১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ১১:৫০

পাঠ্য বইয়ে কী সংশোধনী আসছে?

 নতুন বছরের পাঠ্য বই শিক্ষার্থীদের হাতে ওঠার পর থেকেই চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ইতিহাসের বিকৃতি, তথ্য ও পরিসংখ্যানগত বিভ্রাট, চৌর্যবৃত্তিসহ নানা বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে অনেক। অভিযোগ উঠেছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতেরও। শুরুতে এসব বিষয় খুব একটা আমলে না নিলেও তীব্র সমালোচনার মুখে টনক নড়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি)। বিতর্কের মুখে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দু’টি বই প্রত্যাহার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়াও সংশোধন আনা হচ্ছে ৩টি বইয়ে। এক বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই জানায় এনসিটিবি। এতে স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম। প্রত্যাহার করা দু’টি বই হচ্ছে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সমাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’। আর যেসব বইয়ে সংশোধন আনা হচ্ছে সেগুলো হলো- ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’ এবং ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’।

কিন্তু এসব বইয়ের কোন কোন জায়গায় সংশোধন আনা হবে তা বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করা হয়নি।

তবে জানা গেছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেগুলোর ভাষা ও শব্দগত পরিবর্তন আনা হবে। এ ছাড়াও বাদ দেয়া হবে কয়েকটি অধ্যায়। আবার কিছু কিছু বিষয় অন্য ক্লাসের পাঠ্যসূচি করা হবে। কারণ এসব বিষয় তুলনামূলকভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে। এনসিটিবি বলছে, যে পরিবর্তনই আনা হোক না কেন সেটি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সংশোধন করা হবে। আর যেসব সংশোধন আনা হবে সেগুলো অনলাইনে দিয়ে দেয়া হবে। সব স্কুলকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে যাতে তারা এটি শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়। আর এ কাজটি করা হবে অতি দ্রুত। গত বৃহস্পতিবার রাতে এনসিটিবি পাঠ্য বই নিয়ে আপত্তির বিষয়ে এক বৈঠক করে। সেখানে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, যেসব বিষয়ে আপত্তি আসছে সেগুলো সংশোধন করা হবে। শব্দ ও তথ্যগত কিছু বিষয় বাদ দেয়া হবে। তিনি বলেন, নতুন কারিকুলামে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির এ দু’টি বিষয়ে দু’টি করে বই দেয়া হয়েছে। অন্যান্য বিষয়ে কিন্তু একটিই বই দেয়া হয়েছে। তাই যেটি বাদ দেয়া হয়েছে সেটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনে কোনো ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে না। কারণ এখানে মূল বই ‘অনুশীলনী পাঠ’।

এখানে সব রিসোর্স রয়েছে। তাই এ বইটির কিছু কিছু জায়গায় সংশোধন আনা হবে। প্রফেসর মশিউজ্জামন বলেন, প্রত্যাহারের ফলে অনুসন্ধানী পাঠ বইটি পড়ার সুযোগ না থাকলেও অনুশীলনী পাঠ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে পারবে। কারণ বইগুলো অ্যাকটিভিটি বেইজড। আমাদের পাঠ্য বইয়ে যে কন্টেন্ট আছে, তা কিন্তু সব নয়। এর বাইরেও পড়ার সুযোগ শিক্ষার্থীদের আছে। ফলে দু’টি বই স্থগিত করলেও শিক্ষার্থীদের পড়ার ক্ষেত্রে কোনো বিঘœ ঘটবে না। তিনি বলেন, সংশোধনীগুলো আমরা দ্রুত অনলাইনে দিয়ে দেবো। এ বিষয়ে স্কুলগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হবে। এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানান, বইগুলোতে নানা সভ্যতার আলোচনা এসেছে। যেগুলো সংশ্লিষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এগুলো বাদ দিয়ে নবম-দশম শ্রেণির পাঠ্য করা হবে। সভ্যতাগুলো হলো- প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতা। এ ছাড়াও এখানে তুলনামূলকভাবে প্রাচীন বিভিন্ন দেবদেবীর আলোচনাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে নানা ছবি। যেগুলো বাদ দেয়ার নির্দেশনা ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও। এসব বিষয়ে আলোচনাও হচ্ছে বেশি। তাই এগুলো বাদ দেয়া হয়েছে। তারা জানান, অনুশীলনী পাঠ অংশের বিভিন্ন শব্দ নিয়ে আপত্তি হচ্ছে। যেমন- বইতে ছিল দখল।

যেটিকে আমরা সংশোধন করে বিজয় লিখতে পারি। আবার আমাদের ইতিহাসকে গুরুত্ব দিয়ে প্রাচীন দেবদেবীদের কিছু ইতিহাস সংকোচিত করা হবে। আবার ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের ‘মানব শরীর’ শিরোনামে লেখা অংশের কিছু অ্যাডাল্ট বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তাই এগুলো সংশোধন না বাতিল করার কথা ভাবছে এনসিটিবি। এ ছাড়াও মানুষের পূর্বপুরুষক্রম নিয়েও আপত্তি থাকায় এটিও বাদ যেতে পারে। একই শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’ অংশে বাংলায় প্রায় ৬০০ বছরের মুসলিম শাসন, সপ্তম শ্রেণির একই বইয়ে সুলতানি শাসন অংশেও পরিবর্তন আসতে পারে। সপ্তম শ্রেণির বইতে ট্রান্সজেন্ডারের আলোচনায় সংশোধন আসছে। আবার ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ‘অনুশীলনী পাঠ’ বইয়ের ‘খুশি আপা’ গল্পেরও সংশোধন আসছে। এ ছাড়াও আর কী কী বিষয়ে সংশোধন বা পরিবর্তন আনা যায় সেসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া হবে। ইতিমধ্যে পাঠ্য বইয়ে ভুলভ্রান্তি ও অভিযুক্তদের খুঁজতে পৃথক দু’টি কমিটি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর একটি কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ কমিটি, অন্যটি তদন্ত কমিটি। উভয় কমিটিতে সদস্য সংখ্যা ৭। বিশেষজ্ঞ কমিটির মেয়াদ ৩০ দিন এবং তদন্ত কমিটির ২১ দিন। এ সময়ের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেবেন কমিটির সদস্যরা। একটি কমিটিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তারকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। অন্যটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক প্রফেসর ড. আব্দুল হালিমকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। দুই কমিটিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে এনসিটিবি।

https://mzamin.com/news.php?news=42597