১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, শুক্রবার, ১১:৫৩

নিত্যপণ্যের বাজারে বড় কোনো সুখবর নেই।

ব্রয়লার মুরগির দামে রেকর্ড

বাড়তি সব ধরনের মাংসের দাম। ডিমের দামও বেড়ে আছে।

সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়তে বাড়তে এখন প্রতি কেজি ২২৫ থেকে ২৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে প্রায় ১০০ টাকার মতো বেড়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এতটা বাড়তি দামে ব্রয়লার মুরগি কখনো বিক্রি হয়নি।

বেড়েছে সোনালি মুরগির দামও। দেশি মুরগির দাম সাধারণের নাগালের বাইরে গেছে অনেক আগেই। বাজারে অন্যান্য মাংসের দামও বাড়তি। উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল চাল, ডাল, আটা, ময়দা ও সয়াবিনসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য।

এদিকে বাজারে চিনির সংকট এখনো কাটেনি। প্যাকেটজাত চিনি প্রায় উধাও। শীতকালীন সবজি নাগালের মধ্যে এলেও কাঁচা মরিচ কিনতে দাম কিছুটা বাড়তি দিতে হচ্ছে।

কয়েক দিন ধরে চিনির জন্য বললেও ডিলাররা চিনি দিতে পারছেন না। প্যাকেটজাত চিনি অনেক দিন ধরে পাই না। এখন খোলা চিনিতেও সংকট দেখা দিয়েছে। আর দামের লাগাম নেই কয়েক মাস ধরে
আল্লাহর দান জেনারেল স্টোরের মালিক মো. শিপন

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা ও মালিবাগ বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বাজারে সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মতো। গতকাল সেগুনবাগিচা ও মালিবাগ বাজারে সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩১০ থেকে ৩৩০ টাকায়। বাজারে দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায়। গত এক মাসে দেশি মুরগির দামে অবশ্য বড় কোনো পার্থক্য নেই। এদিকে ডিমের দামও বাড়তি। ফার্মের মুরগির বাদামি রঙের ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায়।

উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও অনেক খামার বন্ধ হওয়ায় বাজারে ডিম ও মুরগির সংকট দেখা দিয়েছে। তাতে একশ্রেণির ব্যবসায়ী দাম বাড়াচ্ছেন উল্লেখ করে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, খাদ্য ও বাচ্চার মূল্যবৃদ্ধির ফলে মুরগির দাম একটু বাড়তে পারে। তবে এখনকার দাম মাত্রাতিরিক্ত। এত বেশি দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হোক, সেটি আমরাও চাই না। কারণ, প্রান্তিক খামারিরা বাড়তি দাম পাচ্ছেন না।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী দেশে প্রতিবছর ফার্মের মুরগির চাষ হয় ৩১ কোটি ১৮ লাখ। গত কয়েক বছরে উৎপাদন ক্রমে বেড়েছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাজার চাহিদার সঙ্গে উৎপাদন বাড়লেও কাঁচাবাজারের মতো ডিম ও মুরগির বাজারেও সময়ে–সময়ে অস্থিরতা দেখা দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে বাজারে অভিযান ছাড়াও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে এবার বাজারে সরকারি তৎপরতা কম দৃশ্যমান হচ্ছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে ডিম ও মুরগির দাম ঠিক কত হলে যৌক্তিক হবে, সেটি নির্ধারণ করা নেই। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সেই সুযোগও নেই। তবে সরকার যেসব পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে থাকে, সেসব পণ্যের দামে ক্রেতারা ঠকছেন কি না, সেটি নিয়মিতভাবে তদারক করা হয়।

বাজারে মুরগির মাংস ছাড়াও সব ধরনের মাংসের দামই বাড়তি। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়; আর খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি
বাজারে চালের দাম এখনো উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত এক মাসে মোটা চালের দাম বেড়েছে ২ শতাংশের ওপরে। আর সরু চালের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশের মতো। সামনে আসছে রমজান। এ সময়ে বাজারে ছোলা ও মসুর ডালজাতীয় খাবারের চাহিদা বাড়ে। এমন সময়ে ছোলা ও ছোলার ডালের দাম বাড়ছে। মানভেদে মসুর ডালের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৪০ টাকা। আর সয়াবিন তেল প্রতি লিটার সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ১৯০ টাকাতেই বিক্রি হচ্ছে।

তবে বাজারে সরবরাহ ভালো থাকায় নাগালের মধ্যে চলে এসেছে শীতের বেশ কিছু সবজি। তবে বেগুন প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের দাম একটু বেশি, প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। মাছের মধ্যে রুই মাছ মানভেদে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। চাষের তেলাপিয়া ও পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার আশপাশে।

চিনির সংকট এখনো কাটেনি
বাজারে উধাও হয়ে গেছে প্যাকেটজাত চিনি। সীমিত খোলা চিনির সরবরাহও। তাতে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও বেশি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। প্রতি কেজি চিনির দাম পড়ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। লাল চিনির দাম প্রতি কেজি ১৫০ টাকার আশপাশে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর তৈরি হওয়া ডলার ও জ্বালানিসংকটের কারণে গত বছরের জুলাই-আগস্ট থেকে চিনির বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় গত সেপ্টেম্বরে সরকার প্রথমবারের মতো চিনির দাম বেঁধে দেয়। এরপর আরও তিন দফা দাম বাড়ায় সরকার। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে নতুন করে খোলা চিনি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও এই দামও কার্যকর হয়নি।

সেগুনবাগিচা বাজারের আল্লাহর দান জেনারেল স্টোরের মালিক মো. শিপন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে চিনির জন্য বললেও ডিলাররা চিনি দিতে পারছেন না। প্যাকেটজাত চিনি অনেক দিন ধরে পাই না। এখন খোলা চিনিতেও সংকট দেখা দিয়েছে। আর দামের লাগাম নেই কয়েক মাস ধরে।’

https://www.prothomalo.com/business/y5gx81cpwt