৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ৪:০৭

এলপিজি স্টেশনে সিলিন্ডারে রিফিল হচ্ছে রান্নার গ্যাস

কুমিল্লায় গাড়ির জ্বালানি লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ফিলিং স্টেশনে অবৈধভাবে রিফিল করা হচ্ছে রান্নার কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার।

ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বেশ কয়েকটি এলপিজি স্টেশনে নিয়মিত এমন অবৈধ রিফিলের কাজ চলছে। এতে যে কোনো সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে এলপিজি এবং রান্নার গ্যাসের পার্থক্য না বুঝেই ক্রেতা বিক্রেতারা এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম এলাকায় ১৫টি এলপিজি গ্যাসের স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশনের অধিকাংশই ১২ ও ৩৫ কেজি ওজনের রান্নার কাজে ব্যবহৃত সিলিন্ডারে গাড়ির জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত এলপিজি রিফিল করা হচ্ছে। নির্ধারিত বাজার মূল্য থেকে প্রায় চার-পাঁচ শত টাকা কমে এ রিফিল পাওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ী এবং ভোক্তারা দেদারসে ফিলিং স্টেশন থেকে সিলিন্ডার রিফিল করছে।

বিস্ফোরক অধিদপ্তর সূত্র বলছে, রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজিতে ৭০ শতাংশ কোপেন ও ৩০ শতাংশ ডিউটেন সংমিশ্রণ থাকে। আর গাড়িতে ৬০ শতাংশ কোপেন ও ৪০ শতাংশ ডিউটেন সংমিশ্রণ করে ব্যবহার করতে হয়। কোপেন ও ডিউটেন সংমিশ্রণের পার্থক্য থাকায় এলপিজি গ্যাস কোনোভাবেই রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু না জেনে না বুঝে এলপিজি স্টেশনগুলো রান্নার সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিল করে দিচ্ছে। আর এসব সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে রান্নার কাজে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে। কারণ গ্যাস তৈল জাতীয়। রিফিল সংমিশ্রণ সঠিকভাবে না হলে গ্যাস সিলিন্ডারের নিচে বসে থাকে। নাড়াচাড়ার কারণে বিস্ফোরণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের নেতওয়া এলাকায় এইচবি এলপিজি স্টেশনে প্রতিদিনই গভীর রাতে রান্নার সিলিন্ডার গ্যাস রিফিল করা হচ্ছে। পিকআপভ্যান, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পরিবহণযোগে খালি সিলিন্ডার এনে রিফিল শেষে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। সরকারের নির্ধারিত মূল্য থেকে দাম কম রাখায় দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা।

চিওড়া এলাকার একাধিক সিলিন্ডার ব্যবসায়ী জানান, এইচবি এলপিজি স্টেশনে সিলিন্ডার রিফিল করার কারণে আমাদের বিক্রি আগের থেকে অনেক কমে গেছে। কারণ এলপিজি স্টেশনে রিফিল করা সিলিন্ডার বাজার মূল্যর চেয়ে চার থেকে পাঁচশ টাকা কমে বিক্রি করছে। এতে সাধারণ মানুষ রিফিলে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সেখান থেকে গ্যাস নিচ্ছেন। বিষয়টি যেন দেখার কেউ নেই। এইচবি এলপিজি স্টেশনের মালিক হুমায়ুন পাটোয়ারি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কর্মচারিরা এ ধরনের রিফিল করছে কিনা আমি খতিয়ে দেখব।

যমুনা এলপিজি গ্যাসের সিনিয়র মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, চিওড়ায় নামিদামি কোম্পানিগুলোর সিলিন্ডারে কম দামে গাড়িতে ব্যবহৃত এলপিজি রিফিল করা হচ্ছে। রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজি আর গাড়িতে ব্যবহৃত এলজিপি এক নয়। সঠিকভাবে রিফিল সংমিশ্রণ না হওয়ার কারণে গ্যাস সিলিন্ডারের নিচে বসে থাকে। এতে সিলিন্ডার নাড়াচাড়ার ফলে বিস্ফোরণের আশঙ্কা অনেক বেশি।

কুমিল্লার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) জাকির হোসেন বলেন, রান্নার গ্যাস আর গাড়ির জ্বালানি গ্যাস এক নয়। এ ক্ষেত্রে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়েই বেআইনি এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে তথ্য-প্রমাণ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হোসেন বলেন, এলপিজি স্টেশনগুলো এ ধরনের বেআইনি কাজে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/642813