২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ১১:০৫

চূড়ান্তভাবে বন্ধ হলো দিনকালের প্রকাশনা

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা : ফখরুল

 আবারো বন্ধ হয়ে গেল দৈনিক দিনকাল। প্রেস কাউন্সিল গতকাল দিনকালের আপিল খারিজ করে দেয়ায় পত্রিকাটি আর প্রকাশিত হচ্ছে না। এর আগে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দিনকালের ডিক্লারেশন বাতিল আদেশ দিয়েছিলেন। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। নেতারা এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন।

গত ২৬ ডিসেম্বর দৈনিক দিনকালের ডিক্লারেশন ও পত্রিকা মুদ্রণের ঘোষণাপত্র বাতিল করেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)। দৈনিক দিনকালের পক্ষ থেকে পত্রিকাটির ডিক্লারেশন ও মুদ্রণ বাতিলের আদেশের স্থগিতাদেশ চেয়ে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে আবেদন করলে গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত ছিল। গতকাল বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলও পত্রিকাটির আপিল খারিজ করে দিয়েছে।

মির্জা ফখরুলের নিন্দা : দৈনিক দিনকাল পত্রিকার ডিক্লারেশন ও মুদ্রণের ঘোষণাপত্র বাতিল করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা জ্ঞাপন করেন তিনি।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে গণমাধ্যমের যেকোনো স্বাধীনতা নেই, তা আবারো প্রমাণিত হলো। দৈনিক দিনকাল পত্রিকাটি দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলের মুখপাত্র হিসেবে ভূমিকা রাখছিল। বিরোধী দলের একমাত্র পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিল সরকারের চরম হিংসা চরিতার্থ করার বহিঃপ্রকাশ। সরকারের অগণতান্ত্রিক, গণবিরোধী কর্মকাণ্ড, চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার, চরম দলীয়করণ, নির্বাচনের নামে প্রহসন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, দফায় দফায় গ্যাস-বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তি, বিরোধী দলের ওপর দমন-নিপীড়ন, হত্যা, গুম, খুন, প্রহসনের সত্য সংবাদ দ্বিধাহীনভাবে প্রকাশ করায় দৈনিক দিনকাল সরকারের চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।

তিনি বলেন, লাখ লাখ মানুষের কণ্ঠস্বর দৈনিক দিনকাল বন্ধের ফলে পত্রিকাটিতে কর্মরত হাজারো সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী বেকার হয়ে পড়বে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সরকারের নির্দেশে জেলা প্রশাসক পত্রিকাটির ডিক্লারেশন বাতিল করেছেন এবং বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলও পত্রিকাটির আপিল খারিজ করে দিয়েছে। এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত।

তিনি বলেন, বর্তমান দুঃসময়ে সব গণমাধ্যমের কর্মীদের শঙ্কা ও ভয়ের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের চরমভাবে নিগৃহীত করা হচ্ছে। একই সাথে সরকারের সমালোচনা করায় বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন। আমি দৈনিক দিনকাল পত্রিকা বন্ধের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে পত্রিকাটির ডিক্লারেশন ও মুদ্রণের ঘোষণাপত্র বাতিলের আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

শ্রমিক কর্মচারীদের স্বার্থে পত্রিকা চালুর দাবি : শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বার্থে দ্রুত দিনকাল চালু করে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। নয়া দিগন্তকে তিনি বলেন, সরকার বিভিন্ন অনলাইন ও পত্রিকা বন্ধের ধারাবাহিকতায় ছোটখাটো ত্রুটি ধরে দিনকাল বন্ধ করে দিয়েছে। এটা সংবাদপত্র দলন ও স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। সরকারের উচিত শ্রমিক-কর্মচারীদের রুটি-রুজির স্বার্থে অবিলম্বে প্রতিবন্ধকতা দূর করে পত্রিকাটি চালুর সুযোগ দেয়া।

বিএফইউজে-ডিইউজের প্রতিবাদ : দিনকাল পত্রিকার প্রকাশনার পথ রুদ্ধ করে দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। নেতৃবৃন্দ এ ঘটনাকে বিরোধী মত দমনের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ অভিহিত করে অবিলম্বে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।

বিএফইউজে সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নূরুল আমিন রোকন এবং ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো: শহিদুল ইসলাম গতকাল এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, সাংবাদিকদের আশঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করে দৈনিক দিনকালের আপিল খারিজ করে দিয়েছে প্রেস কাউন্সিল। রোববার সকালে এক আদেশে খারিজ করা হয়। ফলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক দিনকালের ডিক্লারেশন বাতিল আদেশ বহাল থাকল। বন্ধ হয়ে গেল দিনকালের প্রকাশনা। এর মধ্যে দিয়ে সরকারের তল্পিবাহক হিসেবে প্রেস কাউন্সিলের চরিত্র উন্মোচন হয়েছে।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রেস কাউন্সিল তাদের আদেশে সাংবাদিক ও কর্মীদের চাকরি বহাল এবং বেতনভাতা প্রদান অব্যাহত রাখার আদেশ দিয়েছে। আইন মেনে পত্রিকা চালাতে বলেছে। অথচ আইন মানছে না জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। প্রকাশ পরিবর্তনের আবেদন ঝুলিয়ে রেখে সেই অজুহাতে ডিক্লারেশন বাতিল করে। নেতৃবৃন্দ বলেন, একটি পত্রিকা চালু না থাকলে বহুসংখ্যক সাংবাদিক-কর্মচারী বেকার হয়ে যাবে। বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্থায় এটি বেকার পরিবারের জন্য বজ্রাঘাতের শামিল। তা ছাড়া বিভিন্ন কালাকানুন প্রত্যাহার এবং বাকস্বাধীনতার দাবিতে সাংবাদিকদের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করতেই এ অপকৌশল নেয়া হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
প্রতিবাদ সমাবেশ আজ : দৈনিক দিনকালের প্রকাশনা বন্ধের প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে পত্রিকা প্রকাশনা অব্যাহত রাখার দাবিতে আজ সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশ সফল করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নেতারা।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/729133