৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ৩:৫৩

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশও ভূমিকম্প ঝুঁকিতে

একের পর এক ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে তুরস্ক ও সিরিয়া। গত সোমবার ভোরে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের ১২ ঘণ্টা না পেরোতেই ৭ দশমিক ৭ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে ২ দেশেই প্রাণহানির সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে একের পর এক লাশ বের করে আনছেন উদ্ধারকারীরা। ধারণা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা কয়েক হাজার হতে পারে। তুরস্ক ও সিরিয়ার ভয়াবহ এ ঘটনার পর বাংলাদেশে শুরু হয় ভূমিকম্প নিয়ে আলোচনা। যদিও এমন আলোচনা বেশ পুরনো। যখনই কোনো বড় অঘটন ঘটে তখন বাংলাদেশের অবস্থা, প্রস্তুতি নিয়ে কয়েকদিন সরকার ও বিশেষজ্ঞরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। কয়েকদিন পরই সেটি সুদূর অতীত হয়ে যায়। তারপরও সবসময় যা বলা হয়, তা হচ্ছে, বাংলাদেশে ভূমিকম্প মোকাবেলার তেমন কোনো প্রস্তুতিই নেই। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে প্রাণহানির সংখ্যা কত হতে পারে তা নিয়ে কেউই ধারণা দিতে পারছেন না। কারণ এখানে ভবন নির্মাণে মানা হয় না বিল্ডিং কোড। নেই পর্যাপ্ত রাস্তা।

বাংলাদেশে ভূমিকম্প প্রবণতা, মোকাবিলা ও পরবর্তীতে করণীয় নিয়ে বাংলাদেশ ভূমিকম্প সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ও বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেছেন, তুরস্ক ও সিরিয়ায় প্রথম ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপ্রাকৃতিক দিক থেকে অস্থিতিশীল এক অঞ্চলে। এখানে রয়েছে পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পশ্চিম বরাবর এই ফল্টের অবস্থান। পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্টকে বহু আগে থেকেই খুবই বিপজ্জনক উল্লেখ করে সতর্ক করে আসছিলেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা।

তেমনি বাংলাদেশের মূল ভূ-ভাগসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় এরকম মোটামুটি ৫টি চ্যুতি (ফল্ট) আছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তিনি বলেন, তুরস্ক-সিরিয়ার মতো বাংলাদেশও ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। আমাদের এখানে মোটামুটি ৫টি ফল্ট লাইন আছে। ১৮৯৭ সালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের একটি ফল্ট লাইনে ৮ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। সীমান্ত এলাকায় এরকম আরও ২-৩টি ফল্ট লাইন আছে। দেশের ভেতরেও বঙ্গবন্ধু সেতুর আশপাশে এবং নোয়াখালীতে এরকম ফল্ট লাইন আছে। আমাদের এখানেও ঐতিহাসিকভাবে ১৮৭০ থেকে শুরু করে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত তুরস্কের মতো বা এর চেয়ে বড় ধরনের, যেমন- ৭ দশমিক ৫ ও ৮ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। তুরস্কের ভূমিকম্পগুলোকে সে তুলনায় ছোটই বলা যায়। ভূমিকম্পের রিটার্ন পিরিয়ড ধরা হয় ১৫০-২৫০ বছর। ১৭৬২ সালে আরাকান ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়েছিল, সাইকেল হিসেবে সেটি এখনো ফিরে আসেনি। এরপর ১৮৮৫ সালে একটি ভূমিকম্প হয়েছিল, সেটা হয়ত আরও ১০-২০ বছর পর হতে পারে। এরকম ১৫০-২৫০ বছরের যে সাইকেল আছে, সেটি কখন হবে কেউ জানে না। ফলে তুরস্কও ভূমিকম্পের পূর্বানুমান করতে পারেনি। আসলে ভূমিকম্পের পূর্বানুমান করা সম্ভব নয়। তবে ব্যবস্থা একটাই, প্রস্তুতি নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পে ক্ষতির পরিমাণ কমাতে বিল্ডিং কোড এনফোর্সমেন্টকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এতে ৯৯ শতাংশ নতুন ভবন টিকে যায়। তবে পুরনো ভবনের জন্য মজবুতিকরণ পন্থায় যেতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- তুরস্ক আমাদের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত। তারা ভূমিকম্প আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গেই দুর্গত এলাকায় তল্লাশি ও উদ্ধারকারী বাহিনী পাঠিয়ে দিয়েছে, হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। তুরস্কের সব ভবন তো আর ভালো নয়, যেগুলো ভেঙেছে সেগুলোর বেশিরভাগই ২-৩ তলার, তবে আশপাশে বহুতল ভবনগুলো দাঁড়িয়ে আছে। তবে আমাদের রেসপন্ডিং ক্যাপাসিটি কতটুকু সেটা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। কেননা এক রানা প্লাজায় উদ্ধারকাজ চালাতেই আমাদের ১৫ দিন লেগে গেছে। এরকম একাধিক ভবন যদি বিধ্বস্ত হয়, সেক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা কতটুকু, একটি ভূমিকম্প না হলে আমরা নিজেদের যাচাই করতে পারব না। তারা আরও বলছেন, আমাদের শহরগুলোতে শুধু চিপা গলি আর গলি, তুরস্ক ও সিরিয়ার রাস্তাঘাট কিন্তু এমন না, বেশ চওড়া এবং সহজেই যেকোনো জায়গায় পৌঁছানো যায়। আমাদের পুরান ঢাকায় যদি ভূমিকম্প হয়, দেখা যাবে কোনো গাড়িই সেখানে ঢুকতে পারবে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে সেভাবে বিল্ডিং কোড সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। ১৯৯৬ সাল থেকে বিল্ডিং কোড আছে, এই সময়ের পর থেকে নির্মিত বহুতল ভবনগুলোও ভালো অবস্থায় নেই। এর আগের পুরনো ২-৩ বা ৫ তলার যেসব ভবন আছে, যেগুলো ভূমিকম্প সহনীয় নয়, সেগুলো যদি বিধ্বস্ত হয়, সেক্ষেত্রে প্রথমত এখনই সেগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাংলাদেশে ভূমিকম্প নিয়ে তেমন কেউ কোনো কাজ করে না। সরকারি প্রতিষ্ঠান বা প্রাইভেট সেক্টরে কিছুই নেই। যদিও ২০০১ সালে আমরা বাংলাদেশ ভূমিকম্প সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। ২০১৬ সালের দিকে একজন সরকারি যুগ্ম-সচিব সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হয়ে এর কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নেন। এরপর এই প্রতিষ্ঠানের আর কোনো খবর নেই।

