১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১২:১৭

আরো প্রাণঘাতী হতে পারে বার্ড ফ্লু

মিউটেশন বা রূপান্তর হয়ে বার্ড ফ্লু ভাইরাস মানুষের জন্য আরো প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। ইতোমধ্যে নজিরবিহীন একটি প্রাদুর্ভাবের কারণে এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এইচ৫এন১ নামক স্ট্রেইনটি ইতোমধ্যে পাখিজাতীয় প্রাণী থেকে খেকশিয়াল (ফক্স), ভোঁদড় (ওটার) ও বেজি জাতীয় প্রাণী মিঙ্ককে (এ প্রাণীটিকে গৃহে পালন করা হয়। এর লোম হতে দামি কম্বল তৈরি হয়) আক্রান্ত করেছে। এর আগে শুধু পাখি বা পাখিজাতীয় মুরগি ও হাঁসকে আক্রান্ত করত। ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, মারাত্মক এই জীবাণুটি এখন মানুষকে আক্রান্ত করতে মাত্র এক ধাপ পেছনে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করছেন যে, বার্ড ফ্লু থেকে মানুষের মধ্যে মহামারী হতে এখন পর্যন্ত একটি মাত্র বাধা বাকি রয়েছে।

ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন ফর এনিমেল হেলথ-ডব্লিউওএএইচ সতর্ক করছে যে, স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বিভিন্ন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মিশ্রণের পাত্র (মিক্সিং ভেসেল) হিসেবে কাজ করতে পারে। এই স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে বার্ড ফ্লু’র নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে পারে। এমনটা ঘটলে এটা মানুষের জন্য খুবই ক্ষতির কারণ হতে পারে। মানুষের মধ্যে এইচ৫এন১ স্ট্রেইনটি প্রাণঘাতী হয়ে ওঠার হার ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ পৌঁছেছে। ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৯০০ মানুষ বার্ড ফ্লু বা এইচ৫এন১ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মানুষের মধ্যে সীমিত আক্রান্তের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এর আগে মানুষ থেকে মানুষে ভাইরাসটি ছড়াত না।

ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, কোভিড শুরু হওয়ার সময় কোভিডের মৃত্যু হার ছিল ৩ শতাংশ আবার ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মৃত্যুর হার ছিল ২৫ থেকে ৯০ শতাংশ। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ২০২১ সালের অক্টোবরের পর থেকে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা এইচ৫এন১ ভাইরাসে আক্রান্তের নজিরবিহীন একটি রেকর্ড হয়েছে। ডব্লিউওএএইচ বলছে, বার্ড ফ্লুর কারণে কিছু নতুন অঞ্চলে প্রাণী দেহে বিধ্বংসী প্রভাব পড়েছে। এ কারণে বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তায় এবং পোল্ট্রি ফার্মিংয়ের ওপর যাদের জীবিকা নির্ভরশীল তাদের আয়-রোজগারেও ঝুঁকিতে পড়েছে। একই রকমভাবে বন্য পাখী ও বন্যপ্রাণীদের উদ্বেগজনক হারে মৃত্যু হচ্ছে। ইংল্যান্ডের চলমান প্রাদুর্ভাবে পাখীদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০০টি কেস শনাক্ত হয়েছে। পাখীদের সাথে সাথে খেকশিয়াল, ভোঁদড়রাও আক্রান্ত হচ্ছে বার্ড ফ্লু আক্রান্ত পাখি খেয়ে।

ভাইরোলজিস্ট বলছেন, পাখি থেকে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে নিজের মধ্যে রূপান্তর (মিউটেশন) ঘটিয়ে এবং এই মিউটেশনই মানুষকে আক্রান্ত করার পথ সহজ করে দিচ্ছে। তবে ডব্লিউওএএইচ বলছে, স্তন্যপায়ী প্রাণীকে বার্ড ফ্লু আক্রান্ত করছে, এটা একেবারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো কিছু গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে।

ডব্লিউওএএইচ বলছে, তবে বিজ্ঞানীরা ব্যাপারটি অন্যভাবেও ব্যাখ্যা করে বলছেন যে, এটা এমনও হতে পারে পাখি থেকে স্তন্যপ্রায়ী প্রাণীতে যাওয়ার পর প্রাণীদেহে ভাইরাসটি ক্ষতিকর না হয়ে নিরপেক্ষ হয়ে যেতে পারে। প্রাণীরা ভাইরাসটিকে নিজের মধ্যে খাপ খাইয়ে নিতে পারে অথবা মানুষের মধ্যে এসেই ভাইরাসটির আর অস্তিত্ব নাও থাকতে পারে অর্থাৎ এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার খেলা মানুষের মধ্যে এসেই শেষ হয়ে যেতে পারে। তবে তারা বলছেন, বেজি জাতীয় প্রাণী মিঙ্ক অথবা কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার মিশ্রণের পাত্র হিসেবে কাজ করতে পারে। অথবা নতুন স্ট্রেইন হয়ে বা উপ-ধরন হয়ে মানুষের জন্য অথবা প্রাণীদের জন্য অধিকতর ক্ষতিকরও হতে পারে। ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কনট্রোল বলছে, বিশ্বব্যাপী বার্ড ফ্লুতে মৃত্যু ৫০ শতাংশ। মিঙ্কের মধ্যে সাম্প্রতিকতম সংক্রমণ উদ্বেগজনক। তবে ডব্লিউওএএইচ বলছে, পাখী থেকে প্রাণীদের মধ্যে বার্ড ফ্লু কিভাবে ছড়াচ্ছে, এ ধরনের একটি গবেষণা চলমান আছে। গত মঙ্গলবার ডেইলি মেইল অনলাইন রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/728192