২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:১৫

কারসাজিতে নাকাল পুঁজিবাজার

পতনের ধারা অব্যাহত

কারসাজিতে নাকাল দেশের পুঁজিবাজার। অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা না নেয়াতে কারসাজি বেড়ে চলেছে। এ চক্র শক্তিশালী হওয়াতে শেয়ারবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত আছে।

ধারাবাহিক মন্দার কারণে বিনিয়োগকারীদের শঙ্কা শেয়ারের দাম আরো কমতে পারে। এ ভয়ে বিক্রির হিড়িক পড়েছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজার এখন নিয়ন্ত্রণ করছে কারসাজি চক্র।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন শেয়ারবাজারে অপরাধীদের বিচার সুনিশ্চিত হয়নি। এতে বাজারে অপরাধের মাত্রা বাড়ছে অব্যাহতভাবে। পুঁজিবাজারে দুষ্টচক্র হিসেবে পরিচিত শেয়ার কারসাজির সাথে জড়িতদেরও বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন। আদালতের বাইরে গিয়ে শুধু জরিমানা করার প্রবণতা পুঁজিবাজারে সুশাসন ফিরিয়ে আনা দুরূহ ব্যাপার। অন্তত দেশের অতীত ইতিহাস তাই বলে।

পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বিভিন্ন প্রকার উদ্যোগ নিয়ে আসছে বিভিন্ন সময়। এ জন্য পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) বিশেষ ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। যা আর্থিক খাতের অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে এভাবে দেয়া হয়নি। এটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসির স্বাতন্ত্র্যকেই শুধু নয়, বিনিয়োগকারীদের ভরসার জায়গাকে সমৃদ্ধ করার প্রতীক হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়। এর সাথে বাজার উপযোগী একাধিক আইন ও বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। সবই করা হয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো উদ্যোগ কাজে আসছে না।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায় গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। লেনদেন পরিমাণ ডিএসইতে কমেছে। লেনদেন আড়াই শ’ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছে।

ফ্লোর প্রাইসের কারণে গতকাল ডিএসইতে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর অপরিবর্তিত ছিল। এ দিনে বিক্রেতার চাপ ছিল বহুগুন বেশি। ডিএসইতে ১২০টি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। ৩৬টির বেড়েছে, যা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর উত্থানের চেয়ে পতন ৩ দশমিক ৩৩ গুন বেশি।

গতকাল ডিএসইতে ২৫৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৩২৬ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার। এ দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দশমিক ৫৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২১৮ দশমিক ৩০ পয়েন্টে। এ ছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক দশমিক ৬৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ২২১ দশমিক ৭১ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৫৯ দশমিক ২৪ পয়েন্টে।

এ দিন গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩০৮টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৩৬টি এবং কমেছে ১২০টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ১৫২টির। এদিন ডিএসইতে শাইনপুকুরের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এ দিন শাইনপুকুর ১৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, জেনেক্স ইনফোসিস, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, সি পার্ল বিচ, জেমিনি সি, আমরা নেটওয়ার্ক, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ফার্মা ও এপেক্স ফুটওয়্যারের শেয়ার।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল লেনদেন হয়েছে ৪৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবসে ২ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এ দিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ১২২টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ২৪টি, কমেছে ৪৬টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৫২টির। কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর উত্থানের চেয়ে পতন ১ দশমিক ৯২ গুন বেশি।

এ দিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই দশমিক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৩৬০ দশমিক ৪৯ পয়েন্টে। সিএসসিএক্স সূচক দশমিক ২১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৫ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে। এ ছাড়া সিএসই-৫০ সূচক দশমিক ১৩ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক দশমিক ৬৮ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩২৫ দশমিক ৫১ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩০৫ দশমিক ২১ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৬০ দশমিক ২৬ পয়েন্টে।

এ দিন সিএসইতে রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২১ কোটি ৮৩ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এ দিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে সি পার্ল বিচ, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, বেক্সিমকো, শাইনপুকুর, লার্ফাজ-হোল্ডসিম, ওরিয়ন ফার্মা, আইটিসি, এডিএন টেলিকম ও গোল্ডেন সনের শেয়ার।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/729786