার পরামর্শ : পবিত্র ওমরাহ পালনে যাওয়া মুসল্লিদের নগদ অর্থ বেশি না নেওয়ার ও দামি গহনা বহন না করতে পরামর্শ দিয়েছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের টুইটারে এক পোস্টে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানায় সৌদি গেজেট। ওমরাহ যাত্রীরা প্রত্যেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার সৌদি রিয়াল বা ১৬ হাজার ডলার নিতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে সেখানে।

https://samakal.com/bangladesh/article/2304165649