১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ১১:০৫

সরকারের বিদেশী ঋণ বেড়েই চলেছে, কমছে বেসরকারি

সরকারের বিভিন্ন খাতের বিদেশী ঋণ বেড়েই চলেছে। অন্য দিকে কমছে বেসরকারি খাতের বিদেশী ঋণ। গত সাড়ে সাত বছরে বাংলাদেশের সার্বিক বিদেশী ঋণ ১২৮ শতাংশ বেড়ে ৯৩.৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছর পর্যন্ত পুঞ্জীভূত বিদেশী ঋণ ছিল ৪১.১৭ বিলিয়ন ডলার। আর পরবর্তী সাড়ে সাত বছরে বিদেশী ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৫২ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুসারে বিগত অর্থবছর পর্যন্ত বিদেশী ঋণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিসেম্বর ’২২ নাগাদ পূর্ববর্তী ছয় মাসে সার্বিক বিদেশী ঋণ কিছুটা কমে ৯৩.৭৯ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়ায়। তবে মূলত বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণ কমার কারণে সার্বিক বিদেশী ঋণ কিছুটা কমে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, জিডিপির প্রবৃদ্ধির চেয়েও বেশি হারে বিদেশী ঋণ বেড়ে যাওয়ায় জিডিপি বিদেশী ঋণ অনুপাত গত সাড়ে সাত বছরে অনেক বেড়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই অনুপাত ছিল ১৫.৫ শতাংশ। আর ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০.৫ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের চলতি হিসাবে প্রাপ্তির তুলনায়ও বৈদেশিক ঋণের অনুপাত ২০১৬-১৭ সালে ছিল ৭৮.২ শতাংশ। বিগত অর্থবছর শেষে সেটি দাঁড়ায় ১১৬.৬ শতাংশ।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি আয়ের তুলনায় বৈদেশিক ঋণের অনুপাত ছিল ১২২.৫ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ২১৩.১ শতাংশ। বিবেচ্য সাত বছরের ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের তুলনায় স্বল্পমেয়াদি ঋণের অনুপাত ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০.৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই সাত বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু বিদেশী ঋণ ২৫৭.৪৭ ডলার থেকে বেড়ে ৪৮২.৩৫ ডলারে উন্নীত হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, সরকারি খাতের বিদেশী ঋণ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে সরকারের বিদেশী ঋণ ছিল ৬৭.২৯ বিলিয়ন ডলার যা ডিসেম্বর ’২২ শেষে ৬৯.৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের করপোরেশনের দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি দুই ধরনের ঋণই গত তিন মাসে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি ঋণ বিবেচ্য তিন মাসে ১.৭৭ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২.১১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। অন্য দিকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৮.৯৭ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৯.০৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

এ দিকে সরকার বেসরকারি খাতের বিদেশী ঋণ বৃদ্ধির রাশ টেনে ধরেছে গত ছয় মাসে। জুন ’২২ শেষে বেসরকারি খাতের বিদেশী ঋণ ছিল ২৫.৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা সেপ্টেম্বর ’২২ শেষে ২৫.৪০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ায়। ডিসেম্বর ’২২ মাস শেষে তা আরো কমে ২৪.৩০ বিলিয়ন ডলারে নামে। এ সময়ে বেসরকারি স্বল্পমেয়াদি বিদেশী ঋণ ১৭.৭৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৬.৪১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

স্বল্পমেয়াদি বেসরকারি ঋণের মধ্যে বায়ার্স ঋণ জুন ’২২ এর তুলনায় কিছুটা বেড়ে সেপ্টেম্বর ’২২ এ ১০.১৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছিল যেটি ডিসেম্বর ২২ শেষে কিছুটা কমে ৯.৫৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। আমদানির ঋণপত্র নিয়ন্ত্রণের কারণে বিবেচ্য ছয় মাসে ডেফার্ড এলসির দায় বেশ কমেছে। জুন ’২২ শেষে ডেফার্ড এলসির পাওনা ছিল ১.০১ বিলিয়ন ডলার যা ডিসেম্বর ’২২ শেষে ০.৬৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। একই সময়ে বিদেশী ব্যাংকের ব্যাক টু ব্যাক এলসির পাওনা ১.১৬ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ০.৮৯ বিলিয়ন ডলারে নামে। বেসরকারি খাতের দীর্ঘমেয়াদি দায়ও বিবেচ্য সময়কালে কমে গেছে। ছয় মাসে ৮.১৯ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে এটি ডিসেম্বর ’২২ শেষে ৭.৮৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।

সরকারি খাতে বিদেশী ঋণ বাড়লেও বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ কমার কারণে সেপ্টেম্বর ’২২ এর তুলনায় কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ডিসেম্বর ’২২ শেষে ৯৩.৭৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয় সার্বিক বিদেশী দায় দেনা; যা জুন ’২২ এর তুলনায় প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো কম।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/728910