১৩ মার্চ ২০২৩, সোমবার, ১২:২৮

বকেয়া পরিশোধের চাপে বিপিসি

চলমান ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বিদেশি কম্পানিগুলোর পাওনা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এতে বিপিসির কাছে তেল সরবরাহকারী বিদেশি কম্পানিগুলোর বকেয়া জমে আছে। দ্রুত পাওনা পরিশোধে বিপিসিকে চাপে রেখেছে তেল সরবরাহকারী কম্পানিগুলো। বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় এরই মধ্যে বিদেশি দুটি প্রতিষ্ঠান বিপিসিকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে অনীহা প্রকাশ করেছে। বিপিসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, বকেয়া বিলের কারণে বিদেশি দুই কম্পানি জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটবে। সংকটে পড়বে পরিবহন খাত, জটিলতা তৈরি হবে কৃষকের সেচকাজেও।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠি দেয় বিপিসি। চিঠিতে তারা জানায়, যদি বকেয়া পরিশোধ করা না হয়, তাহলে দুটি প্রতিষ্ঠান তেল ছাড়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।

বিপিসির কর্মকর্তারা বলেছেন, বিপিসিকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে ছয়টি প্রতিষ্ঠান। সিঙ্গাপুরভিত্তিক ভিটল এশিয়া ও চীনা প্রতিষ্ঠান ইউনিপেক—এই দুটি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে বছরের প্রথমার্ধে ১.৬ মিলিয়ন টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করার একটি টেন্ডার পায়। তেল সরবরাহের পর ভিটল এশিয়া বিপিসির কাছে ১৫২.৬০ মিলিয়ন ডলার পাওনা থাকে। পরে প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের ৮ ও ১০ আগস্ট ই-মেইলে বিপিসিকে জানায়, বকেয়া পরিশোধ না করলে তারা বাংলাদেশে জ্বালানি সরবরাহ করবে না। একই সঙ্গে তারা বিলম্ব পরিশোধের সুদও দাবি করে। এরপর চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ভিটল এশিয়ার কর্মকর্তারা বিপিসির সঙ্গে বৈঠক করেন। ভিটল এশিয়াকে গত বুধবার ৩০ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হয় বলে বিপিসির এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান।

একইভাবে চীনা সিনোপেকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিপেক বিপিসির কাছে পায় ১২৯ মিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি এই প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া পাওনার বিষয়ে বিপিসিকে চিঠি দেয়। এরপর গত ৪ মার্চ ইউনিপেকের একটি ডিজেলবোঝাই জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় জাহাজটি থেকে ডিজেল খালাস করতে দেওয়া হয়নি। পরদিন ৫ মার্চ বিপিসি ইউনিপেককে ৬২.২৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে। পরে বন্দর থেকে কার্গোটি ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বিপিসি। তারা জানায়, যদি বকেয়া পরিশোধ করা না হয়, তাহলে ওই চীনা প্রতিষ্ঠান তেল ছাড়ে আবার এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।

জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডলারের কারণে পেমেন্ট দেরি হচ্ছে। ধীরে ধীরে পেমেন্ট করা হচ্ছে। মূলত নিয়মিত পেমেন্ট দিতে না পারলে সরবরাহ কম্পানিগুলো মাঝে মাঝে নানা রকম মন্তব্য করেন। তবে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে যা করার তারা সেটি করে থাকে। এবারও সরবরাহে কোনো রকম সমস্যা তারা করবে না।’
এ বি এম আজাদ বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী তেল সরবরাহের ৩০ দিনের মধ্যে পেমেন্ট দিতে হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পেমেন্ট দিতে না পারলে তারা অনেক সময় চুক্তি অনুযায়ী বিলম্বে পরিশোধের সুদও দাবি করেন।’

ভিটল এশিয়া ও ইউনিপেক ছাড়াও বিপিসির এমিরেটস ন্যাশনাল অয়েল কম্পানি, ইন্দোনেশিয়ার বিএসপি জাপিন, পেট্রো চায়না ইন্টারন্যাশনাল ও ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের কাছ থেকে ৪.৫০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি আমদানি করার কথা রয়েছে।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, দেশে বছরে ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি হয়। এর মধ্যে বছরে ৪০ লাখ টন শুধু ডিজেলই আমদানি হয়। দেশে পরিবহন খাতের ৯০ শতাংশের বেশি যানবাহন জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীল। আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতারও ৩৪ শতাংশ নির্ভর করে জ্বালানি তেলের ওপর।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগেও বিপিসি বিভিন্ন সময়ে পাওনা পরিশোধে ডলার সংকটে পড়েছে। যদি বিপিসি তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়, তাহলে সামনে বড় ধরনের সংকট বা পরিস্থিতিতে পড়বে দেশ। তাই সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করতে হবে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/03/13/1260506