১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শনিবার, ১১:৫৭

বিদেশী ঋণে বিদ্যুতের ১৮০ কিমি সঞ্চালন লাইন

প্রকল্পের খরচ ২ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা

চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল এবং গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন নির্মাণের জন্য বিদেশ থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে। গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ ও ১৮০.৮৩ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হবে। এতে গড়ে প্রতি কিলোমিটার লাইন নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। তবে এই প্রকল্পে গাড়ি কেনা ও গাড়ি ভাড়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। কারণ সোয়া দুই কোটি টাকার গাড়ি কেনার পর আবার প্রতি মাসে দুই লাখ ৬১ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়ার ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবনাকে সংশোধন করার জন্য শিল্প ও শক্তি বিভাগ থেকে বলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের দেয়া প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার দেশের সবার কাছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুৎ সঞ্চালন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির উন্নয়ন, গবেষণা, সকল প্রয়োগ এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা ও ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের স্বপ্ন পূরণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতকে জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসমৃদ্ধ সেবার মানোন্নয়ন, হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশ এবং দেশী-বিদেশী হাইটেক শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে নির্মাণাধীন প্রযুক্তিনির্ভর স্থাপনার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য একটি ২৩০/৩৩ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্র ও ৪.৮৮ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা প্রয়োজন।

পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে ও জনগণের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ দেশব্যাপী বেশ কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে নির্মিতব্য শিল্প প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা ও অন্যান্য স্থাপনায় নির্ভরযোগ্য ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলায় একটি নতুন ২৩০/১৩২/৩৩ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্র, কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও সদর উপজেলায় দু’টি নতুন ১৩২/৩৩ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্র এবং আরো ১৭৫.৫৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা প্রয়োজন। উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় চট্টগ্রাম বিভাগের দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ওই এলাকায় বেজা কর্তৃক নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও ট্যুরিজম পার্ক এবং গাজীপুরে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার লক্ষ্যে পিজিসিবি কর্তৃক আলোচ্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে দুই হাজার ৭০৭ কোটি ৯১ লাখ ২২ হাজার টাকা। যার মধ্যে এআইআইবি থেকে ঋণ সহায়তার মাধ্যমে অর্থায়ন এক হাজার ৬৮১ কোটি ৩৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। আর বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়ন ৬১৫ কোটি ৪১ লাখ ১০ হাজার টাকা। ৪১১ কোটি ১৫ লাখ ১৮ হাজার টাকা সংস্থা নিজের অর্থায়ন। পাঁচ বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় কাজগুলো হলো, কক্সবাজার (উত্তর)-টেকনাফ ৬৫.৫৫ কিলোমিটার ১৩২ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ। দোহাজারী-কক্সবাজার ১৩২ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন হতে কক্সবাজার (উত্তর) উপকেন্দ্রে ১.৫৫ কিলোমিটার ১৩২ কেভি লাইন-ইন-লাইন-আউট নির্মাণ, ২৩০ কেভি এআইএস বে-সম্প্রসারণ দু’টি, বিদ্যমান কালিয়াকৈর উপকেন্দ্রে ২৩০ কেভি এআইএস বে-সম্প্রসারণ দু’টি। প্রকল্পের এলাকাগুলো হলো- কালিয়াকৈর, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগড়া উপজেলা।

পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগ বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সাতটি গাড়ি কেনার জন্য দুই কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। আবার ১৮০ মাস মেয়াদে তিনটি পিকআপ ভাড়া বাবদ চার কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রতি মাসে গাড়ি ভাড়া বাবদ ব্যয় দুই লাখ ৬১ হাজার টাকা। যানবাহন কেনার সংস্থান রেখে আবার ভাড়া করার প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন। এ ছাড়া জিওবি খাতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৫৩২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সম্মতি দেয়া হয়েছে। প্রকল্পে জিওবি খাতে ৬১৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এই বিষয়গুলোকে ঠিক করাসহ বেশ কিছু বিষয়ে সংশোধন করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।


https://www.dailynayadiganta.com/last-page/728649