১ মার্চ ২০২৩, বুধবার, ৮:০১

বাঁকখালী নদীর দখল উচ্ছেদে সাংবাদিকদের ওপর হামলা আ’লীগ নেতার!

কক্সবাজারে সাংবাদিকের ওপর আওয়ামী লীগ নেতার হামলা

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী দখলদারদের বিরুদ্ধে অবশেষে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে এ অভিযান শুরু হয়।

অভিযান চলাকালীন বেলা ২টার দিকে দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা ও দখলদার আবদুল খালেক। এতে কয়েকজন সাংবাদিক আহতও হয়েছেন।

জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে এ অভিযানে পরিবেশ অধিদফতর, বনবিভাগ, বিআইডব্লিউটিএসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদোর উপস্থিতিতে সকালে শুরু হয় এ অভিযান।

অভিযানে নদীর তীরবর্তী সীমানা পিলার দিয়ে দখল করা শতাধিক পিলারসহ বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙে দেয়া হয়েছে। একই সাথে দুই শতাধিক ভবন ও ঘর ভেঙে দিয়েছে প্রশাসন। এদিকে উচ্ছেদ চলাকালীন সময়ে বেলা ২টার পর হাতে লাঠি নিয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় আলোচিত দখলদার আবদুল খালেকের নেতৃত্বে ১০-১২ জন যুবক।

উপস্থিত সাংবাদিকরা জানান, হঠাৎ হাতে লাঠি নিয়ে দখলদার আবদুল খালেকসহ যুবকরা গালিগালাজ করতে করতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ডিবিসি নিউজ ও বিডিনিউজের প্রতিনিধি শংকর বড়ুয়া রুমি, আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি মাইন উদ্দিন শাহেদ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম লিপুসহ কয়েকজন ক্যামেরা পারসনকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পরিস্থিতি দেখে উপস্থিত পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। যাওয়ার সময় আবদুল খালেক পিস্তল হাতে নিয়ে সাংবাদিকদের হুমকি দিতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন সাংবাদিকরা। সাংবাদিকরা মূলত উচ্ছেদের সংবাদ সংগ্রহকালে এভাবে হামলার শিকার হন।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আবু সুফিয়ান জানিয়েছেন, উচ্ছেদ অভিযানে ৩০০ একর জমি উদ্ধার করা হয়েছে। উচ্ছেদ চলমান রয়েছে থাকবে। এখানে অনেকভাবে উচ্ছেদ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। অনেকেই আইনজীবী এনে উচ্ছেদে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশে এ উচ্ছেদ। নদীর সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ পর্যন্ত অভিযান চলবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারী আবদুল খালেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হবে।

এখানে একটি নদী বন্দর হওয়ার জন্য সরকারি প্রজ্ঞাপন রয়েছে ও এর জন্য এ জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য হাইকোর্টের রায় রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করার কথা জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: আবু সুফিয়ান।

কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাটের বদরমোকাম থেকে পেশকারপাড়া পর্যন্ত পাঁচটি দাগে নদী, খাল ও বালুচর শ্রেণীর ১৪৬ একর বাঁকখালী নদীর সরকারি জমি গত দুই বছরে প্রকাশ্যে দখল করা হয়েছে। এসব জমির সহস্রাধিক একর প্যারাবন, জীববৈচিত্র্য ও পাখির আবাসস্থল ধ্বংস করা হয়েছে।

শহরের পার্শ্ববর্তী খুরুশকুল ইউনিয়ন ও আশ্রয়ন প্রকল্পের সাথে সংযোগ স্থাপনের জন্য কস্তুরাঘাট পয়েন্টে বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে একটি সেতু। এই সেতুর পাশাপাশি সংযোগ সড়ক তৈরি হওয়ায় সড়কের দুই পাশে প্যারাবন ধ্বংস করে নদীদখলের মহোৎসবে মেতে ওঠেছে একাধিক প্রভাবশালী চক্র।

জেইউসির নিন্দা : বাঁকখালী নদীর অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে পেশাগত দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের ওপর অবৈধ দখলদার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল খালেক ও তার সন্ত্রাসীবাহিনীর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন, জার্নালিস্ট ইউনিয়ন কক্সবাজার (জেইউসি) এর সভাপতি জিএম আশেক উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফা সরওয়ার। বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন দাবি জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ও প্রশাসনের কাছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/731210