সূত্র মতে, মাঝেমধ্যেই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে সারাদেশ। এসব ভূমিকম্পে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা আছে। সাম্প্রতিককালে বড় মাত্রার ভূমিকম্প না হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ভূমিকম্পের তেমন কোনো পূর্বাভাস ব্যবস্থা নেই। সেজন্য দিন-ক্ষণ সুনির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ, সেটা হতে পারে যে কোনো সময়। কিন্তু ঝুঁকি থাকলেও তা মোকাবিলার প্রস্তুতিতে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ। বহু পুরোনো ভবন, অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করা ভূমিকম্প ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রশিক্ষিত জনবলেরও সংকট রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চলে রয়েছে। অতীতে বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশ ও আশপাশে হয়েছে। তাই ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে। এটা কিন্তু হবে। বাংলাদেশের আশপাশে ভূমিকম্পের ইপি সেন্টার বা কেন্দ্র আছে। এই কারণে ৭ মাত্রার বেশি ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। তবে এটা কবে হবে, সেটা বলা যাচ্ছে না। আগামীকাল হবে, নাকি ১০০ বছর পরে হবে, নাকি ২০০ বছর পরে হবে- এটা স্টাডির ব্যাপার। তিনি আরও বলেন, আমাদের অবকাঠামোগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা ভূমিকম্প সহনীয় ভবন করি না। এছাড়া অনেক পুরোনো ভবন রয়েছে। এসব ভবন অরক্ষিত (ভালনারেবল), বিপদ (হ্যাজার্ড) আছে- তাই ঝুঁকি তো থাকবেই। অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণের কারণে আমরা নিজেদেরকেই ঝুঁকিতে ফেলেছি। রাজধানী ঢাকা সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছে।

ভূমিকম্প মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি অত্যন্ত নাজুক বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে শত শত ভবন ধসে পড়লে তা উদ্ধারে তেমন কিছু করার থাকবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট তো রয়েছেই, এর ওপর ঢাকার রাস্তাগুলোর যে অবস্থা, বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে অনেক এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম দূরের কথা, রাস্তার কারণে প্রবেশই করা যাবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে মানার কোনো বিকল্প নেই। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো দ্রুত ভেঙে ফেলতে হবে। বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক গড়ে তুলতে হবে, উদ্ধারকারী সংস্থাগুলোর জনবল বাড়াতে হবে।

সূত্র মতে, ২০১৩ সালে বুয়েটের উদ্যোগে রাজধানীর ১৫০টি ভবনে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে যে, ৬০ শতাংশ ভবন যথাযথ নকশা মেনে তৈরি হয়নি। এতসব সতর্কবাণী ভেসে আসার পরেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন নির্মাণ থেমে নেই। অবহেলা ও অপ্রস্তুতির কারণে যেকোনো মুহূর্তে ভয়াবহ প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।

