১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, রবিবার, ১১:৪১

সঙ্কট মেটাতে সব ব্যাংকই দ্বারস্থ হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে

টাকার সঙ্কট মেটাতে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক থেকে ধার নিয়ে থাকে। আন্তঃব্যাংকে টাকা পাওয়া না গেলে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়। ব্যাংকগুলোর চাহিদার নিরিখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সহযোগিতা করে থাকে। এতদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো দ্বারস্থ হতো; কিন্তু এখন প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর দেয়া আবেদন যাচাই-বাছাই করে টাকার জোগান দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেমন গত ৬ ফেব্রুয়ারি তিনটি ব্যাংককে ৭০০ কোটি টাকা জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে গত ৬ ফেব্রুয়ারিতে তিনটি ইসলামী ব্যাংক তারল্য সহায়তার (আইবিএলএফ) আওতায় ৭০০ কোটি টাকা ১৪ দিনের জন্য ধার চেয়েছিল। এ জন্য ব্যাংকগুলো তিনটি দরপত্র দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই দিন ইসলামী ব্যাংকগুলোর সব আবেদনই গ্রহণ করেছিল। ফলে ওই দিন ১৪ দিনের জন্য তিনটি ব্যাংক ৭০০ কোটি টাকা ঋণ পায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলোর প্রতি ১০০ টাকায় মুনাফা গুনতে হবে ৭ টাকা। এ-সংক্রান্ত এক প্রতিদেন থেকে দেখা যায়, ৬ ফেব্রুয়ারি ছয়টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান টাকার সঙ্কট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এক হাজার ৭২১ কোটি টাকা সাত দিনের জন্য ধার চেয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর সব আবেদনই গ্রহণ করে। একই দিনে, এক দিনের জন্য ছয়টি ব্যাংক টাকার সঙ্কট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এক হাজার ২৩৬ কোটি টাকা ধার চায়। ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সব আবেদনই গ্রহণ করে। ইসলামী ব্যাংক ও প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই দিন তিন হাজার ৬৫৭ কোটি টাকার জোগান দেয়।

অনুরূপভাবে গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক দিন ও সাত দিনমেয়াদি রেপো ও তারল্য সহায়তার আওতায় দুই হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা ধার নেয় আটটি ব্যাংক। পাশাপাশি ২ ফেব্রুয়ারি প্রায় চার হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা নেয় ব্যাংকগুলো। এরমধ্যে একটি ইসলামী ব্যাংক ১৪ দিনের জন্য ধার নেয় ২০০ কোটি টাকা।

সাধারণত, কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপো ও তারল্য সহায়তার বিপরীতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সুদ বা মুনাফা আদায়ের পাশাপাশি ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক নিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের হাতে থাকা বিভিন্ন মেয়াদি ট্রেজারি বিল ও বন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বন্ধক রেখে সঙ্কট মেটাতে ধার নিয়ে থাকে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকগুলো মুনাফাভিত্তিক লেনদেন করায় তাদের হাতে ট্রেজারি বিল ও বন্ড নেই, আছে সুকুক বন্ড, যা বন্ধক রেখে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ধারে অর্থ নিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত ট্রেজারি বিল ও বন্ড রয়েছে, যা দিয়ে তারা এসএলআর সংরক্ষণ করে থাকে। অনেকসময় এসএলআর সংরক্ষণ করার পরেও বাড়তি ট্রেজারি বিল ও বন্ড তাদের হাতে থাকে। আর এসব ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে ব্যাংকগুলো তাদের আপৎকালীন সঙ্কট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নিয়ে থাকে; কিন্তু ইসলামী ব্যাংকগুলোর হাতে একটি নির্ধারিত অঙ্কের সুকুক বন্ড রয়েছে। অনেক ব্যাংকেরই তাদের বন্ড বন্ধক রাখার সীমা শেষ হয়ে গেছে। আর এ কারণে বিকল্প উপায়ে ব্যাংকগুলোর তারল্য সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মুদারাবা তারল্য সহায়তা বা এমএলএস চালু করেছে। ব্যাংকগুলো প্রণোদনা প্যাকেজে ঋণের বিপরীতে মুনাফার যে অংশটুকু সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি পাবে এবং রেমিট্যান্সের বিপরীতে যে অংশটুকু নগদ সহায়তা পাবে তা আগাম লিয়েন দেয়ার বিপরীতে তহবিল জোগান দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি সপ্তাহ থেকেই এমএলএসের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে নগদ অর্থের জোগান পাবে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/727224