২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ১১:০৩

খেলাপির অপেক্ষায় আরো ৪২ হাজার কোটি টাকা

২০২২ সালে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা

আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণ ৮৯ শতাংশ

 বিদায়ী বছরে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। আগের বছরে যা ছিল এক লাখ তিন হাজার ২৭৩ হাজার কোটি টাকা। এ খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ সাত হাজার কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৮৯ শতাংশ। খেলাপি ঋণের অপেক্ষায় রয়েছে আরো ৪২ হাজার কোটি টাকা। এসব ঋণ খেলাপি ঋণের পূর্বস্তরে রয়েছে। যাকে ব্যাংকিং ভাষায় এসএমএ বা স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট বলে। দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের তথ্য নিয়ে তৈরি বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ঋণ আদায়ে নানা ছাড় দেয়া হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বিদায়ী বছরেও নানাভাবে ছাড় দেয়া হয়। বছরের শেষ দিকে এসে এক ব্যাংকের আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণ অন্য ব্যাংক কিনে নিয়ে ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ দেয়া হয়। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের বহুল আলোচিত ক্রিসেন্টের প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ ইসলামী ব্যাংক কিনে নেয়। আপাতত এসব ঋণ নিয়মিত হয়ে খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে কমে গেলেও কিছু দিনের মধ্যেই কিস্তি পরিশোধ না হলে আবারো তা খেলাপি হয়ে যাবে। আবার ঋণ অবলোপনেও ছাড় দেয়া হয়। আগে যেখানে আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণ আদায়ে মামলা করতে বাধ্য করা হতো। কিন্তু এখন মামলা ছাড়াই আদায় অযোগ্য একটি নির্ধারিত অঙ্কের খেলাপি ঋণ অবলোপনের সুযোগ দেয়া হয়। এর ফলে এসব ঋণ মামলা না করেই অবলোপন করা হয়। আর অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ খেলাপি ঋণের হিসাবে দেখানো হয় না। আলাদা হিসাবে রাখা হয়। সবমিলেই খেলাপি ঋণ যে হারে বাড়ার কথা সেই হারে বাড়ছে না। অর্থাৎ প্রকৃত খেলাপি ঋণ প্রদর্শিত হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের স্থিতি ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। এ খেলাপি ঋণ মোট ঋণের ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। অথচ ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণ ছিল ১৩ লাখ এক হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ তিন হাজার ২৭৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।

এ দিকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে মন্দ ঋণের পরিমাণ। এ আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে ঝুঁকির পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, এক লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে আদায় অযোগ্য মন্দ ঋণ বেড়ে হয়েছে প্রায় এক লাখ সাত হাজার কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৮৯ শতাংশ।
এ দিকে খেলাপি ঋণের আগের স্তরে রয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকার ঋণ। এসব ঋণ ব্যাংকিং ভাষায় এসএমএ বলা হয়। এসব ঋণের কিস্তি আদায় না হলে শিগগিরই এসব ঋণ খেলাপি হয়ে যাবে।

মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতিও বেড়ে যাচ্ছে। সাধারণ গ্রাহকের আমানত সুরক্ষা রাখতে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের প্রকারভেদে ২০ শতাংশ থেকে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। আর এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকগুলোর আয় থেকে অর্থ নিয়ে। কিন্তু ডিসেম্বর শেষে ৮ ব্যাংক তাদের আয় দিয়ে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ৮ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তিন ব্যাংকেরই প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা। প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে ঝুঁকির পরিমাণ।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/729138