১৩ মার্চ ২০২৩, সোমবার, ১২:২০

কাউন্সিলর বললেন ‘চোর’, ভ্যান সার্ভিস মালিকের প্রশ্ন ‘আমনে কি ভালো মানুষ’

‘আমি একজন জনপ্রতিনিধি, চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। তোর মতো টোকাই, একটা চোর, তুই কীভাবে আমার সম্বন্ধে মন্তব্য করস?’ একটি ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের মালিকের উদ্দেশে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা উত্তর সিটির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মফিজুর রহমান। সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যক্তির জবাব, ‘আমি টোকাই আর আমনে (আপনি) ভালো মানুষ হইয়া গেলেন?’
ঘটনাটি ঘটেছে রোববার দুপুরে ঢাকা উত্তর সিটির নগর ভবনের ১০ তলায়।

গণমাধ্যমের সামনেই গোলাম মাওলা নামের ওই ব্যক্তির সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান কাউন্সিলর মফিজুল ইসলাম। গোলাম মাওলার দাবি, তিনি ১৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি। তাঁর প্রতিষ্ঠান মুক্তিবীণা এন্টারপ্রাইজ দীর্ঘদিন ধরে বনানী এলাকায় বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করে।

এ ঘটনার আগে গোলাম মাওলা গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশন এলাকায় বর্জ্য সংগ্রহের কাজ পেতে দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হয়। তবে কাউন্সিলর মফিজুর রহমান তাঁকে তা দেননি। বিষয়টি মফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিছু সময় বাদে গোলাম মাওলাকে নগর ভবনের ১০ তলার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে খুঁজে বের করে গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন তিনি।

কাউন্সিলর মফিজুর উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘এর জন্যই তো বললাম, তোর চোখ উঠাইয়া হালামু। আরে বেটা তুই কার সম্পর্কে মন্তব্য করস?’

গণমাধ্যমের সামনে কাউন্সিলরের উদ্দেশে গোলাম মাওলা বলেন, ‘আমাকে আপনি ৩০ বছর রাজনীতিতে খাটাইসেন।’ জবাবে কাউন্সিলর বলেন, ‘এই চুপ, তুই কর্মচারী।’ কাউন্সিলরের পাশে থাকা সহযোগীরাও মাওলাকে চুপ থাকতে বলেন।

পরে গোলাম মাওলা জানান, তিনি দরপত্র জমা দিতে পারেননি। কারণ, কাউন্সিলর মফিজুর তাঁকে প্রত্যয়নপত্র দেননি। শনিবার প্রত্যয়নপত্র আনতে পাঠিয়েছিলেন। কাউন্সিলর স্বাক্ষর করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। এ সময় কাউন্সিলর মফিজুর বলেন, ‘ওকে জিজ্ঞেস করেন, ও আমার কাছে আসছে কি না?’

জবাবে গোলাম মাওলা বলেন, সুমন নামের একজনকে পাঠিয়েছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাত উঁচিয়ে কাউন্সিলর মফিজুল বলেন, ‘এমন মাইর দিমু। সে আমার অফিসের আঙিনাতেও যায় নাই।’

কাউন্সিলর আরও বলেন, ‘মামুন আর সুমন করে (নামে) দুই ছেলে আসছে, গত শুক্রবার জুমার নামাজের আগে। আমি বলছি, আজকে আমার অফিসে কেউ নাই, কর্মচারী নাই। আর এত দিন আমি তো ডাকছি তোমাদেরকে। আমি মিটিং করছি সবাইকে নিয়ে। সবাইকে ডাকছি।’ জবাবে গোলাম মাওলার ভাষ্য, সবাইকে নিয়ে সভা করলেও তাঁদের ডাকা হয়নি।
একপর্যায়ে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন গোলাম মাওলা। কাউন্সিলরের সহযোগীরা তাঁর উদ্দেশে বলেন, ‘মুরুব্বি মানুষ মারসে, এটা আবার মাইনষেরে কও কে?’

গোলাম মাওলার এই বক্তব্যে কাউন্সিলর মফিজুর আবার উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘এর জন্যই তো বললাম, তোর চোখ উঠাইয়া হালামু। আরে বেটা তুই কার সম্পর্কে মন্তব্য করস?’ পরে তিনি আবার বলেন, ‘আমি এখানে নির্বাচিত একজন প্রতিনিধি। আজকে যেসব চোর–বাটপার, এরা অনেকে কিন্তু আমার হাতের ওপর দিয়া আসছে। আমার ৫১ বছর এই ওয়ার্ডে বসবাস।’

মফিজুর আরও বলেন, ‘তাদের সুবিধার জন্য আমরা কিন্তু একসঙ্গে জোড়াইয়া আমার সইয়ে ১২টা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছি। যে উদ্দেশ্যে আমরা দিয়েছি, সেটার সফলতা আনতে পারি নাই। নেতা-কর্মীদের (আওয়ামী লীগের) জন্য যেটা করা হয়েছিল, কর্মীরা সেটা ভোগ করতে পারে নাই। আজকে মেয়র একটা পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন। আমরা সে জায়গায় আমার ওয়ার্ডে দুটো থানায় (গুলশান ও বনানী) সভাপতি ও সেক্রেটারিকে ডেকেছি, সহযোগী অঙ্গসংগঠন যুবলীগ-ছাত্রলীগ সবাইকে তো ডাকা সম্ভব না।’

কাউন্সিলর বলেন, ‘কিন্তু কিছু লোক তারা আমার কাছে যায় নাই। তার পরেও আমি তাদের খবর দিয়েছি লোক মারফতে। সেই প্রমাণও আমার কাছে আছে। দুই-চারজন আমার কাছে এসেছিল। কিন্তু এ ধরনের কথাবার্তা, কার্যকলাপ, এগুলা কিন্তু খুবই দুঃখজনক এবং কষ্টদায়ক।’

একপর্যায়ে তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন গোলাম মাওলা। কাউন্সিলরের সহযোগীরা তাঁর উদ্দেশে বলেন, ‘মুরুব্বি মানুষ মারসে, এটা আবার মাইনষেরে কও কেন?’ তখন কাউন্সিলর বলেন, ‘আরে কউক না। ওর মতো পোলা কইলে কী আসে যায় আমার।’

পরে কাউন্সিলর মফিজুর সহযোগীদের নিয়ে লিফটে ওঠেন। লিফটে গোলাম মাওলাও ছিলেন। লিফটের ভেতরেই কাউন্সিলরকে উদ্দেশে করে মাওলা বলতে থাকেন, ‘আজ থেকে রাজনীতি ছাইড়া দিলাম। মারসেন আরও মাইরেন। আমি অফিসে আমু, মনের মতো মাইরা দিয়েন। একজনে চারটা কইরা রাস্তা খাইব, আমনে আমাদের কোনো কথাই হুনতাসেন না।’

কাউন্সিলর জবাবে বলেন, ‘তুই (গণমাধ্যমে) সাক্ষাৎকার দিলি কেন? তুই ময়লার কাজ করস, গাছ চুরি কইরা বেচস। বনানী থানায়ও কয়টা মামলা আছে, কয়টা অভিযোগ আছে আমি দেখাই দিমু। তোরে অনেক স্যাক্রিফাইস করসি। তোর মতো চোর, একটা বাটপার, আমার মতো লোকের সামনে খাড়ায় কথা কয়?’ পরে লিফট নিচতলায় পৌঁছালে ঘটনার শেষ হয়।

https://www.prothomalo.com/bangladesh/capital/wxy3hgspo1