২৬ মার্চ ২০২৩, রবিবার, ২:১১

মশায় অতিষ্ঠ জনজীবন

চট্টগ্রামে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। রাতে-দিনে সমানে মশা। বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে মসজিদ, অফিস-আদালত, হাসপাতাল, পার্ক, খোলা মাঠ কোথাও নিস্তার মিলছে না। মশার কামড়ের যন্ত্রণায় পবিত্র রমজান মাসে ইবাদত-বন্দেগি এবং স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে কষ্ট হচ্ছে মানুষের। মশক নিধনের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। তারা সেই দায়িত্ব পালন করছে না-এমন অভিযোগ নগরবাসীর।

উল্টো মশার প্রজননের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএকে দায়ী করা হচ্ছে। মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর অভিযোগ নগরীতে চলমান পানিবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের জন্য প্রধান প্রধান খালসমূহে বাঁধ দেওয়ায় সেখানে জমে থাকা পানিতে মশার জন্ম হচ্ছে। এসব বদ্ধ খালে ওষুধ ছিটিয়েও কোন সুফল মিলছে না। মেয়র সিডিএকে দোষ দিলেও মশার কামড় থেকে নগরবাসী রক্ষা পাচ্ছে না। এজন্য তারা মেয়রকে দায়ী করছেন।

নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, দফায় দফায় জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এসবের ব্যয় সামাল দিতে সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। তার উপর বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে মশা মারার ওষুধ ও উপকরণ কিনতে। এমনিতেই মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ, সেখানে সিটি কর্পোরেশনের গাফিলতির কারণে আলাদা খরচ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুদ্ধ নগরবাসী।

মহানগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় চলছে মশার উৎপাত। নগরীর খাল-নালা-নর্দমা ভরাট হয়ে গেছে। সিটি কর্পোরেশন এসব খাল-নালা পরিষ্কারে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। পানিবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের কাজ করছে সিডিএ। খালের দুইপাড়ে দেয়াল নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর জন্য দেয়া হয়েছে বাঁধ। ফলে খাল-নালায় স্বাভাবিক স্রোত না থাকায় পানি জমে আছে। সেখানে জমে থাকা পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা।

এবারের ডেঙ্গু মওসুমে রেকর্ড সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর পরও টনক নড়েনি সিটি কর্পোরেশনের। মশক নিধনে নেয়া হয়নি কোন কার্যকর উদ্যোগ। কয়েকটি এলাকায় ঘটা করে মেয়রের উপস্থিতিতে মশার ওষুধ ছিটানোর মধ্যেই সীমিত থাকে কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম। ফলে নগরীতে মশার রাজত্ব কায়েম হয়েছে। নগরীর অভিজাত আবাসিক এলাকা থেকে শুরু করে গরীবের বস্তি কোথাও নেই স্বস্তি। দিনের বেলায়ও মশার কামড় খেতে হচ্ছে। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালতে দিনের বেলায়ও জ্বালাতে হচ্ছে কয়েল।

সন্ধ্যার আগেই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা হামলে পড়ে বাসা-বাড়িতে। ধুপ জ্বালিয়ে ধোঁয়া কিংবা কয়েল জ্বালিয়েও নিস্তার মিলছে না। মশক নিধনের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। মসজিদেও মশার উপদ্রব। দফায় দফায় স্প্রে করেও মশা তাড়ানো যাচ্ছে না। এতে ত্যক্ত-বিরক্ত মুসল্লিরা। বাসা-বাড়ির মতো হোটেল, রেস্তোরাঁ, হাসপাতাল, পার্ক, কনভেনশান হল, কমিউনিটি সেন্টার সর্বত্র মশার দাপট। মশার উপদ্রবে সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজকরা রীতিমত বিব্রত। খোলা মাঠেও বসার জো নেই। সেখানেও হামলে পড়ছে দলে দলে মশা।

জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের কাছে এখন মশা মারার পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। উড়ন্ত মশা মারার ওষুধ (অ্যাডাল্টিসাইড) লার্ভা নিধনের ওষুধ (লার্ভিসাইড) যা আছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পর্যাপ্ত মজুদ না থাকায় নগরীর ওয়ার্ড পর্যায়ে ওষুধ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তাতে মশার প্রজনন বেড়েই চলেছে। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মাসে ১০ হাজার লিটার অ্যাডাল্টিসাইড ওষুধের চাহিদা রয়েছে। আর লার্ভিসাইড লাগে পুরো নগরীতে মাসে ৭০ থেকে ৮০ লিটার। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনে পর্যাপ্ত ওষুধ মজুদ নেই।
মশার ওষুধ কেনা নিয়েও রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। এর ফলে ওষুধ ক্রয় প্রক্রিয়া জটিলতার কারণে মজুদে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি টিম কর্পোরেশনের মশার ওষুধ কেনাকাটায় দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে। কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, ছাত্রলীগের এক নেতাকে সুবিধা পাইয়ে দিতে কোনরকম টেন্ডার ছাড়াই বিশেষ একটি কোম্পানির কাছ থেকে ওষুধ কিনে সিটি কর্পোরেশন। ছাত্রলীগ নেতার কাছ থেকে এভাবে ওষুধ কেনায় অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে দুদক।

সিটি কর্পোরেশন গত বছরের জানুয়ারি ও সেপ্টেম্বর দুই দফায় ছাত্রলীগ নেতা অরভিন সাকিবের প্রতিষ্ঠান মেসার্স বেঙ্গল মার্ক ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে ছয় হাজার ৩৫০ লিটার মশা মারার ওষুধ কেনে। এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে কেনা হয়েছিল ছয় হাজার ৪০০ লিটার ওষুধ। এসব ওষুধের জন্য চসিকের ব্যয় হয় ৭৪ লাখ ৬১ হাজার টাকা। দুদকের ফাইল টানাটানির পর নিয়ম মেনেই ওষুধ কিনতে উদ্যোগী হয়েছে সিটি কর্পোরেশন। আর তাতে দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। এ কারণে মশার ওষুধের সঙ্কট বলে জানান কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা।

https://dailyinqilab.com/national/article/564653