২৩ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:৫৪

রমজানে মানুষের ত্রাতা সিএসআর

রমজানের আগেই নিত্যপণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী। সেহরি ও ইফতারের প্রয়োজনীয় পণ্য নি¤œবিত্ত-মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগে রমজান মাস সামনে রেখেও বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরছেই না। সাধারণ ব্যবসায়ীরা মনে করেন, কিছু কর্পোরেট হাউজ, একশ্রেণির অসাধু চক্র বাজার সিন্ডিকেট এর জন্য দায়ী। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বারবারই দাবি করছে, রমজানে সব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। দেশে খাদ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হবে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। সাধারণ মানুষ নিদারুণ কষ্টে রয়েছে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি দেশের ব্যবসায়ী বড় বড় কর্পোরেট হাউজগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। তারা রমজান উপলক্ষে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে পণ্য বেচাকেনায় লাভালাভ কিছু কম করলে রোজাদার মানুষের উপকার হবে।

সূত্র মতে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ বৈশ্বিক কারণে বিশ্বজুড়ে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও। সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা ভেবে সুপারশপগুলো ইতোমধ্যে ২৫০ গ্রাম থেকে যে কোনো পরিমাণ গরুর গোশত বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও মানুষের কষ্টে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, অর্থনৈতিক মন্দা এখন বিশ্বজুড়ে। তাই সারা বিশ্বেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও। ফলে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। মানুষের কষ্ট বেড়েছে, সেই কষ্ট যাতে না থাকে, সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির উন্নতি হলে দেশেও তার প্রভাব পড়বে। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন। ডলারের দাম বাড়ায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমার সুফল বাংলাদেশ পাচ্ছে না।

সূত্র মতে, দেশে গরু উৎপাদন বাড়ছে। গড়ে উঠছে নতুন নতুন খামার। গরু আমদানিও হচ্ছে। কিন্তু গরুর গোশতের দাম না কমে উল্টো প্রতি বছর কেজিতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা করে বাড়ছে। ফলে চড়া বাজারের কারণে অনেকেই গরুর গোশত কেনা কমিয়েছেন। কেউ কেউ বড় উৎসব ছাড়া গোশতের দোকানেই যাচ্ছেন না। রোজার আগে আরেক দফা দাম বাড়ায় সেহরিতে অনেকেই পাতে তুলবেন না গোশত। শুধু গরুর গোশতই নয়; অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম চড়া। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগিরও দাম। সরকারিভাবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সাশ্রয়ী মূল্যে কিছু পণ্য বিক্রি করলেও চাহিদার তুলনায় যা খুবই কম মানুষ পাচ্ছে। আবার সবার পক্ষে কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবি পণ্য নেয়ার মতো ধৈর্য বা ইচ্ছেও নেই।

দেশের এ ক্রান্তিকালে বিশেষজ্ঞরা দেশের বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, সামনে রমজান তাই এই সময়ে বহুজাতিক কোম্পানি, ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানির করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি বা সিএসআর প্রদান করে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। যদিও সম্প্রতি দেশের দু-একটি প্রতিষ্ঠান রমজানকে সামনে রেখে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। গত রোববার রমজান উপলক্ষে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু করেছে দেশবন্ধু গ্রুপ।

