২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ৩:৩৬

কাদের হাতে মুরগি ও ডিমের বাজার

বাজারে মুরগির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। এক কেজি ব্রয়লার মুরগি কিনতে ভোক্তাকে এখন গুনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। বেড়েছে সোনালি মুরগির দামও। এই মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়। ডিমের বাজার কয়েক মাস ধরেই অস্থির। প্রতি ডজন ডিমের দাম বর্তমানে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এতে স্বল্প আয়ের মানুষ প্রাণিজ আমিষের সবচেয়ে সস্তা উৎসের নাগাল পাচ্ছে না।

ডিম ও মুরগির দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ার জন্য দু’টি কারণ বলছেন ব্যবসায়ীরা। একটি হলো- মুরগির খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি। আর অন্যটি হলো- মুরগির বাচ্চা ও খাদ্য উৎপাদনকারী করপোরেট কোম্পানিগুলোর প্রভাবে প্রান্তিক পর্যায়ের খামার বন্ধ হয়ে যাওয়া।

মুরগি ও ডিমের মূল্যবৃদ্ধির জন্য বড় খামারি মালিকদের দায়ী করে ক্ষুদ্র খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার মানবজমিনকে বলেন, করপোরেট কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছাচারিতায় ডিম ও মুরগির বাজার অস্থির হয়ে পড়েছে। প্রান্তিক খামার ও করপোরেটদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খামারের উৎপাদন খরচই বাজার পরিস্থিতি বদলে দেয়।

তিনি বলেন, প্রান্তিক খামারিকে ৫০ কেজির এক বস্তা পোল্ট্রি ফিড কিনতে ৩ হাজার ৬৫০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে করপোরেটদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ খামারিকে ৫০ কেজির এক বস্তা পোল্ট্রি ফিডের জন্য ২ হাজার ৬০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আর একদিনের মুরগির বাচ্চা চুক্তিবদ্ধ খামারির কাছে ৩৫ টাকায় বিক্রি করা হলেও প্রান্তিক খামারির কাছে ৬০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো ভালোমানের মুরগির বাচ্চা ও ফিড চুক্তিবন্ধ খামারগুলোতে সরবরাহ করে। অন্যদিকে প্রান্তিক খামারিদের কাছে নি¤œমানের মুরগির বাচ্চা ও ফিড সরবরাহ করা হচ্ছে। যার কারণে প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোনো উপায় না পেয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের কিছু খামারি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। আবার কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর খামার বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে মুরগি ও ডিমের বাজার করপোরেটের দখলে চলে যাচ্ছে। তারা শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ছাড়া পোল্ট্রির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি খাদ্যের দামের কথাও জানান।

ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে আফতাব বহুমুখী ফার্মস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির প্রভাব থেকেও বের হতে পারছে না দেশীয় উদ্যোক্তারা। এর সঙ্গে ডলারের কারণে অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে পোল্ট্রি উপকরণ আমদানি করতে হচ্ছে। পোল্ট্রি শিল্প চাহিদার প্রায় ৫০ শতাংশ ভুট্টা ও ৯০ শতাংশ সয়াবিন আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হয়। কিন্তু সেসব আমদানি ব্যয় নানা কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঁচামাল আমদানির জন্য জাহাজ ভাড়াও ব্যাপক হারে বেড়েছে। সেই তুলনায় পশুখাদ্যের দাম বাজারে বৃদ্ধি পায়নি। এতে গত দুই মাসের ব্যবধানে দেশের অনেক কোম্পানি পশুখাদ্য উৎপাদন ছেড়ে দিয়েছে।

প্রান্তিক পর্যায়ের খামারি ঢালি আবু হানিফ বলেন, আগে ৫০ কেজির এক বস্তা খাদ্যের দাম ছিল ১৫০০ টাকা। এখন বেড়ে তা ৩০০০ টাকা হয়েছে। দেড় হাজার টাকায় খাদ্য কিনলে একটি ডিম উৎপাদনে খরচ পড়তো ৬ টাকা। ফলে তিন হাজার টাকা দিয়ে খাদ্য কেনার কারণে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, খাদ্য ও অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ডিমের উৎপাদন অনেক কমেছে। আগে যেখানে প্রতি মাসে ১৫ লাখ ডিম উৎপাদন করতাম, এখন কমে সেটি ৬ লাখে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না বলে জানান এই খামারি।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মহসিন মানবজমিনকে বলেন, পোল্ট্রি উপকরণের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ছোট খামারিরা উৎপাদন খরচ পোষাতে পারছে না। দুই মাস ধরেই ক্ষুদ্র ও ছোট খামার বন্ধ হচ্ছে। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে সামনে আরও খামার বন্ধ হবে। খামারিদের রক্ষা করতে হলে পশুখাদ্য ও উপকরণের দাম সহনীয় মাত্রায় আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

https://mzamin.com/news.php?news=43796