২৪ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ৫:১৩

রমযানের শুরুতে সিলেটের বাজার অস্থির

কবির আহমদ সিলেট থেকে: আজ শুক্রবার থেকে পবিত্র মাহে রমযানের রোজা শুরু হয়েছে। প্রথম রমযানের আগেই সিলেটের সকল ধরনের দ্রব্যমূল্যের দাম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্থির হয়ে উঠেছে সিলেটের বাজার। গরু ও খাসির গোস্ত, মাছ, তরকারি, ফলমূলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়েছে। পোল্ট্রিতে কয়েক দফা বেড়েছে দাম। এ ছাড়া গরুর গোস্ত ও মাছের দাম বেড়েছে। তবে, স্থিতিশীল রয়েছে চালের বাজার। অন্যদিকে, আমদানি নির্ভর পণ্যে ডলার সংকটের কারণে দাম বেশি পড়ছে বলে দাবি করেছেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের নেতারা। বিশেষ করে গোস্তের বাজারে দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্রেতারা। সিলেটের বাজারের পোল্ট্রি পাওয়া যাচ্ছে না। সিলেটের পাইকারি আড়ত লালবাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার ঘুরে দেখা গেছে- বাজারের অনেক দোকানে পোল্ট্রি মুরগি নেই।

শাকিলা পোল্ট্রি ফার্মসহ কয়েকটি দোকানে রয়েছে পোল্ট্রি বা ব্রয়লার মুরগি। এসব দোকানে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে পোল্ট্রি মুরগি। ক্রেতা হাজী ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন, মুরগির বাজার গত এক মাস ধরেই অস্থির। একটু একটু করে দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এটা সিন্ডিকেট করে বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি। এজন্য রমযানের আগে সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর কথা স্বীকার করেছেন লালবাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী। তবে তারা সিন্ডিকেট করছেন না বলে দাবি করেন। পোল্ট্রি মুরগি বাজারে সরবরবাহ করে যারা তারাই সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানান। তারা কেজি প্রতি ২-৩ টাকা লাভে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন- রমযানের আগে আরও দাম বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে সরকার থেকে মনিটরিং প্রয়োজন। এদিকে, সিলেটে শুধু পোল্ট্রি নয়, গরুর গোস্তেরও দাম বেড়েছে। নগরের কাজিটুলা, শিবগঞ্জসহ মাংস বিক্রির কসাইয়ের দোকানে খবর নিয়ে জানা গেছে, ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি প্রতি গরুর গোস্ত বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া হাড় ছাড়া গরুর মাংস কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা দরে। নগরের জেলরোড এলাকার বাসিন্দা সম্রাট হোসেন জানিয়েছেন, গরুর গোস্তের দাম কেজি প্রতি ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

কেউ বাজার মনিটরিং করছেন না। এ কারণে যে যার মতো করে বাজারে গোস্ত বেশি দামে বিক্রি করছে। তিনি জানান, গোস্তের দাম বেশি হওয়ার কারণে ডিমের দামও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পোল্ট্রি ডিম পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে ৪১ টাকা ও ৪২ টাকা দরে। গতকাল দুপুরে লালবাজার, কাজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে- আমদানি করা রুই, কাতলা, গ্রাসকাপ মাছের দাম আগের চেয়ে কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। বার্মা ও ভারত থেকে এলসি’র মাধ্যমে মাছ নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে আমদানি করা মাছের দাম বেড়েছে। তবে, স্থিতিশীল রয়েছে ইলিশ, দেশি রুইয়ের দাম। নগরের কাজির বাজার মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, দেশি মাছের দাম কম রয়েছে। এখনো কিছু কিছু মাছ খাল বিল হাওর থেকে আসছে। এ কারণে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। তবে- আমদানি করা মাছ ক্রয় করতে হচ্ছে বেশি দামে। এ কারণে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বেড়েছে বলে জানান তিনি। ধীরে ধীরে দাম বাড়ছে সবজির বাজারে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৪-৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে সবজির দাম। দেশি শিম, বেগুন, মুলা, ফুলকপিসহ কয়েক জাতের সবজির দাম বেড়েছে।

এছাড়া গত রমযানের তুলনায় এই রমযানে মুদির দোকানে দ্রব্যমূল্যের দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে। গত বছর খুচরা বাজারে চিনির দাম প্রতি কেজি ছিল ৭০-৭৫ টাকা এইবছর ১১০-১১৫ টাকা, মসুরী ডাল গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা এবছর ৯৫-১০৫ টাকা, ছুলা গতবছর ছিল ৬০-৬৫ টাকা এবছর ৯০-৯৫ টাকা। এছাড়া গুড়া দুধ, তরল দুধ, খেজুর ও মসলার দাম ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব নিয়ে যারা দিনে আনে দিনে খায় তারা বড়ই বিপাকে পড়েছেন। ক্রেতা সাধারণ বলেছেন সিন্ডিকেটের হাতে গোটা দেশের মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে। অতিসত্বর জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে বাজার তথারকি করা দরকার বলে মনে করেন বাজারে আসা হাজারো ক্রেতা।

https://dailysangram.com/post/520199