প্রতিদিন রাজধানীর পাঁচটি স্থানে ট্রাকে করে চিনি, চাল এবং কোমল পানীয় বিক্রি করবে প্রতিষ্ঠানটি বলে জানিয়েছেন দেশবন্ধু গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা। দেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, সিএসআর’র মাধ্যমে কোম্পানিগুলো মূলত সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার প্রকাশ ঘটায়। এছাড়া কোনো কোম্পানি যদি সিএসআর করে, তাহলে সে কোম্পানির কর্মীদের মধ্যেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে কাজের প্রতি তাদের উৎসাহ বাড়ে, কারণ তারা অনুভব করে যে তাদের প্রতিষ্ঠানটি শুধু ব্যবসায়িক কাজে নয়, বিভিন্ন সামাজিক কাজেও সম্পৃক্ত। আর এখন বৈশ্বিক কারণে সাধারণ মানুষ ও ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা অসহায়। পণ্যমূল্য বা মূল্যস্ফীতি প্রতিদিনই বাড়ছে। দেশের এই ক্রান্তিকালে সমাজের বিত্তবানদের বিশেষ করে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। অনেকের মতে, করোনাভাইরাস সঙ্কট মোকাবিলায় ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয়ের বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছিল, ২০২০ সালের নিট মুনাফার এক শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ সিএসআর খাতে ব্যয় করতে হবে। অর্থের ৫০ শতাংশ সিটি কর্পোরেশন ও ৫০ শতাংশ জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যয় করতে হবে। বর্তমান সঙ্কটে সে ধরনের একটি নির্দেশনা আসা প্রয়োজন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আদুল মজিদ ইনকিলাবকে বলেন, দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে। আগে এ ধরনের সঙ্কটে স্বেচ্ছাসেবী-সামাজিক সংগঠনগুলো এবং দেশের করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিত। এখন তা অনেকটা কমে গেছে। যদিও এখন করপোরেট বা ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনভাবে সিএসআর ব্যয়ের সক্ষমতা নেই। অন্যভাবে সিএসআর টাকা চলে যাচ্ছে একটি গোষ্ঠীর হাতে। তাই সিএসআর ব্যয়ে সমবণ্টন হয় না। এছাড়া বর্তমানে তেলা মাথায় তেল দিয়ে সিএসআর ব্যয়ের একটি ছবি দিয়ে প্রচারধর্মিতা চলে এসেছে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে। সমাজের জন্য পৃথক দায়বদ্ধতা নেই। ড. আব্দুল মজিদ বলেন, আমাদের সংস্কৃতি হয়ে গেছে বড় বড় ইফতার পার্টি করার। বর্তমান সঙ্কটে এ ধরনের ইফতার পার্টি পরিহার করে সেই অর্থ সর্বসাধারণের জন্য ব্যয় করার চিন্তা করতে হবে। তাহলেও হয়তো সঙ্কটের কিছুটা উপশম হবে। একই সঙ্গে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই সঙ্কটে এগিয়ে এলে এবং পরিকল্পিতভাবে বণ্টন করতে পারলে সঙ্কট কেটে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ড. মোহাম্মদ আদুল মজিদ বলেন, সঙ্কট কেন হচ্ছে? সিন্ডিকেট করে সরবরাহের অভাব দেখিয়ে, আমদানি-রফতানিতে সমস্যা, অপচয়সহ অতি মুনাফার চিন্তা থেকে। তাই অতি মুনাফার চিন্তা বাদ দিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবসাযীদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন তিনি।
অবশ্য বর্তমান সঙ্কটে সিএসআর যারা দিবে তারাও খুব বেশি ভালো নেই বলে উল্লেখ করেন এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান। কারণ সিএসআর গাইডলাইন থাকলেও নানা চাপে একটি গোষ্ঠীর হাতে চলে যাচ্ছে এ অর্থ। যার সঠিক বণ্টন বা ব্যবহার হচ্ছে না। আবার সিএসআর ব্যয়ও দেখানো হচ্ছে। তাই সিএসআর ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন আছে বলে উল্লেখ করেন ড. মোহাম্মদ আদুল মজিদ।

সূত্র মতে, দেশের ব্যাংকগুলোও সিএসআর করছে। এতে দেখা যায়, প্রতিটি ব্যাংক বছরে ঝড়, বৃষ্টি, বন্যাসহ ছোট ছোট ইস্যুতে কম হলেও ৫ কোটি টাকা করে দেয়। আর এ দিয়ে ছবি তোলার মধ্যেই কাজ শেষ। বাকি যা হয় বছরব্যাপী ব্যাংক পরিচালকরা তাদের ইচ্ছেমতো নিজেদের প্রয়োজনে বিভিন্ন খাতে ব্যয় করেন, যা বছর শেষে সিএসআর হিসেবে দেখানো হয়। ব্যাংকগুলো কাগজে-কলমে সিএসআর দেখালেও দেশি এবং বিদেশি করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তাও করছে না। যদিও অনেক ব্যাংক ভয়ে থাকে কখন দেশে ঝড় আসে, আবার উপর থেকে ৫ কোটি বা ১০ কোটি টাকার খড়গ আসে। সিএসআর ব্যয়ের বিভিন্ন খাত ঘেটে দেখা গেছে, প্রতি বছর করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সিএসআর’র ব্যয় দেখিয়ে বড় অঙ্কের অর্থ লুটপাট করছে। এসব কোম্পানি বা গ্রুপ দেশের মানুষের থেকে ব্যবসা করে আজ বড় বড় শিল্প গ্রুপে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর সিএসআর’র নামে বড় অঙ্কের অর্থ খরচ দেখাচ্ছে। অথচ দেশের বর্তমান সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে এসব গ্রুপের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। তথ্যমতে, বাংলাদেশে কয়েকশ’ বড় শিল্প গ্রুপ আছে। এদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেÑ চট্টগ্রামভিত্তিক এ কে খান গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, টি কে গ্রুপ, আকিজ গ্রুপ, বেক্সিমকো, ইউনাইটেড গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, পিএইচপি গ্রুপ, প্রাণ, পারটেক্স গ্রুপ, নোমান গ্রুপ, বিএসআরএম, কেডিএস গ্রুপ, হা-মীম, এসিআই লিমিটেড, ট্রান্সকম, ভিয়েলাটেক্স, প্যাসিফিক জিনস, কনফিডেন্স গ্রুপ ও ওয়ালটন। পাশাপাশি রয়েছেÑ দেশের ব্যাংকিং খাত, বড় বড় আবাসন প্রতিষ্ঠান, রড-সিমেন্ট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানি।