গতকাল মঙ্গলবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ আয়োজিত ‘ঢাকা শহরের ভূ-প্রকৃতি এবং অভ্যন্তরীণ ভূতাত্ত্বিক বিন্যাস এর নগর পরিকল্পনাগত প্রভাব’ শীর্ষক পরিকল্পনা সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশের নগরায়ন ও নগর পরিকল্পনায় মাটির প্রকৃতি, ভূমিতলের উচ্চতা, ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য প্রভৃতিকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকার নগরায়ন প্রক্রিয়ায় জলাশয়-জলাভূমিকে ভরাট করে আবাসন ও অবকাঠামো নির্মাণের কারণে ভূমিকম্পসহ অন্যান্য নগর দুর্যোগের শংকা বাড়ছে বহুলাংশে। ভূমির যথাযথ ব্যবহার এর মাধ্যমে টেকসই নগরায়ন নিশ্চিত করবার পাশাপাশি দুর্যোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব বলে মত দেন তারা।

নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এর অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান এর সঞ্চালনায় আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মাহফুজুল হক বলেন, গত দুই দশকে ঢাকার নগরায়ন প্রক্রিয়ায় পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের যেসব এলাকায় নগরায়ন হয়েছে সেসব এলাকার মাটির বৈশিষ্ট্য ও ভূতাত্ত্বিক গঠন নগরায়নের উপযোগী নয়। ফলে ভূমিকম্প হলে বছিলার মত এলাকায় দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতির শংকা বেশি থেকে যায়। তিনি আরো বলেন, ঢাকার ভূমিতলের উচ্চতা ৫-১৮ মিটার এর মধ্যে এবং এই অঞ্চলের অনেক স্থানে ভবন নির্মাণ ও নগরায়নের জন্য উপযোগী লাল মাটি বিদ্যমান আছে। আবার অনেক এলাকায় প্রাকৃতিকভাবেই নিচুভূমি, জলাশয় ও ভূঅভ্যন্তরে পানি ধারণ অঞ্চল বা একুইফার আছে। যথাযথভাবে ‘ভূমি উপযোগিতা বিশ্লেষণ’ না করে বর্তমানে নগরায়ন হওয়াতে সামনের দিনে নগর দুর্যোগের শংকা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ভবন নির্মাণে যেমন বিল্ডিং কোড ও পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট আইন মানা হচ্ছে না, তেমনি প্রভাবশালীদের চাপে নগরায়ন হচ্ছে স্বেচ্ছাচারীভাবে। ফলে সাময়িকভাবে কেউ কেউ লাভবান হতে পারলেও প্রকৃতির প্রতিশোধ থেকে সম্মিলিতভাবে কেউ রেহাই পাবে না। উদাহরণস্বরূপ তিনি উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে হাওড় এলাকার বন্যায় সিলেট এর কেন্দ্রীয় নগর এলাকাও বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল।

অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, রাজউকের আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (ইউআরপি) এর মাধ্যমে ঢাকা শহরের মাটির প্রকৃতি ও ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যকে বিবেচনায় নিয়ে নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন করবার রূপরেখা দেয়া হয়েছে। সামনের দিনের পরিকল্পনায় এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়েই নগরের সম্প্রসারণ ও টেকসই নগরায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম আবুল কালাম বলেন, ভূমিকম্পসহ বিভিন্ন নগর দুর্যোগের প্রস্তুতির জন্য সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করবার পাশাপাশি সারা বাংলাদেশের ইমারত নির্মাণ যেন যাবতীয় নির্মাণ মানদ- মেনে করা হয়। এজন্য জাতীয় বিল্ডিং কোড এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের কাতারে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। ঘনবসতির এই শহরটির ঝুঁকি কমাতে এ পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও তার বেশিরভাগই আলোর মুখ দেখেনি। প্রতিবারই বড় কোন ভূমিকম্প হওয়ার পরই ব্যাপক তৎপরতা দেখা যায়, যা ধামাচাপা পড়ে থাকে বড় ধরনের আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানার আগ পর্যন্ত। পুরানো ঢাকার সরু অলিগলির দুই পাশে গেলে দেখা যাবে এখনও গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ভবন। সর্বোচ্চ তিন তলা গাঁথুনি যে ভবনটির, সেখানে নির্দ্বিধায় তোলা হচ্ছে ৫ তলা/ ৬ তলা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূমিকম্প অসহনশীল ভবনগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংস্কার বা ধ্বংস করার পরিকল্পনা করা হলেও তার কোন বাস্তবায়ন নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা হল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবন নির্মাণ না করা এবং সেগুলো মনিটর করে কোন ব্যবস্থা না নেয়া।

https://dailysangram.com/post/516071