২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ১২:১০

আইএমএফের ঋণ সত্ত্বেও কমছে রিজার্ভ

-ড. মো: মিজানুর রহমান

অর্থনীতি বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি, চলতি হিসাব, ব্যালান্স অব পেমেন্টসহ বিভিন্ন শব্দও সাধারণ পাঠকের জন্য আরো জটিল। সাধারণ মানুষ এর হিসাব-নিকাশ খুব কমই রাখে; কিন্তু তাদের জীবনে এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হয় প্রতিদিন। সু-অর্থনীতি জনগণের জীবনে আনে সুখ ও সমৃদ্ধি। আর কু-অর্থনীতির দাপটে তাদের জীবন হয় দুঃখ ও কষ্টের। সামগ্রিকভাবে এর প্রভাবে অর্থনীতি হয় বিধ্বস্ত। দেশ হয় বিপর্যস্ত।

বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি বলতে পণ্য ও সেবার আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যের ঘাটতি বোঝায়। অন্য দিকে ব্যালান্স অব পেমেন্ট বলতে একটি দেশের সাথে বিশ্বের অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক লেনদেন যেমন পণ্য, পরিষেবা ও আর্থিক সম্পদের রফতানি এবং আমদানি, সেবা ও বিদেশী সাহায্য ইত্যাদির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়। বাংলাদেশে নানা উদ্যোগে আমদানি ব্যয়ের চাপ সামান্য কমলেও দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি কমানো যাচ্ছে না। ফলে অর্থবছরের শুরু থেকেই বিশাল অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম ছয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৩০ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) তিন হাজার ৮১৩ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে রফতানি হয়েছে দুই হাজার ৫৮৩ কোটি ডলারের পণ্য। এতে এক হাজার ২৩০ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরজুড়ে আমদানি ব্যয়ে সেই উল্লম্ফন দেখা যায়। শেষ পর্যন্ত ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে অর্থবছর শেষ হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে আমদানির চেয়ে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে লেনদেন ভারসাম্যে ৫ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলারের বড় ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। যদি রফতানিতে আরো বেশি প্রবৃদ্ধি থাকত এবং আমদানি গত অর্থবছরের মতোই থাকত, তা হলে চলতি হিসাবে ঘাটতি কমে যেত; বাণিজ্য ঘাটতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ত না। বাস্তবতা হলো, দেশে যে পরিমাণ মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি তথ্য আসছে সে অনুযায়ী বিনিয়োগ দৃশ্যমান হচ্ছে না। কাজেই আমদানির আড়ালে অর্থপাচার কিংবা আমদানি ব্যয় অতি মূল্যায়িত হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন তারা।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, দেশের রেমিট্যান্স হিসেবে ধরার পরও মূলত বড় বাণিজ্য ঘাটতির কারণে চলতি খাতে ঘাটতি হয়। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আর্থিক খাতের ঘাটতি, যা এখন প্রায় ১০০ কোটি ডলারের বেশি। ফলে জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ব্যালান্স অব পেমেন্টে ঘাটতি ৭১৬ কোটি ডলারের; অর্থাৎ ডলারের চাহিদার চেয়ে জোগানের ঘাটতি হচ্ছে ৭১৬ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১৭৯ কোটি ডলার। চলতি হিসাবে ঘাটতি থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে রিজার্ভ খরচ করতে হচ্ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে সেবাখাতে দেশ আয় করেছে ৪৫৫ কোটি ডলার; অথচ ব্যয় হয়েছে ৬৫০ কোটি ডলার। এতে সেবা খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২০৫ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১৬৮ কোটি ডলার। এ সময়ে সেবা খাতে ব্যয় বেড়েছে ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ। কিন্তু বিপরীতে বিদেশ থেকে সেবা বাবদ আয় ২৯৭ কোটি ডলার বা ১ দশমিক ৮২ শতাংশ। তবে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২৩২ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ২৬২ কোটি ডলারে উঠেছে।

দেশে এক বছর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ১৩ বিলিয়ন ডলার; টাকার মূল্যমান কমে গেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে প্রতি মাসে গড়ে এক বিলিয়ন ডলার বিক্রি করছে। দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ নেতিবাচক অবস্থায় নেমেছে। চলতি অর্থবছরে শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ যা এসেছিল, তার চেয়ে দুই কোটি ডলার চলে গেছে। তার আগের অর্থবছরের শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল (ঋণাত্মক) সাত কোটি ৭০ লাখ ডলার।

