৬ মার্চ ২০২৩, সোমবার, ৭:০৫

ডিম ও মুরগির গোশতের দাম নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে

ডিমের দাম নির্ধারণ কমিটি কার্যকর করার দাবি খামারিদের

সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যের উচ্চমূল্যসহ নানা কারণে লোকসানের শিকার হয়ে খামারিরা তাদের প্রায় ৬৪ হাজার পোলট্রি খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রায় এক লাখ ৫৮ হাজার খামারের মধ্যে বর্তমানে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার সচল রয়েছে। এর ফলে প্রতিদিনের মুরগির গোশত ও ডিম উৎপাদন হারও কমছে। আগে যেখানে দৈনিক মুরগির গোশত উৎপাদন সক্ষমতা ছিল পাঁচ হাজার ২৭৩ মেট্রিক টন; সেখানে তা কমে চার হাজার ২১৯ মেট্রিক টনে নেমেছে। অর্থাৎ গোশতের উৎপাদন ২৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কমেছে। একইভাবে ডিমের উৎপাদনও প্রায় ২৫ শতাংশ কমেছে। আগে প্রতিদিন ৬ দশমিক ৬৪ কোটি পিস ডিম উৎপাদন হলেও তা কমে ৪ দশমিক ৩২ পিসে নেমেছে।

গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। তারা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ডিম ও মুরগির গোশতের খুচরা দাম নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘ দিন খামারিরা ভালো দাম না পাওয়ায় খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা বলছেন, ২০১০ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রধান করে ডিমের দাম নির্ধারণ কমিটি করা হয়। কিন্তু সেই কমিটি অকার্যকর হয়ে আছে। এ কমিটির কাছে খামারিদের দাবি, তারা যেন উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে মাসে অন্তত দু’বার যেন যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেয়। তাতে বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।

এ সময় অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি খন্দকার মনির আহম্মেদ বলেন, এখন মুরগির যে উৎপাদন খরচ, তার থেকে ১০-১৫ টাকা লাভে বিক্রি করলে সেটি হবে যৌক্তিক দাম। এ ছাড়া একটা ডিমের উৎপাদন খরচ থেকে ২৫-৫০ পয়সা বেশি হলেই খামারিরা টিকে থাকতে পারবে। এ জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার। কারণ ফিড, বিদ্যুৎ বিল, মেডিসিনসহ সব কিছুর দামই এখন চড়া। এ অবস্থায় সরকারের উচিত আসলে দাম কত হওয়া দরকার সেটা বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে স্বতন্ত্রভাবে অ্যানালাইসিস করা।

সংগঠনের মহাসচিব খন্দকার মো: মহসিন বলেন, দীর্ঘ দিন লোকসানের কারণেই খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন যারা আছে তারা কিছুটা লাভ পাচ্ছে। বাজারে যে দাম সেটাও যৌক্তিক না, আমরা চাই এই অস্থিরতা না থাকুক। এ অবস্থায় সারা দেশে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামের অস্থিরতা নিরসনে সরকারের হস্তক্ষেপে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেয়ার দাবি করেছেন বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিআইএ) সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে খামারি নেতারা জানান, বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ পড়ছে ১৬৭ টাকা, যেখানে খামারি বিক্রি করছে ১৯০-২০০ টাকায়। ঢাকার বাজারে এই মুরগির গোশত বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা পর্যন্ত দামে। কিন্তু এই দামটা যৌক্তিক পর্যায়ে নেই। অন্য দিকে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ হচ্ছে ১১.৭১ টাকা, যেখানে খামারি লোকসান দিয়ে বিক্রি করছে ৯.৪৫ টাকায়। এটাও যৌক্তিক দামে বিক্রি হচ্ছে না। এ অবস্থার অবসানের জন্য খামারিরা সরকারের হস্তক্ষেপে ডিম ও মুরগির যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে দেয়ার দাবি করেন।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/732335