২৬ মার্চ ২০২৩, রবিবার, ২:০৯

ঢাকার বাসাবাড়িতে রান্না বন্ধ

রাজধানীর মোহাম্মদ পুরের একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র সিয়াম বাবু। বাবা-মায়ের দেখাদেখি কয়েক বছর থেকে রমজানে রোজা রাখছে সে। সারাদিন সিয়াম সাধনা শেষে মায়ের হাতের তৈরি বাহারি ইফতারের অপেক্ষা করতে খুব ভালো লাগে এই কিশোরের। রমজান মাসের আগমনের অপেক্ষায় থাকে সারা বছর। কিন্তু বাসায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ এবার রোজাতেই কোনো ইফতার তৈরি হয়নি তার বাসায়। বাধ্য হয়ে বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে রাস্তায় পাশের ফুটপাতের দোকান থেকে অস্বাস্থ্যকর ইফতার কিনতে বাধ্য হয়েছে সিয়াম বাবুর। সিয়াম বাবুর মতো রাজধানীর হাজার হাজার কিশোর-কিশোরীকে রোজা রেখে মায়ের হাতের ইফতারের বদলে ফুটপাত থেকে ইফতার কিনে খেতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌ. মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ ইনকিলাবকে বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম ছিল। প্রথম রমজানে গ্যাসের চাহিদা বেশি থাকায় বিভিন্ন স্থানে সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি হয়েছে। গ্যাস সংকটের বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি। রমজান মাসে যেন গ্যাস সংকট না হয়, সে বিষয়ে দ্রুতই পদক্ষেপ নেয়া হবে।

রমজানের প্রথম দিনই রাজধানীর অনেক এলাকায় চুলায় গ্যাস নেই। ফলে ইফতার তৈরিসহ রান্নার কাজে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা। গতবছরে এই সময়েও একই চিত্রছিল। প্রতিবছর রমজানের গ্যাস সঙ্কটের কারণে রাজধানীর অনেক এলাকায় জ্বলেনি চুলা। ফলে বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে ইফতার সামগ্রী কিনে খেতে হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারদের। গ্যাস না থাকার বিষয়ে কোনো অগ্রিম নোটিশও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।

রমজানের প্রথম দিনেই গ্যাস বন্ধ করে লাইনের কাজ করার সমালোচনাও করেছেন অনেকে। ভুক্তোভোগীরা বলছেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। অথচ রমজান মাসেও গ্যাসের দেখা নেই। মাঝে মাঝে গ্যাস আসে সেটাও কম চাপের কারণে রান্না করা সম্ভব হয় না। সরকার রেশনিং করে এলাকাভিক্তিক ঘোষণা দিয়ে কয়েক ঘণ্টা করে গ্যাস সরবরাহ করলে রমজানে মানুষ ইফতার সাহরি বাসায় তৈরি করে খেতে পারতেন।

আন্তর্জাতিক বাজারে এলপি গ্যাসের কাঁচামাল প্রোপেন ও বিউটেনের দাম প্রতি মাসে কমছে। গত মাসেও পণ্য দুটির টনপ্রতি দাম কমেছে গড়ে ৬০ ডলারের মতো। অপারেটররা জানিয়েছেন, বিশ্ববাজারে এলপি গ্যাসের কাঁচামালের দাম পড়তির দিকে, পণ্যও পর্যাপ্ত। শুধু এলসি জটিলতার কারণে বাংলাদেশি আমদানিকারকরা এটি আমদানি করতে পারছেন না। দেশের বাজারে প্রতি মাসে এলপি গ্যাসের দাম বেঁধে দিচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। চলতি মাসের জন্য ১২ কেজি এলপি গ্যাসের দাম ১ হাজার ২৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত ডিসেম্বরে ছিল ১ হাজার ২৯৭ টাকা।

রমজানের প্রথম দিনই গ্যাস নেই। ফলে ইফতার তৈরিসহ রান্নার কাজে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা। রাজধানীর জিগাতলা, শ্যামলী, কল্যাণপুর, আগারগাঁও, শ্যাওড়াপাড়া, মোহাম্মদপুর, কাফরুল, আদাবর, বনশ্রী, রামপুরা, বসুন্ধরা আবাসিক, আজিমপুর, লালবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, গ্রিন রোড, মতিঝিল, সেগুনবাগিচা, নারিন্দা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শনিরআখড়া, ওয়ারিসহ পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকা এবং মিরপুর ১, ২, ১০ নম্বর এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকাল থেকেই তারা গ্যাস সংকটে পড়েছেন। মোহাম্মদপুর কাদেরাবাদ হাউজিংয়ের বাসিন্দা সোহেলী বেগম বলেন, আজ বিকালে অফিস থেকে বাসায় ফিরেই দেখি গ্যাস নেই। জানতে পারি সকাল থেকেই গ্যাস ছিল না। কোনো উপায় না পেয়ে বাইরে থেকে খাবার কিনে আনতে হয়েছে। এখন কলেরার প্রকোপ বেড়েছে, এ অবস্থায় বাইরে থেকে খাবার কিনে খাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

বনশ্রীর বাসিন্দা মরিয়ম বেগম বলেন, গতকাল সন্ধ্যা থেকেই গ্যাস ছিল না। সেহরির আগে কিছু সময়ের জন্য গ্যাস আসে। গ্যাসের চাপ কম থাকলেও রান্নার কাজ শেষ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু আজকে সকাল থেকেই গ্যাস নেই। আমরা সবসময় বাসাতেই ইফতার তৈরি করি। আজকেও সব প্রস্তুত করেছিলাম। কিন্তু পরে বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে ইফতার কিনে আনতে হলো।

রামপুরা এলাকার বাসিন্দা রাফিয়া জাহান বলেন, অন্য সময় গ্যাস না থাকলে আগে থেকে জানিয়ে দেয়া হয়। এবার সেটা করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, আমাদের ভবনের কেউই গ্যাস না থাকার বিষয়টি জানতেন না। ঢাকায় আমাদের অন্যান্য স্বজনদের বাড়িতেও গ্যাস নেই। সবাই ভোগান্তিতে পড়েছেন। রমজানের শুরুতেই গ্যাস বন্ধ করে লাইনের কাজ করা হচ্ছে। এটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য না। আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা রোকেয়া আক্তার বলেন, সকাল থেকেই গ্যাস ছিল না। তাই রান্নাবান্না করতে পারিনি। পরে দোকান থেকে ইফতারসামগ্রী কিনে আনতে হলো। নিউমার্কেট এলাকার বাসিন্দা শারমিন বেগম বলেন, মিনিমাম রান্না করার মতো গ্যাসও পাওয়া যায়নি। তাই বাইরে থেকে ইফতারসামগ্রী কিনে আনতে হয়েছে।

ডেমরা এলাকার বাসিন্দা জাহানারা বেগম বলেন, গ্যাস সংকটে প্রথম রমজানেই ইফতার বানাতে পারলাম না। সামনেও যদি এমন গ্যাস সংকট থাকে তা হলে তো বাইরে থেকে ইফতারসামগ্রী কেনা ছাড়া উপায় থাকবে না। কারণ সবার বাসায় তো এলপিজি গ্যাস থাকে না।

https://dailyinqilab.com/national/article/564657