২৩ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:৫০

ফল ও ইফতার সামগ্রী কিনতে অসহায় ক্রেতা

শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। তাই অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে ফল ও ইফতার পণ্য কিনতে বাজারে ভিড় করেছেন ভোক্তারা।

কিন্তু কোথাও যেন স্বস্তির নিশ্বাস নেই। সরবরাহ ঠিক থাকলেও রোজা ঘিরে দুই মাস আগেই ছোলা, মসুর ডাল, চিনি, ভোজ্যতেল, মাছ-মাংসসহ একাধিক নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে।

ইতোমধ্যে বাজারে সব ধরনের ফল ও ইফতার পণ্য বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু আয় বাড়েনি বেশিরভাগ সাধারণ ক্রেতার। ফলে বাজারে গিয়ে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। উচ্চমূল্যের বাজারে যারা ফল কিনতে পারছেন না তাদের দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলার সংকট, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং আমদানিতে অতিরিক্ত শুল্কারোপের কারণে এমনিতেই ফলের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।

এর মধ্যে রোজা ঘিরে বাড়তি মুনাফা করার ছক তৈরি করছে ফল বিক্রেতা সিন্ডিকেট। এতে পরিবারের জন্য যারা নিয়মিত ফল কিনতেন, তারাও বাজারের তালিকা থেকে পুষ্টিকর পণ্যটি বাদ দিচ্ছেন। সঙ্গে ইফতার তৈরির সব ধরনের সামগ্রীর দামও বাড়ানো হয়েছে। যার কারণে এবার ইফতারেও ভোক্তার ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হবে।

বুধবার রাজধানীর কাওরান বাজার, শান্তিনগর বাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ও নয়াবাজার ঘুরে খুচরা বিক্রোতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা পর্যায়ে ক্রাউন আপেল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা, যা গত বছর একই সময় ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ২১০-২৩০ টাকা, যা আগে ১৬০-১৮০ টাকা ছিল। চায়না কমলা বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা, যা গত বছর একই সময় ২০০ টাকা ছিল।

এছাড়া খুচরা পর্যায়ে ৭০০-৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া আজোয়া খেজুর এখন ৮০০-৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইরানি মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকা, যা আগে ৬৫০-৭০০ টাকা ছিল। আর প্রতিকেজি সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা, যা আগে ৩০০ টাকা ছিল।

নয়াবাজারে ফল কিনতে আসা মিনহাজুল আবেদিন বলেন, বাজারে কী এমন হয়েছে যে রোজার আগে ফলের দাম এত বাড়ল? যে আপেল প্রতিকেজি ১৭০ টাকা করে কিনেছি। এখন ২৮০ টাকা দাম চাচ্ছে। ইফতারে ফল না হলে চলে না। কিন্তু মনে হচ্ছে এবার ফল খাওয়া বাদ দিতে হবে। বিক্রেতারা এক প্রকার স্বেচ্ছাচার করছেন। অথচ যারা দেখার তারাও রহস্যজনক কারণে নির্বিকার।
ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম শেখ যুগান্তরকে বলেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় খেজুরের মতো ফল বেশি দামে আমদানি করতে হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য ফলের দামও বাড়তি। ঋণপত্র (এলসি) খোলায়ও জটিলতা আছে। আমদানিতে যেটুকু খরচ বেড়েছে, ফলের দাম সেটুকু সমন্বয় করতে হচ্ছে। কিন্তু দেখা গেছে পাইকারির তুলনায় খুচরায় বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

নয়াবাজারের ফল বিক্রেতা মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, পাইকারি বাজার থেকে ফল কিনে খুচরা বাজারে আনতে চাঁদা দিতে হয়। গেটম্যান থেকে শুরু করে আনসার সদস্য সব স্থানে টাকা গুনতে হচ্ছে। তাই দাম সমন্বয় না করলে লোকসান হবে।

খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর রোজার আগে প্রতিকেজি বুটের বেসন বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকা, যা বুধবার বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা। ইসবগুলের ভুসি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা, যা আগে ৯০০ টাকা ছিল। ২০০ গ্রামের ট্যাং বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা, যা আগে ১৬০ টাকা ছিল।

প্রতিলিটার রুহ আফজা বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা, যা আগে ৩০০ টাকা ছিল। বাজারে যে ছোলা প্রতিকেজি ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেই একই মানের ছোলা গত বছর ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি চিনি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা আগে ১০০ টাকা ছিল।

প্রতিকেজি খেজুরের গুড় বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা, যা আগে ২২০ টাকা ছিল। মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা, যা আগে ৬০ টাকা ছিল। বেড়েছে সবজি মধ্যে বেগুনের দামও বেড়েছে। প্রতিকেজি বিক্রি হচ্চে ৮০-১০০ টাকা, যা গত বছর একই সময় ৭০ টাকা ছিল।
নয়াবাজারের পণ্য কিনতে আসা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, যেভাবে পণ্যের দাম বেড়েছে তাতে দোকান থেকে ইফতারের ভাজাপোড়া কিনতে পারব না। তাই বাসায় তৈরির জন্য উপকরণ কিনতে এসে দেখি এগুলোর দামও হু হু করে বেড়ে গেছে। অথচ দোকানে পণ্যের কোনো সংকট নেই। কিন্তু বিক্রেতারা বাড়তি মুনাফা করতে ইচ্ছে করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ অন্যান্য দেশে এসব পণ্যের দাম ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে। অথচ আমরা কোন দেশে আছি। যেখানে এসবের বালাই নেই। আসলে দেখার যেন কেউ নেই।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, বাজারে এক প্রকারের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। বিশ্ব পরিস্থিতির জন্য বাজারে এমনিতেই সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তি। এর মধ্যে অসাধু বিক্রেতাদের কারসাজিতে পণ্যের দাম আরও বেড়েছে। কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। তাই নিত্যপণ্যের বাজারসহ ফল ও ইফতার সামগ্রীর মূল্য সহনীয় করতে এই সেক্টরেও তদারকির আওতায় আনতে হবে।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, ‘রোজা ঘিরে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে আমরা ফলের বাজার ও ইফতার সামগ্রীর বাজারেও অভিযান পরিচালনা করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। আজ থেকে (বৃহস্পতিবার) মূল্য সহনীয় রাখতে এসব স্থানে বিশেষভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/657535