৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১০:২৪

ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশ পিছিয়েছে ৮ ধাপ

বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে গত বছর ১২১টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে ছিল ৭৬তম। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান আট ধাপ পিছিয়েছে। এর আগে ২০২০, ২০১৯ ও ২০১৮ সালের সূচকে অবস্থান ছিল যথাক্রমে ৭৫, ৮৮ ও ৮৬তম। ১৯.৬ স্কোর নিয়ে ‘মাঝারি ক্ষুধার’ স্তরে অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তান এ সূচকে ৯৯তম, ভারত ১০৭তম এবং আফগানিস্তান ১০৯তম অবস্থানে রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবেশী এসব দেশের চেয়ে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে শ্রীলঙ্কা (৬৪) ও নেপালের (৮১) অবস্থান বাংলাদেশের ওপরে। তা ছাড়া তালিকায় আফ্রিকার কয়েকটি দেশ- তিউনিসিয়া, মরক্কো, ঘানা, সেনেগাল, গ্যাবন, মিসর, নামিবিয়া, ক্যামেরুনের অবস্থান বাংলাদেশের ওপরে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স ২০২২ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ যৌথভাবে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক-২০২২ রিপোর্টটি প্রকাশ করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত সূচকে শূন্যের কোঠায় চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ক্রমান্বয়ে খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সাবেক এই খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খুব শিগগিরই দেশ ক্ষুধামুক্ত হবে।’

অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (বিএনএনসি) মহাপরিচালক ড. হাসান শাহরিয়ার কবির এবং কৃষি গবেষণা পরিষদ বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার উপস্থিত ছিলেন।

আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ ২০১৪ থেকে শতকরা ২৫.৫ ভাগ উন্নতি করেছে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৬.৩, যা ক্ষুধা সূচকে গুরুতর বলে বিবেচিত হয়। ২০১৪ সাল থেকে, এদেশে অপুষ্টির হার, শিশু স্ট্যান্টিং এবং শিশুমৃত্যুর হার সবই কমে গেছে। শিশু অপচয়ের হার পূর্ববর্তী বছরগুলোতে উচ্চ হার ছিল। এই হারও ২০১৪ সালের ১৪.৪ শতাংশের তুলনায় বর্তমানে ৯.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে চাইল্ড স্ট্যান্টিংয়ের হার দেশে ক্রমাগত হ্রাস পাওয়া একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। দারিদ্র্যবান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পিতা-মাতার শিক্ষা লাভ, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন এবং জনসংখ্যাগত উন্নতি সর্বোপরি ক্রমবর্ধমান পারিবারিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণ বলে বিবেচিত। যদিও বর্তমানে শিশু স্ট্যান্টিংয়ের মাত্রা ২৮.০ শতাংশ, যা উচ্চহার হিসাবে বিবেচিত করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশ উন্নতি করলেও, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, চরম আবহাওয়া, ভয়াবহ বন্যা এবং জলবায়ুু সঙ্কটের কারণে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা ক্রমশ হুমকির মুখে পড়েছে। দারিদ্র্য এবং বৈষম্যের মতো বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো ইতোমধ্যেই ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের শিকার সমাজের দরিদ্রতম অংশ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাম্প্রতিক যুদ্ধ, মহামারী এবং জলবায়ুু পরিবর্তন লাখ লাখ মানুষের আর্থসামাজিক অবনতির অন্যতম কারণ। বাংলাদেশের জিএইচআই স্কোর অতীতের তুলনায় ভালো হয়েছে, উদ্বেগজনক মাত্রা থেকে মাঝারি মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। তবে এটা স্পষ্ট যে বর্তমান খাদ্যব্যবস্থা, দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূর করার জন্য যথেষ্ট নয়। আমাদের অবশ্যই সব স্তরে অধিকারভিত্তিক খাদ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এবং এটি অর্জনের জন্য, সরকার, এনজিও এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের অবশ্যই স্থানীয় জনগণকে কাজে লাগাতে হবে এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় নেতৃত্বকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।

কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনীশ কুমার আগরওয়াল বলেন, ‘বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা এবং জিএইচআই অনুযায়ী পুষ্টিসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি করেছে। কিন্তু কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েই গেছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে মৌলিক খাবারের সংস্থানও ইতোমধ্যেই দেশ ও বিশ্বের অনেক দরিদ্র পরিবারের নাগালের বাইরে চলে গেছে। স্থানীয় সরকার ও সুশীলসমাজের শক্তিশালী পারস্পরিক সহযোগিতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ খাদ্যব্যবস্থার ইতিবাচক রূপান্তরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/726519