২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ৭:৪৪

ঢাকায় কেন এত বিশ্ববিদ্যালয়

১৫৮টির ৮৫টিই ঢাকা বিভাগে

সরকার দীর্ঘদিন ধরে উচ্চশিক্ষাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে চাইছে। যার অংশ হিসেবে বিভিন্ন জেলায় স্থাপন করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। অথচ দেশের ১৫৮টি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫টিই ঢাকা বিভাগে। যার মধ্যে ৬৬টি বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত ঢাকাতে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো আমলে নেয়া হলেও বাস্তবতার কারণে অনেক সময় তা কার্যকর হয় না।

ইউজিসি’র বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের মোট পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১৫৮টি। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৫০টি। আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০৮টি। ঢাকা বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে মোট ৮৫টি। অথচ রংপুর বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র ৪টি।

আর বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৫টি করে। চট্টগ্রাম বিভাগে ২৫টি, রাজশাহী বিভাগে ১৪টি, খুলনা বিভাগে ১০টি, সিলেট বিভাগে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

ইউজিসি’র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগের ৮৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শুধু রাজধানীতে রয়েছে ৬৬টি। এর মধ্যে ৫৭টি প্রাইভেট এবং ৯টি পাবলিক। এছাড়া টাঙ্গাইলে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মানিকগঞ্জে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুরে ৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ২টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জে ৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, মুন্সীগঞ্জে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ফরিদপুরে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং শরীয়তপুরে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

রংপুর বিভাগের ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে- রংপুর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর জেলায় একটি করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আর নীলফামারীতে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

রাজশাহী বিভাগের ১৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৫টি। আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৯টি। এর মধ্যে রাজশাহীতে ৩টি পাবলিক ও ৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, বগুড়া ও চাঁপাই নবাবগঞ্জে একটি করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, নাটোরে ২টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, সিরাজগঞ্জে একটি পাবলিক ও একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

খুলনা বিভাগে রয়েছে ৫টি করে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। এর মধ্যে কুষ্টিয়ায় একটি করে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, চুয়াডাঙ্গায় একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, যশোরে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনায় ৩টি পাবলিক ও ৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

বরিশাল বিভাগে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২টি পাবলিক ও ৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে বরিশালে একটি পাবলিক ও ৩টি প্রাইভেট এবং পটুয়াখালীতে ১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

ময়মনসিংহ বিভাগে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে- ময়মনসিংহে ২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনায় একটি পাবলিক এবং জামালপুরে একটি করে পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

সিলেট বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৯টি। এরমধ্যে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে একটি করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আর সিলেটে ৩টি পাবলিক ও ৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে- চট্টগ্রামে ৫টি পাবলিক, ১০টি প্রাইভেট ও একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আর কক্সবাজার, বান্দরবান, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। রাঙ্গামাটি, নোয়াখালী, চাঁদপুরে একটি করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুমিল্লায় একটি পাবলিক ও চারটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস প্রফেসর ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, এটা ঠিক যে, আমাদের সবকিছু রাজধানীকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান, শিক্ষা, বাণিজ্য সবকিছুরই বিকেন্দ্রিকরণ দরকার। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে দরকার শিক্ষাক্ষেত্রে বিকেন্দ্রিকরণ করা। শিক্ষা ক্ষেত্রে অপরিহার্য।

এ ব্যাপারে ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে এটা অবশ্যই আমলে নিই। আমাদের পরামর্শ থাকে বিকেন্দ্রিকরণের জন্য। কিন্তু অনেক সময় হয়ে ওঠে না। সরকারও চাচ্ছে উচ্চশিক্ষাকে ছড়িয়ে দিতে কিন্তু অনেক সময় সেটি সম্ভব হয় না বাস্তবতার কারণে। বাস্তবতা হচ্ছে দেশের সব প্রতিষ্ঠানই ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। তাই উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও এমনটা হচ্ছে। কিন্তু ইউজিসি ও সরকার চায় উচ্চ শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিতে। সেজন্য প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আশা করছি এ সমস্যাটাও অন্যান্যগুলোর মতো সমাধান হয়ে যাবে।

https://mzamin.com/news.php?news=44459