১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শনিবার, ১২:০২

রমজানের আগেই চট্টগ্রামে পাইকারি বাজারে অস্থিরতা

নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে সিন্ডিকেট

রমজানের এক মাস বাকি থাকলেও দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীন। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও কয়েকটি অসাধু সিন্ডিকেট রমজানকে পুঁজি করে অস্থির করে তুলছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ।

রমজানে বিশেষ করে ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি ও খেজুরের চাহিদা বাড়ে দ্বিগুণেরও বেশি। মানুষের চাহিদার অতিরিক্ত পণ্য কেনার প্রবণতার সুযোগে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ব্যবসায়ীদের একটি শ্রেণি যে যার মতো নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে তোলে। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। রমজাননির্ভর বিভিন্ন পণ্যের দাম এরই মধ্যে বেড়ে গেছে। রমজান পর্যন্ত আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ভোক্তারা।

এদিকে চট্টগ্রামে ব্রয়লার মুরগির দাম অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। কেজিপ্রতি ১৪০ টাকার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২১০ থেকে ২২০ টাকায়। এছাড়া সবজির দামও আকাশচুম্বী। সরকার বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করলেও দাম কমছে না। মিলপর্যায় থেকে শুরু করে পাইকারি আড়ত ও খুচরা বাজারে চালের মজুত পর্যাপ্ত। থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বস্তা। তবু কয়েক মাস ধরে লাফিয়ে বাড়ছে সব ধরনের চালের দাম।

বিক্রেতারা জানান, নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। বাজারে রমজানে বহুল ব্যবহৃত নিত্যপণ্যের সরবরাহ বা মজুতে কোনো ঘাটতি নেই। কখনো কখনো অসাধু ব্যবসায়ীরা যোগসাজশ করে পণ্যের দাম বাড়ান। এছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে গত বছরের তুলনায় এবার রোজায় পণ্যদর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের চাল ব্যবসায়ীরা জানান, চালের ভরা মৌসুমেও কমছে না চালের দাম। মৌসুম ছাড়াও সরকারও জিটুজি আওতায় বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করেছে। তারপরও চালের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। উলটো আরও বাড়ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চট্টগ্রামে গত সপ্তাহে প্রতি বস্তা মোটা সিদ্ধ চালের দাম ছিল ২ হাজার টাকা। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ১০০ টাকা। সিদ্ধ মিনিকেটের দাম আগে ছিল ২ হাজার ৭০০ টাকা। এ সপ্তাহে তা ২ হাজার ৮০০ টাকা। গুটি স্বর্ণার দাম ছিল ২ হাজার ২০০ টাকা, এখন ২ হাজার ৩০০ টাকা। এছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে পারি সিদ্ধ জাতের চালের দাম ২ হাজার ৪৫০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৫০ টাকায়। খুচরা মোটা চাল কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না।

নগরীর কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রমজানে বহুল ব্যবহৃত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল (বোতল) ডিলার পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮৩ টাকা আর খুচরা পর্যায়ে ১৮৬ টাকা। খুচরা বাজারে পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা। পাইকারি বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ৮৭০ থেকে ৮৮০ টাকা। এছাড়া চিনি পাইকারি বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা আর খুচরা ১১৫ থেকে ১১৮ টাকা। ছোলা পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি করছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা আর খুচরা বাজারে ১১০ টাকা।

প্রতিটি ভোগ্যপণ্য কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আবার কিছু পণ্য আরও বেশি বেড়েছে। সাদা মটর ৬৫ টাকা, মটর ডাল ৭০ টাকা, মসুর ডাল (চিকন) ১৩০ টাকা, (মোটা) ৯০ টাকা এবং ভারতীয় গম বিক্রি হচ্ছে প্রতিমন ১ হাজার ৮৫০ টাকায়। অন্যদিকে সয়াবিন তেল প্রতিমন বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৬৮০ টাকা এবং পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬০০ টাকায়। চিনি প্রতিমন ৩ হাজার ৯৫০ টাকা, ভারতীয় মরিচ কেজি ৪৬৯ টাকা, হলুদ ১১০ টাকা, রসুন ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেশ কিছুদিন স্থিতিশীল থাকার পর আবারও অস্থির হয়ে উঠছে ডিমের বাজার। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে ফার্মের ডিম ডজনপ্রতি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। গত বছর আগস্ট-অক্টোবরেও ডিমের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছিল।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন মুরাদ যুগান্তরকে জানান, রমজানকেন্দ্রিক নিত্যপণ্যের দাম আগামী সপ্তাহে হয়তো আরেক দফা বাড়বে। রমজানের আগে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে নিত্যপণ্যের দাম বাড়া একটি নিয়মে পরিণত হয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দাম বাড়ার পেছনে রয়েছে কয়েকটি অসাধু সিন্ডিকেট।

সবজির বাজার দর : আকারভেদে বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩৫-৫০ টাকায়। মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০-৫০ টাকা, চাল কুমড়া পিস ৫০-৬০ টাকা। লম্বা ও গোল বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকায়। শিম ৪৫-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৭৫ টাকা, করলা ৮০-১০০ টাকা ও প্রতি কেজি আলু ২৫-২৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। স্থানভেদে বিভিন্ন বাজারে বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৮০ টাকা কেজি, চিচিঙ্গা ৫৫-৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৭০-৯০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, কচুর লতি ৫৫-৭০, ধুন্দুল ৫৫-৭০ টাকা, কাঁচামরিচ ১০০-১২০ টাকা, ধনিয়াপাতা ১২০ টাকা ও গাজর ৫০-৬০ টাকা।

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/646215