২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, সোমবার, ১১:০২

গরমেও কাটছে না গ্যাস সঙ্কট

শীত এলেই রাজধানীর টিকাটুলি কে এম দাস লেনে গ্যাস সঙ্কট শুরু হয়। গ্রীষ্মের আগেই সঙ্কট কেটে যায়। কিন্তু এবার গরম পড়া শুরু হলেও গ্যাস সঙ্কট কাটছে না। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

শুধু ওই এলাকায় নয়, একইভাবে মুগদা, মাণ্ডাসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন থেকে গ্যাস সঙ্কটে ভুগছেন। মাঝখানে বকেয়া বিল সংগ্রহে গিয়ে মাণ্ডায় তিতাস গ্যাসের স্থানীয় কর্মকর্তারা এলাকাবাসীর জনরোষের মুখে পড়েন। এরপর কয়েক মাস মাণ্ডা ও মুগদা এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তিতাস কর্তৃপক্ষ। নানা তদবিরের পর গত ডিসেম্বরে অল্প পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ করলেও এখন আবার একই অবস্থা। তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো: হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ জানিয়েছেন, আপাতত গ্যাস সঙ্কট কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। গ্যাসের নতুন সরবরাহ না বাড়লে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না বলেও তিনি জানান।

রাজধানীতে দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাস সঙ্কট চলছে। গত শীতে গ্যাস সঙ্কটে বেশির ভাগ পরিবারকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তিতাসের সরবরাহ করা লাইনের গ্যাস ব্যবহার করলে গ্রাহকদের এক চুলার জন্য প্রতি মাসে ৯৯০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ১০৮০ টাকা বিল দিতে হয়। বর্তমানে বাসাবাড়িতে গ্যাস লাইন দেয়া বন্ধ রয়েছে। এ কারণে অনেক নতুন বাড়িতে বেসরকারি এলপিজি গ্যাস কিনে রান্নার কাজ সারতে হয়। কিন্তু এলপিজি গ্যাসের দাম সম্প্রতি দুই মাসের ব্যবধানে অনেক বেড়েছে। সর্বশেষ এ মাসেই ২৬৬ টাকা বাড়িয়ে ১৪৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কোম্পানিগুলো গ্যাস সঙ্কটের সুযোগ নিয়ে ক্রেতাদের গলা কাটছে। এলপিজি গ্যাস বাজারে ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে গ্রাহকদের কাছ থেকে। ফলে জনভোগান্তির যেন শেষ নেই। বাসাবাড়ির গ্যাস কিছুটা কম দামে মিললেও তাতে সস্তার নানা অবস্থার মতো হয়ে গেছে। সরকারি গ্যাস যেন সোনার হরিণ হয়ে গেছে। গভীর রাতে মানুষ ঘুমিয়ে পড়ার পর লাইনে গ্যাস আসে। আর ভোরে ঘুম থেকে উটতে না উঠতেই লাইন থেকে গ্যাস উধাও।

টিকাটুলির কে এম দাস লেনের বাসিন্দা সৈয়দা ফারহানা নয়া দিগন্তকে বলেন, গত তিন-চার বছর ধরে গ্যাস সঙ্কট চলছে। বিশেষ করে শীতের সময় বেশি সঙ্কট হয়। গরমকাল আসলে কিছুটা কমে। কিন্তু এবার শীতকালে সঙ্কট শুরু হওয়ার পর এখনো অব্যাহত রয়েছে। সকাল ৭টার দিকে গ্যাস চলে যায়। এরপর বেলা ৩টায় কিছুটা আসে। সন্ধ্যার পর আবার চাপ কমে যায়। রাত ১২টার পর আবার স্বাভাবিক হয় গ্যাস সরবরাহ। এতে বাচ্চাদের খাবার নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন এ গৃহবধূ।
মুগদার মদিনাবাগের বাসিন্দা মো: রাজু বলেন, গ্যাস সঙ্কট তো আছেই সম্প্রতি ওই এলাকায় ওয়াসা পানির নতুন লাইন স্থাপন করেছে। এরপর থেকে গ্যাসের লাইন দিয়েও পানি পড়ছে। আর সারাদিন গ্যাস থাকে না। রাত সাড়ে ১১টার পর গ্যাস আসা শুরু হয়। এতে রাত জেগে বাড়ির মহিলাদের রান্না করতে হয়।

দক্ষিণ মুগদার ব্যাংক কলোনির বাসিন্দা, শাহাবুদ্দিন-আছিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আহমেদুল কবির জাকির নয়া দিগন্তকে বলেন, এ এলাকায় গ্যাস সঙ্কট অনেক দিন ধরে। গত সেপ্টেম্বর মাসে মাণ্ডা এলাকার একটি ঘটনার কারণে তাদেরসহ মুগদা এলাকার গ্যাস লাইনও বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। সে সময় আমরা অনেক তদবির করলে গত ডিসেম্বরে ফের গ্যাস সরবরাহ কিছুটা বাড়তে থাকে। কিন্তু এখন আবার আগের মতোই সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এলাকায় প্রভাবশালী কোনো লোক না থাকায় গ্যাস সঙ্কট নিয়ে কথা বলারও কেউ নেই। এ কারণে আমাদের প্রতিনিয়ত ভুগতে হচ্ছে। কবে এ সঙ্কট থেকে মুক্তি পাব তা বুঝতে পারছি না। তিনি বলেন, গ্যাস সঙ্কট থাকলেও তিতাস কর্তৃপক্ষ ঠিকই জনগণের কাছ থেকে বিল নিয়ে যাচ্ছে। এটা জনগণের ওপর একটা জুলুম। এলাকাবাসী এ জুলুম থেকে মুক্তি চায়।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো: হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ এ প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, অনেক দিন ধরেই গ্যাস সঙ্কট রয়েছে। খুব দ্রুতই এ সঙ্কট কাটছে না। বাইরে থেকে গ্যাস আমদানির চেষ্টা চলছে। গ্যাস না আসা পর্যন্ত সঙ্কট থাকবে বলেও তিনি জানান।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/729142