২৫ মার্চ ২০২৩, শনিবার, ১০:৫৮

আচরণবিধিতে আটকা কাটছে না ধোঁয়াশা

সেন্ট্রাল সম্পদবিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম প্রণয়ন কমিটি ৬ মাসে একটি সভা করতে পারেনি

আচরণবিধিতে আটকে আছে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব। আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন না হওয়ায় কোন পদ্ধতিতে হিসাব নেওয়া হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের আগে আচরণ বিধিমালা তৈরি করা সম্ভব নয়। ফলে কখন আচরণ বিধিমালা তৈরি হবে, কবে কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়া হবে, তা স্পষ্ট নয়। সরকারের বর্তমান মেয়াদের বাকি সময়ে সম্পদের হিসাব নেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে এখন আর কেউ কোনো কথা বলছেন না।

তবে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণকর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ অনুসারে তাদের সম্পদের হিসাব নিতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু নতুন বিধিমালা তৈরির অজুহাতে গত ১৪ বছর সম্পদের হিসাব দিচ্ছেন না তারা।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বুধবার যুগান্তরকে বলেন, সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ সংশোধন হচ্ছে। ১২ ডিসেম্বর সংশোধিত আইনটি ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১৭ জানুয়ারি সংশোধিত সরকারি চাকরি আইন ২০২৩ বিল আকারে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে আইনটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি যাচাই-বাছাই করছে। সংশোধিত আইন অনুমোদনের আগে সরকারি কর্মচারী আরচণ বিধিমালা প্রণয়ন সম্ভব নয়। আর আচরণ বিধিমালা প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না কোন প্রক্রিয়ায় কর্মচারীদের কাছ থেকে সম্পদের হিসাব নেওয়া হবে।

অপরদিকে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালার আওতায় নেওয়া কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম তৈরির জন্য ১৭ অক্টোবর উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিগত ৬ মাসে কমিটি একটি সভাও করতে পারেনি।

তারচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, কমিটির সভাপতি অতিরিক্ত সচিব লুৎফুন নাহার বেগম দীর্ঘদিন অসুস্থতার কারণে অফিস করতে পারছেন না। ফলে বিষয়টি কমিটি গঠনের মধ্যেই সীমিত রয়েছে। সেন্ট্রাল সম্পদবিবরণী সিস্টেম তৈরি করা না করার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

সেন্ট্রাল সম্পদবিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম তৈরিসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব আরও বলেন, নানা কারণে বিষয়টি নিয়ে মিটিং করা সম্ভব হয়নি। আগামী মাসে এ সংক্রান্ত একটি সভা করার কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। তখন বলা যাবে ওই সিস্টেমে কী থাকবে বা কী থাকবে না।

সরকারি চাকরি আইনের গেজেট ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর প্রকাশ করে সরকার। ওই বছর সরকারি চাকরি আইনের আলোকে সরকারি চাকরি আচরণ বিধিমালার খসড়া প্রণয়ন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চার বছর ধরে বিধিমালা ঘষামাজার কাজ চলছেই।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মো. ফিরোজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, আইন সংশোধনের সঙ্গে আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের কোনো সম্পর্ক নেই। আইন প্রণয়ন হয়েছে বলেই তা সংশোধন হচ্ছে। সুতরাং আচরণ বিধিমালা করতে সমস্যা কোথায়। দরকার হলে আবার আচরণ বিধিমালা সংশোধন হবে। আইন সংশোধনের অজুহাতে আচরণ বিধিমালা তৈরির কাজ থেমে থাকবে, তা সঠিক নয়। এতে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীলদের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। এছাড়া যতক্ষণ আচরণ বিধিমালা তৈরি না হবে, ততক্ষণ ১৯৭৯ সাল প্রণীত আচরণ বিধিমালার বিধান বলে কর্মচারীদের কাছে সম্পদের হিসাব নিতে বাধা কোথায়।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, খসড়া সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমলায় প্রথম শ্রেণির ক্যাডার কর্মচারীদের জন্য প্রতিবছর বার্ষিক সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধি উল্লেখ করে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে হিসাব জমা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে বার্ষিক আয়কর রিটার্নের নির্ধারিত পাতা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ চাহিবামাত্র জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সরবরাহ করবে।

অপরদিকে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধি উল্লেখ করে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়ার বিধানযুক্ত করা হয়েছে খসড়া বিধিমালায়। সেই ক্ষেত্রে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরাও আয়কর রিটার্নের নির্ধারিত পাতা জমা দেবেন।

গণকর্মচারী আচরণ বিধিমালা-১৯৭৯ অনুসারে সর্বস্তরের কর্মচারী প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধি উল্লেখ করে হিসাব জমা দেওয়া বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সর্বশেষ ২০০৮ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সরকারি কর্মচারীরা সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন। এরপর ২০১৩ ও ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা নেওয়া হয়নি।

ইতোমধ্যে সর্বশেষ ২৪ জুন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা-৪ থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে কর্মচারীদের বার্ষিক আয়ের হিসাব নিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমিত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/658227