২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ১২:১২

পুঁজিবাজারে চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তে পথে বসেছেন বিনিয়োগকারীরা

১ সপ্তাহে পুঁজি হারিয়েছে ১৬২১ কোটি টাকা

 বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দেশের পুঁজিবাজারকে নিজের গতিতে চলতে না দিয়ে কৃত্রিমভাবে গতিশীল করার চেষ্টা করেছে। এতে হিতে বিপরীত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন পুঁজিবাজারে কমিশনের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তে পথে বসেছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন দেশের পুঁজিবাজার পতনের অন্যতম কারণ ফ্লোর প্রাইস। বিএসইসির পক্ষ থেকে এমন আরো কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত ভালো ফল দেয়নি। উল্টো বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সবার মধ্যে জন্ম নিয়েছে ক্ষোভ আর হতাশা।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে মানুষ পুঁজিবাজার থেকে একেবারেই মুখ ফিরিয়ে নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি জোর করে পুঁজিবাজার ভালো রাখার যেসব চেষ্টা করেছিল, তার সবগুলোই ব্যর্থ হয়েছে।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্রধানসহ সংস্থাটির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ছোট-বড় বিনিয়োগকারীদের অভিযোগের শেষ নেই। তারা বলছেন, বিএসইসির কর্তাব্যক্তিরা শুধু বড় বড় কথাই বলে গেছেন, কাজের কাজ কিছুই করেননি। সে কারণেই বিনিয়োগকারীরা এখন সব হারিয়ে পথে বসেছেন। বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায় ফেব্রুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে লেনদেনের শুরুতে ডিএসইর মূলধন ছিল সাত লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি ৬৯ লাখ ৯০ হাজার ৯৪০ টাকা। আর শেষ দিন গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে মূলধন দাঁড়ায় সাত লাখ ৬২ হাজার ২২৬ কোটি ৯৮ লাখ ৩১ হাজার ১৪৮ টাকায়। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে পুঁজি কমেছে ১৬২১ কোটি ৭১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৯২ টাকা। অপর দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত এক সপ্তাহে লেনদেনের পরিমাণ আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৯২ কোটি টাকা। যার মোট লেনদেনের ৪২ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। ওই ১০ কোম্পানির লেনদেন হয়েছে ৪৬৩ কোটি টাকা।

তথ্যে দেখা যায় গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপরের চার কার্যদিবস ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন দুই লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে সাত লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল সাত লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন দাঁড়ায় সাত লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকায়। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল সাত লাখ ৬২ হাজার ২২৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে এক হাজার ৬২১ কোটি ৭১ লাখ টাকা।

গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৯২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ১১১ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৪৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ২৭৩ কোটি ১২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪২২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১৫টির, দর কমেছে ১৫৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১৮২টি কোম্পানির। লেনদন হয়নি ৫০টি কোম্পানির শেয়ার।

গত সপ্তাহে ডিএসইর সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪১ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ছয় হাজার ২০৫ দশমিক ১২ পয়েন্টে। এ ছাড়া শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১০ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট এবং ডিএসই৩০ সূচক ২ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে এক হাজার ৩৫৫ দশমিক ৮৬ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ২২১ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে।
এ দিকে গত সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৩২ পয়েন্টে, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৪ দশমিক ৩৮ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও কমেছে দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্য দিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৩২ পয়েন্টে। পিই রেশিও হিসেবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।

গত সপ্তাহে এ ক্যাটাগরির ৮০ ভাগ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। এ ছাড়া বি ক্যাটাগরির ২০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর টপটেন লেনদেনে রয়েছে। সপ্তাহটিতে মোট লেনদেনের ৪২ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (এ ক্যাটাগরি) শেয়ারে। একাই মোট শেয়ারের ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ লেনদেন করেছে।

এ ছাড়া জেনেক্স ইনফোসিস (এ ক্যাটাগরি) ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ, শাইনপুকুর সিরামিকস (বি ক্যাটাগরি) ৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ, সি পাল বিচ (এ ক্যাটাগরি) ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ (এ ক্যাটাগরি) ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, জেমিনি সি ফুড (বি ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৩১ শতাংশ, আমরা নেটওয়ার্কস (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ওরিয়ন ফার্মা (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ, এপেক্স ফুটওয়্যার (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং মুন্নু অ্যাগ্রোর (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৫২ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

প্রসঙ্গত পুঁজিবাজারের এ ক্যাটাগরির শেয়ার বি ও জেড ক্যাটাগরি থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই এ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনি¤œ ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা বি-ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই জেড ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এ ছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো এন ক্যাটাগরিতে রয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/730487