২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ৩:৩০

১৪ দিনে হজযাত্রী নিবন্ধন হয়েছে মাত্র সাত শতাংশ

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে এবার পূর্ণ কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন। এ জন্য গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হজযাত্রীদের চূড়ান্ত নিবন্ধন শুরু হয়েছে। শেষ হবে আগামীকাল ২৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু গত ১৪ দিনে মাত্র ৮ হাজার ৮২৭ জন নিবন্ধন করেছেন। অর্থাৎ মোট হজযাত্রীর মাত্র সাত শতাংশ নিবন্ধন হয়েছে। এ দিকে এবার হজ পালনে চারটি শর্ত দিয়েছে সৌদি আরব। শর্তগুলো জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে দেশটি।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি বছরের ২৭ জুন (৯ জিলহজ) পবিত্র হজ পালিত হবে। করোনার কারণে দুই বছর হজে যেতে পারেনি বাংলাদেশীরা। গত বছর কোটার অর্ধেকেরও কম ৬০ হাজার হজে যাওয়ার সুযোগ পান। এ বছর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় পূর্ণ কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পাচ্ছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেতে পারবেন ১৫ হাজার। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ এজেন্সির মাধ্যমে যেতে পারবেন এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন। কোনো ব্যক্তিকে হজে যেতে এখন প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধন দু’টি ধাপ পার হতে হয়। প্রাক-নিবন্ধন সারা বছরই চলে। ৩০ হাজার টাকা দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন করা যায়। হজের আগে প্রাক-নিবন্ধিত ব্যক্তিকে চূড়ান্ত নিবন্ধন করতে হয়। এ বছর ইতোমধ্যে সৌদির সাথে বাংলাদেশের হজচুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। হজে সৌদি অংশে যে খরচ রয়েছে তাও জানিয়ে দিয়েছে সৌদি।

হজের পাঁচ দিনে মিনা, আরাফাহ ও মুজদালিফায় মোয়াল্লেমের সেবার ভিত্তিতে চারটি ক্যাটাগরি করা হয়েছে। সর্বনিম্ন ডি ক্যাটাগরির জন্য পাঁচ দিনে খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার ১৩০ টাকা, সি ক্যাটাগরির জন্য এক লাখ ৬০ হাজার ৬৩০ টাকা, বি ক্যাটাগরির জন্য খরচ হবে দুই লাখ ২৪ হাজার ৬২১ টাকা এবং এ ক্যাটাগরির জন্য খরচ ধরা হয়েছে দুই লাখ ৯০ হাজার ৯৩০ টাকা। এ বছর আগেভাগেই হজের কার্যক্রম শুরু করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। গত ১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে খরচের প্যাকেজ ঘোষণা করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। তিনি জানান, এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে একটি মাত্র প্যাকেজে খরচ হবে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা। এর সাথে কোরবানির খরচ ২৮ হাজার ৩৯০ টাকা যুক্ত হবে। যাতে হজযাত্রীরা সি ক্যাটাগরির সুবিধা পাবেন। গত বছরের তুলনায় এবার খরচ বেড়েছে এক লাখ ৭০ হাজার ৫৭২ টাকা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে সর্বনিম্ন খরচ ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা ঘোষণা করেছে বেসরকারি এজেন্সি মালিকদের সংগঠন হাব। এ বছর চূড়ান্ত নিবন্ধনও শুরু হয়েছে আগেভাগেই। গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে হজের নিবন্ধন শুরু হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় জানিয়েছে আগামীকাল ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ নিবন্ধন চলবে। কিন্তু গতকাল একুশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত ১৪ দিনে মাত্র আট হাজার ৮২৭ জন নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পাঁচ হাজার ছয় জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় করেছেন মাত্র তিন হাজার ৭২১ জন। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে প্রাক-নিবন্ধন করে হজের অপেক্ষায় রয়েছেন আরো দুই লাখ ৬৬ হাজার ৭২ জন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ১০ হাজার ৫৬১ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন দুই লাখ ৫৫ হাজার ৫১১ জন।

কী কারণে হজ নিবন্ধন এত কম হয়েছে সে প্রসঙ্গে বেসরকারি এজেন্সি আল নাফি ট্র্যাভেলসের মালিক নাজিম উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার এজেন্সির মাধ্যমে ১৩৭ জন প্রাক-নিবন্ধিত রয়েছেন। তবে গতকাল পর্যন্ত মাত্র ১৫ জন চূড়ান্ত নিবন্ধন করেছেন। তিনি বলেন, হজের খরচ বেড়ে যাওয়ায় মানুষের জন্য ব্যয় মেটানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এজন্য যারা প্রাক-নিবন্ধন করেছেন তাদের অনেকেই এত টাকা খরচ করে হজে যেতে চাচ্ছেন না। তারা এখন ওমরাহ পালনে যেতে চাচ্ছেন। এ কারণে এখন ওমরাহ যাত্রী অনেক বেড়ে গেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওমরায় যেতেও মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিমান ভাড়া সিন্ডিকেট করে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। এয়ারলাইন্সগুলো বিমান টিকিটের দাম ৭৫ হাজার টাকা রাখলেও টিকিট তাদের কাছ থেকে সরাসরি পাওয়া যাচ্ছে না। সিন্ডিকেটের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি দিয়ে ৯৫ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই।

আটাবের উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম মাহমুদ ভূঁইয়া মানিক নয়া দিগন্তকে বলেন, গত বছর হজে বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু এ বছর বিমান ভাড়া প্রায় দুই লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া সৌদির মোয়াল্লেম ফিও বেশি ধরা হয়েছে। সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দরকষাকষি করা হয়নি। যার দায়ভার পোহাতে হচ্ছে হজযাত্রীদের। এ জন্য আটাবের পক্ষ আমরা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। বিমানভাড়াসহ সব খরচ কমানোর জন্য। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সাথে বৈঠক করার জন্যও একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, খরচ যদি কমানো না হয় তাহলে এবার ৫০ হাজার হজযাত্রীও পাওয়া যাবে না।

হজ পালনে চার শর্ত সৌদির : এবার হজ পালনে চারটি শর্ত দিয়েছে সৌদি আরব। শর্তগুলো জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে দেশটি। সোমবার শর্তগুলো প্রকাশ করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সৌদি আরবের দেয়া শর্তগুলো হলো-১. করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯), মেনিনজাইটিস ও সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দিতে হবে। ২. যারা আগে হজ করেননি এবারের হজে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ৩. হজ পালনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স হতে হবে ১২ বছর। ৪. হজযাত্রীর কোনো দীর্ঘস্থায়ী জটিল রোগ থাকা যাবে না।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/729543