১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ১১:০৭

দেশী উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগ বাড়ছে

তদারকি জোরদার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

 বিদেশে বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে বিদেশে বিনিয়োগ করেছে প্রায় দেড় ডজন দেশীয় প্রতিষ্ঠান। অনুমোদন নিয়ে এখনো বিনিয়োগ করা হয়নি এবং অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে এমন আরো প্রায় আধাডজন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ডলার সঙ্কটের চাপে পড়ে যাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ওপর তদারকি জোরদার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগ করেছে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণসহ সবশেষ হালনাগাদ তথ্য প্রতি তিন মাসের পরবর্তী ২০ দিনের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন করে এমন ব্যাংকগুলোতে (এডি ব্যাংক) দাখিল করার নিদের্শনা দিয়ে সার্কুলার জারি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এই সার্কুলার জরি করা হয়। আগে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে হতো তিন মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে। একই সাথে যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে অর্থাৎ প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকেও অনুরূপ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, চলমান ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য সীমিত পরিসরে বিদেশে বিনিয়োগের জন্য অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে প্রায় ১৮টি প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগ করেছে। এর মধ্যে স্কয়ার ফার্মা কেনিয়ায় ওষুধ কারখানা স্থাপন করেছে। ফিলিপাইনেও অনুরূপ বিনিয়োগের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছে। তবে এখনো বিনিয়োগ করা হয়নি। মবিল যমুনা, সিঙ্গাপুরে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, আকিজ, মালয়েশিয়ার পারটেক্সে বিনিয়োগ করেছে। বেক্সিমকো ফার্মা, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় ওষুধ কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু এরই মধ্যে সৌদি আরবে তাদের কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি শ্রীলঙ্কায়ও বিনিয়োগের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছিল; কিন্তু এখনো বিনিয়োগ করেনি। এমবিএম গার্মেন্টস, সিংগাপুরে মার্কেটিং করার জন্য বিনিয়োগ করেছে। প্রাণ গ্রুপ, ভারতে ভোগ্যপণ্য প্রসেসিং কারখানা স্থাপনের জন্য বিনিয়োগ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করে। এরই মধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ডিবিএল, ইনসেপ্টাসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগ করেছে। অপরদিকে বসুন্ধরা গ্রুপ আরব আমিরাতের দুবাইয়ে এবং আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের অনুমোদন চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, ডলার সঙ্কটের কারণে প্রয়োজনীয় এলসি খুলতে পারছে না শিল্প উদ্যোক্তারা। এরই মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেছে। যদিও আইএমএফের হিসেবে তা ২৪ বিলিয়নের ঘরে, গত বছরে যা ছিল প্রায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার। এরই মধ্যে বাকিতে পণ্য আনার পরিমাণ বেড়ে গেছে। অনেক ব্যাংক ডলার সঙ্কটের কারণে পণ্য আমদানির দায় পরিশোধের জন্য বিদেশী সরবরাহকারীদের কাছ থেকে বারবার সময় নিচ্ছে। এতে বকেয়া চার্জ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দেশের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ওপর তদারকি জোরদার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ জানুয়ারিও বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন হয় এমন প্রতিষ্ঠানের ওপর তদারকি জোরদার করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশ থেকে বেসরকারি খাতে ঋণ বেড়ে যাচ্ছে অস্বাভাবিক হারে। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এ ঋণ ২৯ শতাংশ বেড়ে দুই হাজার ৬০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি ঋণই বেশি। এসব ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়ে গেছে। একে তো বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমছে, এর ওপর বেসরকারি খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সঙ্কট বেড়ে যাচ্ছে। এমনি পরিস্থিতি বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণের লাগাম টেনে ধরতে তদারকি জোরদার করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। এখন মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ তথ্য তিন মাস অন্তে ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগে এ তথ্য দিতে ব্যাংকগুলো এক মাস সময় পেতো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মূলত, বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ তদারকি বাড়ানো ও কী ধরনের পরিশোধের দায় আছে তা দেখতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

 

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/728903