১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার, ১২:০২

সরবরাহ ঠিক থাকলেও দাম ভোগাবে

আসন্ন রমজান মাসে বিশেষ পাঁচ নিত্যপণ্য ভোজ্য তেল, ছোলা, ডাল, চিনি ও খেজুরের সরবরাহ ঠিক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ডলারের দাম বাড়ায় গত বছরের তুলনায় এসব পণ্যের দাম ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বাড়তে পারে। এসব তথ্য জানিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, রমজানে বহুল ব্যবহৃত নিত্যপণ্যের সরবরাহ বা মজুদে ঘাটতি নেই।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুসারে, গত এক বছরের ভোজ্য তেল, চিনি, ছোলা ও ডালের দাম বাড়লেও খেজুরের দাম বাড়েনি। তবে বাজার ঘুরে খেজুরের দাম কার্টনপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি পাওয়া গেছে। গত এক সপ্তাহে এই দাম বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানান। চিনির দাম বেড়েছে ৪৮ শতাংশের বেশি।

বাজারে পণ্য সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও ঘাটতি তৈরির পেছনে ক্রেতাদের বিশেষ কোনো পণ্য কেনার ধুমকে (প্যানিক বায়িং) বেশি দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ ক্রেতাদের মধ্যে যদি এই ধারণা হয় যে নির্দিষ্ট কোনো পণ্য সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেবে, তখন ওই পণ্য কিনতে সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এতে ঘাটতি সংকটের আশঙ্কা না থাকলেও সংকট সৃষ্টি হয়।

সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের যৌক্তিক সুপারিশ আমদানিকারকরা না মানায় ভোক্তারা ঠকছে। ফলে পণ্যের ঘাটতি না থাকলেও ব্যবসায়ীদের মুনাফাবাদী মানসিকতায় ভোক্তারা ভুগছে।

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, বাজারে রমজানে বহুল ব্যবহৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বা মজুদে কোনো ঘাটতি নেই। কখনো কখনো অসাধু ব্যবসায়ীরা যোগসাজশ করে পণ্যের দাম বাড়ায়, যাতে বাজার অস্থিতিশীল হয়। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে গত বছরের তুলনায় এবারের রোজায় পণ্যদর ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, এবার রমজানে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে ভোক্তা অধিকার তার প্রচলিত কার্যক্রম ছাড়াও পণ্যের অতিরিক্ত দাম বা কারচুপি করা হলে ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির কমিটিকেও শাস্তির আওতায় আনবেন, প্রয়োজনে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, রমজানে বহুল ব্যবহৃত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল (বোতল) ডিলার পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮৩ টাকা আর খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করছে ১৮৬ টাকা। খুচরা বাজারে পাঁচ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা। পাইকারি বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ৮৭০ থেকে ৮৮০ টাকা।

এ ছাড়া চিনি পাইকারি বিক্রি হয়েছে ১০৯ টাকা আর খুচরা ১১৫ টাকা, ডাল পাইকারি ১৩২ টাকা আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। ছোলা পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি করছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা আর খুচরা বাজারে ১১০ টাকা।

শান্তিনগর বাজারের মতলব স্টোরের রফিক মিয়া বলেন, রোজায় বিক্রি হয় এমন সব পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও আমদানি কম । তিনি বলেন, ডলার সংকটের কারণে কিছু পণ্য সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে এবং বাজারে দামও বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি পণ্যের ঘাটতি তৈরি হলে ভোক্তারা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এতে পণ্যের দামও নাগালের মধ্যে থাকে না। রফিক মিয়া বলেন, খেজুর আর চিনির বাজারে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।

একই বাজারের সিরাজ ফুডের বিক্রয়কর্মী মো. মিরাজ মিয়া বলেন, রোজায় যে খেজুর বেশি চলে, এর মধ্যে মরিয়ম অন্যতম। বর্তমানে এই খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজিতে। এক মাস আগেও ছিল ৬০০ টাকা। তাঁর আশঙ্কা, এই খেজুর এক হাজার টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে আমদানি সহজ করা হলে দাম কমতেও পারে। এ ছাড়া কুলের মতো আকৃতির আরেকটি খেজুর বেশি চলে । বর্তমানে এই খেজুরের দাম ২৮০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ২৬০ টাকা।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা ইউসুফ জেনারেল স্টোরের মালিক মো. ইউসুফ আলী কবির বলেন, চিনি সরবরাহে ঘাটতি হলেও সরকারি দর অনুসারে ১১২ টাকায় বিক্রি করছেন তাঁরা। এক মাস আগে প্রতি কেজি চিনি ছিল ১০৭ টাকা। সয়াবিন তেল এক লিটারের বোতল ১৮৫ টাকা, পাঁচ লিটার ৮৭০ থেকে ৮৮০ টাকা। আর খোলা সয়াবিন প্রতি কেজি ১৯০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

ইউসুফ আলী কবির বলেন, রোজার মৌসুম এখনো শুরু হয়নি বলে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। এক মাস আগেও ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ছিল। এ ছাড়া দেশি ডাল ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা, ভারত থেকে আনা ডাল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের মিজান স্টোরের মালিক মিজানও একই তথ্য দেন।

খেজুরের বিষয়ে মকবুল স্টোরের জসিম উদ্দিন বলেন, এলসি ও ডলার সংকটের ফলে খেজুরের দাম বাড়ছে। পাইকারি বাজারে গত এক সপ্তাহে কার্টনপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। বাজারে ৫, ১০ ও ২০ কেজি ওজনের কার্টন পাওয়া যায়। এক মাস আগে মরিয়ম খেজুর ছিল প্রতি কেজি ৮২০ টাকা, বর্তমানে ৯৫০ টাকা। এ ছাড়া মাঝারি মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। এই খেজুর এক মাস আগেও ছিল ৭৩০ টাকা। কুল খেজুর ছিল ১৮০ টাকা, যা ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/02/17/1252761