২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার, ১২:৩৭

বিলবোর্ড, পোস্টারে বন্দি শাপলা!

সড়ক, ফুটপাথ, অলিগলি যেখানেই চোখ যায় শুধু পোস্টার আর পোস্টার। বাহারি পোস্টারে নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। যেখানে দেয়াল আছে, সেখানেই পোস্টারে ছেয়ে গেছে। বাদ যায়নি ঢাকার সৌন্দর্যবর্ধনে তৈরি ভাস্কর্যগুলো। পোস্টার বিলবোর্ডে চাপা পড়েছে মতিঝিলের শাপলা চত্বর ভাস্কর্যটি। শোভাবর্ধনে ১৯৭৭ সালের ১৫ই জুন নির্মিত ভাস্কর্যটি এখন দেখাই কঠিন। দেখা মিলছে না দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারাটিও। চত্বরের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে শুধু বিভিন্ন ব্যাংকের বিজ্ঞাপন আর বিজ্ঞাপন। পোস্টারের ভিড়ে বিশাল আকৃতির শাপলা ফুলটি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। দূর থেকে দেখে মনে হবে লোহার গ্রিলে ঘেরা কোনো পরিত্যক্ত স্থাপনা।

কাছে গেলে ব্যানার-ফেস্টুনের ফাঁক দিয়ে কোনো রকম শাপলা ফুলটি দেখা যায়। তবে তা অপরিচ্ছন্ন। ধুলা ময়লায় হারিয়ে গেছে আসল সৌন্দর্য। অথচ এটি দেশের জাতীয় ফুল শাপলার প্রথম ভাস্কর্য। স্থপতি আজিজুল পাশা এ নকশা করেন। যেটাকে কেন্দ্র করে এই এলাকার নাম হয়েছে শাপলা চত্বর।

সরজমিন দেখা যায়, শাপলাকে ঘিরে দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারাটি নষ্ট হয়েছে দেড় বছর আগে। তবে এখনো সংস্কার করা হয়নি। নষ্ট ফেয়ারাই আবার বড় বিলবোর্ড দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। আবার ব্যস্ত মোড়ের মাঝখানে বিশাল আকৃতির এ স্থাপনায় ব্যানার- ফেস্টুন টাঙানোয় সড়কের এপাড় থেকে অপর পাড় দেখা যাচ্ছে না। এতে মোড় ঘোরার সময় শঙ্কায় থাকেন যানবাহনের চালকেরা। এদিকে পোস্টার দিয়ে ভাস্কর্য ঢেকে ফেলায় এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, মাঝে-মধ্যে এলাকার নেতাদের কিছু পোস্টার লাগানো হয়। তবে সেটা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কখনো কখনো সকালে পোস্টার সরিয়ে নিলে, রাতে আবার পোস্টার দিয়ে ঢেকে দেয়া হতো। কিন্তু গেল কিছুদিন হলো নেতাদের পোস্টার দেখা যায় না। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শাপলা ঘিরে তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। অথচ বর্তমানে সোনালী ব্যাংক, মতিঝিল শাখা এটি রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বে রয়েছে।
এ বিষয়ে মতিঝিল এলাকার বাসিন্দা রাসেল আহম্মেদ বলেন, পোস্টারের একটা মাত্রা থাকে। তারা নিজেদের প্রচারণার জন্য পরিবেশ নষ্ট করতে পারেন না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। মাসুদ হোসেন নামের এক পথচারী বলেন, শাপলা ফুলের ভাস্কর্যটি ঢাকা শহরের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। ভাস্কর্যটি এভাবে পোস্টার-ব্যানারে ঢাকা পড়ায় আমাদের কষ্ট হয়। আবদুল লতিফ নামের মতিঝিল এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, এভাবে ভাস্কর্যটির বারোটা বাজিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়টি দেখে হতবাক হই। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। দ্রুত ভাস্কর্য থেকে পোস্টার- ফেস্টুন অপসারণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে মতিঝিল তার আসল সৌন্দর্য হারাবে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে এমন অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকলেও ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ পোস্টার অপসারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি কোনো উদ্যোগও নেয়া হয়নি।

জানতে চাওয়া হলে ডিএসসিসি’র প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর সিতওয়াত নাঈম বলেন, ওখানে পোস্টার লাগানো হয়েছে জানা নেই। নগর পরিষ্কারে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। অনেক সময় পুলিশ না পাওয়ায় অভিযানে যেতে পারি না। আমাদের চোখেও পড়েছে বিভিন্ন জায়গায় নতুন করে দেয়াল লিখন, পোস্টার, ফেস্টুন। দ্রুতই এসব নিয়ে কাজ করবো।

https://mzamin.com/news.php?news=44031