১০ মার্চ ২০২৩, শুক্রবার, ৭:২৯

১৩০ টাকা কেজির মুরগি বিক্রি ২৫০ টাকায়

খামার পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৬০ টাকা। আর করপোরেট প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। তবে এসব মুরগি দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে ২০৫-২০৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা খুচরা পর্যায়ে ক্রেতাকে ২৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ব্রয়লার মুরগির অস্বাভাবিক দাম নিয়ে খামারি, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সভা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সভায় এ তথ্য উঠে আসে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। এছাড়া সভায় অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রতিনিধি আবদুল হান্নান, পোলট্রি খাতের করপোরেট ব্যবসায়ী, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন বাজারের ব্রয়লার মুরগির পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার অভিযোগ করেন, ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করা হয় এক অদৃশ্য এসএমএসের মাধ্যমে। সভা শেষে তিনি যুগান্তরকে বলেন, রাতের বাজারগুলোতে করপোরেট কোম্পানির লোক থাকেন। তারা করপোরেট কোম্পানিকে রাতেই দাম জানিয়ে একটি এসএমএস করেন। পরে সকালে করপোরেট কোম্পানিগুলো মুরগি ও ডিমের মূল্য দিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে এসএমএসের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন। তা ছাড়া কয়েকটি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ আছে।
সেখান থেকেও এসব তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই এসএমএসের মাধ্যমে যে দাম নির্ধারণ করা হয়, সেই দামটিই বাজারে বাস্তবায়ন হয়।

সুমন হাওলাদার বলেন, যখন প্রান্তিক খামারিদের হাতে মুরগি থাকে, তখন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দাম কমিয়ে দিয়ে আমাদের ধ্বংস করে দেয়। আর যখন আমাদের হাতে পণ্য থাকে না, তখন তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। এখন আমাদের হাতে পণ্য নেই, এখন মুরগির কেজিপ্রতি দাম ২৫০ টাকা। সরকার ডিম ও মুরগির দাম নির্ধারণ করলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। কিন্তু গুটিকয়েক করপোরেট কোম্পানির হাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণ থাকায় মুরগির বাজার এখন অস্থিতিশীল।

ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি ও কাজী ফার্মস লিমিটেডের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান বলেন, ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ বাড়ায় অধিকাংশ ছোট খামারি ক্ষতিতে পড়েছে। অনেকে খামার বন্ধ করে রেখেছে এবং বাচ্চা কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। গত বছরের মে, জুন, জুলাই ও আগস্ট এবং এ বছরের জানুয়ারিতে বাচ্চার কোনো চাহিদা ছিল না। এর জন্য বাচ্চা ৮ থেকে ৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাচ্চার দাম যখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ছিল, তখন আমরা বাচ্চা ৮ থেকে ৯ টাকায় বিক্রি করেছি। ওই সময় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পোষানোর জন্য উৎপাদন কমানো হয়েছিল। বাচ্চার উৎপাদন কমে যাওয়ায় ব্রয়লারে উৎপাদন কমে গেছে। ফলে ব্রয়লারের মূল্য বেড়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির জন্য কী পরিমাণ খরচ হয়, জানতে চাইলে কাজী জাহিন হাসান বলেন, খুচরা খামারি পর্যায়ে এই খরচ হয় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। তবে আমরা যারা করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো মুরগির উৎপাদন করি, তাদের ২০ টাকার মতো কমে খরচ হয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসাবে সিন্ডিকেট, করপোরেট গ্রুপ ও অদৃশ্য যে এসএমএসের কথা বলা হচ্ছে আমরা তা খতিয়ে দেখব। আমাদের কাছে আগেও এই বিষয়গুলো এসেছে। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র খামারিরা করপোরেটদের সঙ্গে পারছেন না। তাদেরও টিকিয়ে রাখতে হবে। ১৪০ টাকার মুরগি কেন ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে কেউ জড়িত থাকলে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রত্যেককে দোকানে ব্রয়লার মুরগি কত করে কেনা হয়েছে এবং কত দামে বিক্রি করা হচ্ছে, তা ঝুলিয়ে রাখতে হবে। কৃত্রিমভাবে বাজার অস্থিতিশীল করায় এর চাপ সাধারণ ভোক্তার ওপর পড়ছে।

তিনি জানান, ব্রয়লার মুরগির দাম না কমলে আমদানি মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমার যেটা ধারণা, আজকের আলোচনার পরে নিঃসন্দেহে মুরগির দাম পড়তির দিকে থাকবে। এর পরও যদি দেখা যায় কাজ হচ্ছে না, সেখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে হয়তো আমদানি উš§ুক্ত করে দিতে পারে। সেটাও আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানাব।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/652928