সর্বোপরি দেশের বাণিজ্য ঘাটতি আশঙ্কাজনক জায়গায়। রফতানির থেকে আমদানি প্রায় দ্বিগুণ। আমদানি বিল মেটাতে ডলারের চাহিদা ক্রমেই বাড়তে থাকায় পড়ছে টাকার দামও। জাতীয় অর্থনীতির অবস্থা ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বাণিজ্য ঘাটতি আশঙ্কাজনক। ক্রমবর্ধমান এ ঘাটতি যদি জিডিপির ৪ শতাংশ হয়, তা হলে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটবে। আমদানি ব্যয় কমিয়ে এনে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কিন্তু তার বড় প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এলসি খোলা কঠিন হলেও ভ্রমণের বিজনেস ক্লাসের সিট ফাঁকা থাকছে না। দুর্নীতিবাজদের হাজার হাজার কোটি টাকা আবিষ্কার থেমে থাকছে না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে নেয়া উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সম্ভাব্য উৎস সন্ধানে আরো সক্রিয় হতে হবে।

সরকার ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে বিভিন্ন বিলাসী অথবা কম প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ে লাগাম টেনে ধরে আমদানি কমানোর চেষ্টা করছে; এর পরও আমদানি কমছে না। সাধারণভাবে অর্থনীতিতে আমদানি বাড়াকে ইতিবাচকভাবে দেখা হয়ে থাকে। বলা হয়, আমদানি বাড়লে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। কিন্তু এখন সেটা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। ৫০ শতাংশ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা দেশের অর্থনীতির নেই বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ কথা সত্য, শিল্প খাতের বিকাশ ঘটাতে হলে আমদানি বাড়াতে হবে। আমদানি বাড়লে রফতানিও বাড়বে। কিন্তু দেশে আমদানি যে হারে বাড়ছে, ওই হারে রফতানি বাড়ছে না। এমনকি আমদানির বিকল্প শিল্পপণ্যের উৎপাদনও যে খুব বেশি বাড়ছে, তা বলা যাবে না। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। স্বল্পোন্নত দেশে বাণিজ্য ঘাটতি থাকবে। তবে তা সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। দেশে বেশি মাত্রায় ঘাটতি বাড়ছে। ডলারের যে সঙ্কট এর নেপথ্যেও বাণিজ্য ঘাটতির ভূমিকা রয়েছে। অনেক দেশে ঘাটতি বেশি হলে ওই সব দেশ রেমিট্যান্স ও পর্যটন খাত দিয়ে তা পুষিয়ে নেয়। বাংলাদেশ আগে রেমিট্যান্স দিয়ে ঘাটতি মেটাতে পেরেছে। ফলে ডলারের বড় সঙ্কট হয়নি, কিন্তু এখন পারছে না। আর পর্যটন বা অন্য খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে খুবই কম।

বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধির বিপরীতে রেমিট্যান্স প্রবাহ না বাড়লে চলতি হিসাব ঘাটতি আরো বেরে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখতে হবে। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে নতুন রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অস্থির ডলারের বাজার সুস্থির করতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে প্রায় সাড়ে ৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিক্রি করা হয়েছে ৩৩ কোটি ডলার। ফলে আইএমএফ ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার পাওয়ার পর রিজার্ভ বেড়ে স্বস্তির আশা জাগিয়ে আবার কমতে শুরু করেছে রিজার্ভ। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। গত ১ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে যোগ হওয়ার আগে রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার।

মার্চের প্রথম সপ্তাহে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের আকুর বিল পরিশোধ করতে হবে। মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে রমজান মাস শুরু হবে। রোজার মাসে প্রয়োজনীয় বাড়তি পণ্য আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খুলতে ব্যাংকগুলোর ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই চাহিদা মেটাতে রিজার্ভ থেকে বেশি ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি বা বিশ্বব্যাংক-এডিবির কাছ থেকে যে ঋণের আশা সরকার করছে তা যদি না আসে, আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি ডলার বিক্রি অব্যাহত রাখে তা হলে রিজার্ভ কমে ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে।

