২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ৭:৫৫

জাবিতে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক ছাত্রকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের ৯ কর্মীর বিরুদ্ধে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের ঘটনায় হলের প্রভোস্টের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলাম ফারাব্বি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক ছাত্র।

অভিযুক্তরা হলেন- ইংরেজি বিভাগের জুনায়েদ হাসান রানা, ফার্মেসি বিভাগের নাইমুল ইসলাম সাগর, ইতিহাস বিভাগের আতিক শাহরিয়ার, চারুকলা বিভাগের মোহতাছিম বিল্লাহ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের উৎস ও কাব্য, গণিত বিভাগের জুনায়েদ ইভান, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ইমরান মির্জা ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সৈকত ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী ২১৬ নম্বর কক্ষের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ২১৯ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে যান। এ সময় তাদের নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের রুমে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। ফলে সারা রাত গেস্ট রুমেই থাকতে হয় তাদের।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলাম ফারাব্বি বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আমি ও আমার বন্ধুরা ২১৬ নম্বর রুমে ঘুমিয়ে ছিলাম৷। রাত দুইটার দিকে তারা (ছাত্রলীগের কর্মী) আমাদের ডেকে ২১৯ নম্বর রুমে নিয়ে যান। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করতে থাকেন- আমি পলিটিক্যাল প্রোগ্রামে কেন যাইনি, গেস্ট রুমে কেন থাকিনি। আমি বলি, আমার পরীক্ষা চলছে ও সম্প্রতি ডিপার্টমেন্টের একটি ট্যুরে গিয়েছিলাম, এজন্য থাকতে পারিনি। এ কথা বলায় তারা আমাকে হল ছাড়তে বলেন। এটা আমার অ্যালোটেড হল হওয়ার আমি হল ছাড়তে রাজি হইনি। তখন তারা আমাকে পোশাক খুলতে বলেন। আমি পোশাক না খোলায় তারা ক্ষেপে যান ও মারধর শুরু করেন। মারধরের চিৎকার শুনে আমার বন্ধুরা পাশের রুম থেকে এগিয়ে আসে ও আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এরপর সারা রাত আমরা হলের গেস্ট রুমে থাকি।

তবে অভিযুক্ত ছাত্রলীগের কর্মীরা মারধরের ঘটনা অস্বীকার করেছেন। অভিযুক্ত আতিক শাহরিয়ার বলেন, মারধরের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অভিযোগ যে দিয়েছে সে তার বন্ধুদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছিল। তার এক বন্ধুকে রুম থেকে বের করে দিয়েছিল। তাই আমরা তাকে বোঝাতে গিয়েছিলাম।

আরেক অভিযুক্ত ইমরান মির্জা বলেন, তাকে রুমে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু মারধরের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আন্তর্জাতিক বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, চড়-থাপ্পড়ের আওয়াজ শুনে আমি গিয়ে দেখি ৪৮ ব্যাচের সিনিয়র ভাইয়ারা ফারাব্বিকে মারধর করছেন। পরে ফারব্বিকে আমি রুম থেকে বের করে নিয়ে আসি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ছাত্রলীগ র‍্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। এই ধরনের ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হোসেন তালুকদার বলেন, ঘটনা সম্পর্কে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। হলের প্রভোস্ট সংক্ষেপে জানিয়েছিলেন- সিনিয়র জুনিয়রদের কিছু একটা ঝামেলা হয়েছিল, যেটা সমাধান হয়ে গিয়েছে। হল প্রশাসন যদি আমাকে অফিসিয়ালি জানায় তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

https://samakal.com/whole-country/article/2302159210