২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার, ৩:৩০

হাতবদলেই বাড়ছে দাম

তেতো করলা এখন দামেও বেশ তেতো। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গতকাল সোমবার এই সবজি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর আগে কখনো এত দামে তাঁরা করলা বিক্রি করেননি।

কাঁচাবাজারের আরেক নিত্যপণ্য কাঁচা মরিচের দামে কয়েক দিন ধরেই বেশ ঝাল। পটোলের দামও প্রতি কেজি ১০০ টাকা পেরিয়েছে। সবজির বাজারে অস্বাভাবিক এই মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবসায়ীরা পরস্পরকে দোষারোপ করছেন। তাঁরা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে হাতবদলেই বাড়ছে দাম।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে সবজির সরবরাহ কমছে। এতে বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে প্রায় সব ধরনের সবজি। দেশের সবজিভাণ্ডার বলে পরিচিত বগুড়া ও যশোরের পাইকারি বাজারে এখন সবজির সরবরাহ কিছুটা কম। ঢাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হওয়া সবজির বড় একটি অংশই এই দুটি পাইকারি বাজার থেকে আসে।

বগুড়ার পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি করলা ৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজারে এটি প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি করলার দাম মানভেদে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। এখন মৌসুম নয় বলে যশোরের পাইকারি বাজারে করলার সরবরাহ নেই। বগুড়া ও যশোরে পাইকারি বাজারে পটোল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, ঢাকায় খুচরা বাজারে এটি ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ দুটি পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি শিম মানভেদে ১০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, রাজধানীতে এসে তা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে

৫০ টাকায়। পাকা টমেটো পাইকারিতে ১২ থেকে ১৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও ঢাকার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।
বগুড়া ও যশোরে পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচ ৯৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে তা ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার, জোয়ারসাহারা, বগুড়ার মহাস্থান হাট এবং যশোরের চূড়ামনকাটি হাটের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সবজির দামের এই উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা খুচরা ব্যবসায়ীদের দুষছেন। তাঁদের অভিযোগ, কয়েক হাত ঘুরে সবজি বেচাকেনার কারণে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দামের অস্বাভাবিক তারতম্য ঘটে। নানা ছুতায় বাড়ানো হয় সবজির দাম। এ কারণে ভোগান্তিতে পড়ে ভোক্তারা, দাম কম পান কৃষকরা, কিন্তু লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা।

রাজধানীর বাজার : কারওয়ান বাজার ও জোয়ারসাহারা বাজারের সবজি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করলা ও পটোল মূলত শীত মৌসুমের সবজি না হওয়ায় এগুলোর দাম এখন বেড়ে গেছে। এগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে অন্যান্য শীতের সবজির দামও তুলনামূলক কিছুটা বেড়েছে। বেগুন ৫০ থেকে ৭০ টাকা, পাকা টমেটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, পটোল ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস লাউ আকারভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, লেবু মান ও আকারভেদে ৩০ থেকে ৬০ টাকা হালি এবং কাঁচা মরিচ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম সে অনুযায়ী বাড়েনি।

কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মো. সোহেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে এখন প্রায় সব ধরনের সবজির দাম বাড়তি। এখন করলার মৌসুম নয়, তাই এটির দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে করলার দাম কেজিতে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।’

মনিরা পারভীন নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘এখন প্রতি সপ্তাহেই বাজারে সবজির দাম বাড়ছে। গত সপ্তাহে যে সবজি ৪০ টাকায় কিনেছি, সেটি এখন ৬০ টাকায় কিনতে হয়েছে।’

চট্টগ্রামের বাজার : চট্টগ্রাম নগরের কাঁচা তরিতরকারির পাইকারি ও খুচরা বিক্রির অন্যতম প্রধান রেয়াজউদ্দিন বাজার। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে তিনপোল এলাকা দিয়ে বাজারের প্রবেশমুখে একটি সবজির দোকান থেকে পটোল কিনতে যান এক ক্রেতা। দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা বলেন পটোল প্রতি কেজি ১২০ টাকা। এ সময় ওই ব্যক্তি বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমি ৯০ থেকে ১০০ টাকায় কিনেছি।’ তখন দোকানদার বলেন, এ সপ্তাহে দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে।

আরেকটি দোকানে গেলে দেখা যায়, কাঁচা মরিচের কেজি ১২০ টাকা; দেশি লেবু বড় আকৃতির জোড়া ৩০ টাকা, মাঝারি ২৫ টাকা ও ছোট ২০ টাকা; ঝিঙা প্রতি কেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নগরের প্রধান তিনটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি শীতকালীন সবজি মুলা ৫০ থেকে ৬০, বরবটি ৬০ থেকে ৯০, বেগুন ৩০ থেকে ৫০, টমেটো ৩০ থেকে ৪০, বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৪০, ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০, শসা ৫০ থেকে ৬০, বড় আলু ৩০, দেশি আলু ৫৫ থেকে ৭০, মিষ্টিকুমড়া ৫০ থেকে ৬০, ঢেঁড়স ৯০ থেকে ১০০, ঝিঙা ১৩০ থেকে ১৪০, শজনে ডাঁটা ১৬০, কচুর লতি ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের আঁটি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বগুড়ার বাজার : বগুড়ায় সবজির সবচেয়ে বড় বাজার খ্যাত মহাস্থান হাটে কৃষকরা পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে যে দামে সবজি বিক্রি করেছেন, তার চেয়ে মণে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হয়েছে শহরের আড়তগুলোতে।

গতকাল মহাস্থান হাট ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা তাঁদের জমিতে উৎপন্ন করলা প্রতি মণ তিন হাজার ৭০০ থেকে তিন হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন। পটোল বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা মণ, কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে তিন হাজার ৮০০ টাকা মণ, শিম প্রকারভেদে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা মণ, বেগুন প্রকারভেদে এক হাজার ৩৫০ থেকে এক হাজার ৪৫০ টাকা মণ, টমেটো ৭০০ টাকা মণ, আলু পাকরি জাতের ৭০০ টাকা, কার্ডিনাল ৫০০ টাকা এবং রোমেনা ৬০০ টাকা মণ।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতলুবুর রহমান বলেন, বগুড়ায় চলতি মৌসুমে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। এখন ফসলের যে দাম কৃষকরা পাচ্ছেন, তা উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রয়েছে। ভালো দাম পেলেই কৃষকরা চাষাবাদে উৎসাহী হবেন।

যশোরের বাজার : গতকাল যশোরের চূড়ামনকাটি সবজির হাটে পাইকারিতে বেগুন মানভেদে কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ কেজি ১১০ টাকা, শিম জাত ও মানভেদে কেজি ১০ থেকে ২০ টাকা, পাকা টমেটো কেজি ১২ থেকে ১৩ টাকা, পাইকারি বাজারে এখন করলা নেই, উচ্ছে কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পটোল ৬০ টাকা, লেবু ২৫ থেকে ৩০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/02/21/1254072