২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার, ১২:৩১

কুষ্টিয়ায় পুলিশের সামনে দরপত্র ছিনতাই

জড়িত ক্ষমতাসীন দলের লোকজন

কুষ্টিয়া পৌরসভায় ঠিকাদারের কাছ থেকে হাটবাজার ইজারার দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে।

এ সময় ঠিকাদারকে মারধর করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পৌর মেয়রের কার্যালয়ে পুলিশের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে ঠিকাদার ইব্রাহিম হোসেন পৌর মেয়র বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

এতে বলা হয়েছে, ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আফিল উদ্দিন, শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক হাসিব কোরেশী এবং সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফেরদৌসের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন এ ঘটনায় জড়িত।

জানা যায়, জড়িত সবাই শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার অনুসারী। আর মানব চাকী শহর আওয়ামী লীগের সদস্য গৌরব চাকীর ছোট ভাই। মানব চাকীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। ভাইয়ের দাপটে তিনি নানান অপকর্ম করে আসছেন।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে হাটবাজার ইজারা দেওয়ার জন্য ২৫ জানুয়ারি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১০টির মধ্যে ৭টি বাজারের ইজারা নেওয়ার জন্য দরপত্র ক্রয় করেন ইব্রাহিম হোসেনসহ তার কয়েক পার্টনার।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইব্রাহিম হোসেন দরপত্র সঙ্গে নিয়ে একাই জমা দিতে যান মেয়রের কার্যালয়ে। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, আওয়ামী লীগ নেতা আফিল উদ্দিন, ছাত্রলীগ নেতা হাসিব ও ফেরদৌস তার কাছে দরপত্র চান। অপারগতা প্রকাশ করলে তারা ইব্রাহিমকে মারধর করে জোরপূর্বক দরপত্র কেড়ে নেয় এবং পুলিশের সামনেই তা ছিঁড়ে ফেলে। তবে পুলিশ সদস্যরা নিশ্চুপ ছিলেন।

ঠিকাদার ইব্রাহীম হোসেন অভিযোগ করেন, ‘আমরা সরকারি দরের চেয়ে অনেক বেশি টাকা দিয়ে বাজার নেওয়ার জন্য দরপত্র জমা দিতে যাই। এ সময় শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতার অনুসারী মানব চাকী, আফিল উদ্দিন, হাসিব, ফেরদৌসসহ ২০ থেকে ২৫ জন আমাকে ঘিরে ধরে। এরপর জোর করে দরপত্র ছিনিয়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। প্রতিবাদ করলে তারা আমাকে মারধর করে। হুমকি দেয় ও গালাগাল করে।

পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমি মেয়রের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সেখানে সিসি ক্যামেরা আছে, ফুটেজ দেখলেই সত্যতা পাওয়া যাবে।’

তবে সেখানে দায়িত্বরত কুষ্টিয়া মডেল থানার এসআই কার্তিক বলেন, ‘আমাদের কিছুই করার ছিল না। তারা আমাদের পুলিশ সদস্যদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছুই জানি না। তারা আমার লোক, এটা সঠিক না।’

একটি সূত্র জানায়, পৌর এলাকার সব থেকে বড় রহিম সুপর মার্কেটসংলগ্ন মাছ ও তহবাজার ইজারার সরকারি দর ছিল ১৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা। এ বাজারের জন্য একটি মাত্র শিডিউল জমা পড়েছে। সেটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আফিল উদ্দিনের। তিনি সরকারি দরে দরপত্র জমা দিয়েছেন। অথচ ইব্রাহীম হোসেন জমা দিয়েছিলেন ৩৮ লাখ টাকা দরে, যা দ্বিগুণেরও বেশি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, নতুন করে হাটবাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে একটি সিন্ডিকেট করা হয়েছে। এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন মানব চাকী, আফিল উদ্দিন, হাসিব কোরেশী, ফেরদৌসসহ আরও কয়েকজন। তারা শহরের সব হাটবাজার কম মূল্যে নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ বাণিজ্য করার চেষ্টা করছে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পুলিশের উপস্থিতিতে এ ধরনের ঘটনা দুঃখজনক। এ ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি করছি।’

জানতে চাইলে কুষ্টিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহিন উদ্দিন বলেন, এই পৌরসভার ইতিহাসে প্রকাশ্যে দরপত্র জময় বাধা দেওয়া এবং ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌরবিধি অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযোগের বিষয়ে শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী বলেন, আমরা ইজারার দরপত্র জমা দিতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ সেখানে হইচই শুনতে পাই। এ কারণে আমি সাইডে চলে যাই।

আর ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আফিল উদ্দিন বলেন, ঘটনার সঙ্গে আমার যোগসূত্র নেই। ওই সময় আমি পৌরসভায় একটি কাজে ছিলাম।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, পৌরসভায় টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা শুনেছি, তবে এ বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/648266