অবশ্য আইএমএফের পরামর্শ মেনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে রিজার্ভের হিসাব করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দাঁড়াবে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। ‘আইএমএফের হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ বর্তমানে ২৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার; এই রিজার্ভ জুনে ২৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার এবং ডিসেম্বরে ২৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে থাকতে পারবে না। এর নিচে যদি নামে তা হলে ঋণের বাকি কিস্তি বন্ধ করে দিতে পারে আইএমএফ’।

তবে আশার কথা হচ্ছে, তিন মাস ধরে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি রফতানি আয় দেশে এসেছে। রেমিট্যান্সও কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এই দুই সূচক যদি না বাড়ত তা হলে রিজার্ভ আরো কমে যেত। এখন কথা হচ্ছে, আগামী মাসগুলোতে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ যদি কমে যায়, আর মার্চের প্রথম সপ্তাহে আকুর বিল পরিশোধের আগে আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তি না আসে এবং বিশ্বব্যাংক বা এডিবির বাজেট সহায়তাও যদি না পাওয়া যায়, তা হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবেই রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে। আর যদি আইএমএফের মানদণ্ডে রিজার্ভের হিসাব করা হয়, তা হলে ২৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসবে।

এ কথা সত্যি যে, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতির সম্মুখীন। তারা সুদের হার বৃদ্ধি থেকে শুরু করে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশগুলো রফতানি ও বিনিয়োগ বাড়াতে বাড়তি জোর দিয়েছে। তার পরও বাণিজ্য ঘাটতি কমানো যাচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্যের বৃদ্ধি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি বাণিজ্য সীমিতসংখ্যক দেশ ও সামান্য কিছু পণ্যের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর হয়ে রফতানি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০০ পণ্য বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। এর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি পণ্য থেকে আসে মোট রফতানি আয়ের ৯০ শতাংশেরও বেশি। তৈরী পোশাক শিল্প পুরোপুরি আমদানিকৃত কাঁচামালনির্ভর। ফলে এ খাত জাতীয় অর্থনীতিতে মাত্র ৬০-৬৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন করে। অথচ তৈরী পোশাকের পাশাপাশি স্থানীয় কাঁচামালনির্ভর পণ্য বেশি পরিমাণে রফতানি করা গেলে এ খাতের আয় যেমন বাড়ত, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতে অধিক মূল্য সংযোজন হতে পারত। বাংলাদেশের রফতানিতে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেলে দেশের সার্বিক কর্মসংস্থানসহ সেবা খাতেও এর প্রভাব পড়বে। ফলে রফতানি আয় কমে যাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে করণীয় নির্ধারণসহ পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুন বাজার অনুসন্ধান ও পণ্য বৈচিত্র্যকরণের যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, তা বাস্তবায়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। একই সাথে বর্তমান রফতানি পণ্যের দিকেও নজর দিতে হবে।

দেশের রফতানি বৃদ্ধি উদ্যোগের পাশাপাশি আমদানি ব্যয় কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ১২৩টি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। ২৭ ধরনের তুলনামূলক স্বল্প প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ৭৫ থেকে শতভাগ এলসি মার্জিন আরোপ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে অপ্রয়োজনীয় বিলাসীপণ্য আমদানি কিছুটা হলেও কমে আসবে। মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। অনেকে মনে করছেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে দেশ থেকে মুদ্রা পাচার হচ্ছে। মার্কিন ডলারের চাহিদা অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে এটাও একটি কারণ।

পরিশেষে বলতে হয়, রিজার্ভ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারকে বিদেশী মুদ্রা সরবরাহের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন এবং রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক-এডিবিসহ অন্য দাতাদের কাছ থেকে ঋণসহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে সরকারকে। দেশের রফতানি হঠাৎ করে বৃদ্ধি করা কঠিন, তবে আন্ডার ইনভয়েসিং বন্ধ করে ডলার পাচার বন্ধ করতে হবে। আমদানি কমাতে হবে, পাশাপাশি ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি মেটাতে রেমিট্যান্স যে করেই হোক বাড়াতে হবে। এ জন্য দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে হবে। শ্রমিক পাঠানোতে দুর্নীতি কমাতে হবে। শ্রমিকের পাঠানো ডলার বৈধ চ্যানেলে দেশে আনতে হবে। ডলারের সঙ্কট কমিয়ে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধের চেষ্টা করতে হবে। আর সরকারিপর্যায়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সাময়িক স্থগিত রাখাসহ অর্থছাড় কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট
ই-মেইল : mizan12bd@yahoo.com

 

https://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/730423