অবশ্য এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল ইনকিলাবকে বলেন, বৈশ্বিকসহ নানাবিধ কারণে দেশের মানুষ সঙ্কটের মধ্যে আছে। এই মন্দাবস্থা এখনই কাটছে না। এটা আরো দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই শুধু করপোরেট প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানই নয়; যারা সমাজের বিত্তবান তাদেরও নিজ নিজ অবস্থান থেকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। সামনে রমজান। তাই নৈতিকতার দিক দিয়েও বিত্তবানদের মানুষের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সূত্র মতে, শুধু লাভ-লোকসান নয়, সমাজের মানুষের কল্যাণে কাজ করাও ব্যবসায়িক মডেলের অংশ। সমাজের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভ করে, বিপরীতে তারা সমাজের জন্য কাজ করবে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক ইমেজ তৈরির জন্য সিএসআর’র অর্থ ব্যয়ের প্রবণতা চোখে পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সিএসআর ব্যয় শুধু ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে করলে চলবে না। পাশাপাশি সিএসআর ব্যয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় প্রতিষ্ঠানগুলোর বোর্ডের পক্ষ থেকে। আগে ‘সেলফ রেগুলেটরি’ ছিল। যদিও ক্রমে বিষয়টা একটা নিয়মের মধ্যে আসছে। ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো সিএসআর খাতে ব্যয় বিষয়ে নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২০ সালের মহামারি করোনার পর ২০২১ সালের এপ্রিলে বিস্তারিত আকারে নীতিমালা করা হয়েছে। এছাড়া সিএসআর সংক্রান্ত আইএসওর মানদ- রয়েছে। এটির পরিপালন করতে হবে, যা শুধু পরিমাণগত নয়, গুণগতও। সিএসআর ব্যয়ের পাশাপাশি অডিটের ব্যবস্থাও করবে নিয়মিত, যেন আমানতকারীর অর্থ নিয়ে কোনো ধরনের অব্যবস্থাপনা না হয়। অনেক ব্যাংকই এখন সিএসআর করছে। কিন্তু যথাযথভাবে করছে কি না তা দেখা জরুরি। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের পারফরম্যান্স ইনডিকেটরের মধ্যে যেমন অ্যাসেট-লায়াবিলিটি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও তারল্য ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো রয়েছে, তেমনি সিএসআরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তিনি বলেন, বহুজাতিক কোম্পানির সুবিধা হচ্ছে, সিএসআর’র মাধ্যমে তারা তাদের ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়াতে পারে। একটা ভালো প্রতিষ্ঠানে একজন ভালো কর্মী শুধু টাকা-পয়সা নয়, এ ধরনের বিষয়গুলোর জন্যও কাজ করতে উৎসাহী হয়। কোম্পানির সুনামের বিষয়গুলোও তাই গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে সিএসআর বাবদ ১০০ টাকা দিলে কমপক্ষে ৯০ টাকা যেন উপকারভোগীদের কাছে যায় এটা নিশ্চিত করতে হবে। আবার ব্যবসায়িক স্বার্থের জন্য কাউকে খুশি করা হচ্ছে কি না এবং সে হিসাব সিএসআর’র মধ্যে দেখানো হচ্ছে কি না তাও খেয়াল রাখতে হবে।

ড. সালেহউদ্দিন বলেন, আমাদের অনেক বড় বড় কোম্পানি দানশীলতা বা এ ধরনের কাজে অংশগ্রহণ করে না। তারা কীভাবে আসবে, সরকার থেকে তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে না। আমার মনে হয়, সিএসআর কার্যক্রমে কর ছাড়সহ বিভিন্ন সুবিধা দেয়া উচিত। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর যে ঘাটতি রয়েছে, সিএসআরের মাধ্যমে সে ঘাটতি পূরণ হতে পারে। ৬০টি ব্যাংক যদি ১০ কোটি টাকা ব্যয় করে, তাহলে এখানেই কিন্তু ৬০০ কোটি টাকা হয়। এভাবে সিএসআর বাবদ পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করা সম্ভব। যদিও দেশের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান সিএসআর’র মাধ্যমে নিজেদের প্রচার, প্রসারে মনোযোগী। আমাদের দেশে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী অনেকটাই দুর্বল, স্বাস্থ্য ব্যয় অনেক বেশি, সেখানে সিএসআর’র মাধ্যমে অনেক ভালো কাজ করা সম্ভব।

বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা করবে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক বিষয়গুলোও দেখা জরুরি। সিএসআর’র মূল বিষয়টা হচ্ছে ‘রেসপন্সিবল ব্যবসা, এথিক্যাল ব্যবসা ও পরিবেশবান্ধব ব্যবসা’। সমাজ থেকে যেমন গ্রহণ করব, বিনিময়ে সমাজের মানুষের উপকারেও তার একটি অংশ ব্যয় করব। কারণ ব্যবসাটা শুধু আর্থিক বিষয় নয়, সেবা প্রদানও। তিনি বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিএসআর ব্যয়ে বিশেষভাবে নজর দেয়ায় গুরুত্বারোপ করেন।

https://dailyinqilab.com/national/article/564077