১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার, ২:১৩

ধুলা আর কাদায় পিঠ ঠেকেগেছে পথচারীদের

পুরো রাস্তা ধুলায় আচ্ছন্ন। ধুলা ঠেলে একটু সামনে এগোতে কাদামাটিতে একাকার। রাস্তাটির একপাশে চলছে খননকাজ। শ্রমিকরা খনন করা মাটি ও কাদাপানি রাস্তার ওপর রাখছে। বাতাসে সড়কের ধুলা আর পথের কাদা ডিঙিয়ে সামনে এগোতে চেষ্টা করছে পথচারী, রিকশার সারি, প্রাইভেট কার। আক্ষরিক অর্থেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে পথচারী মানুষের।

রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের পাশের বেইলি রোডের চিত্র এটি। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কলেজের পাশের রাস্তা থেকে শুরু করে সার্কিট হাউস রোডে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ভবন পর্যন্ত সড়কের এই করুণ দশা। প্রবল ধুলা আর কাদায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সেখান দিয়ে চলাচল করা পথচারীরা।

মগবাজার ওয়্যারলেস মোড় থেকে পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড, সিদ্ধেশ্বরী রোড, বেইলি রোড হয়ে কাকরাইল সাবস্টেশন পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার রাস্তায় ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতের লাইন বসানোর কাজ করছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। ৪ জানুয়ারি থেকে প্রকল্পের এ অংশের কাজ শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল, মগবাজার গার্লস হাই স্কুলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান ও খাবারের দোকানের অবস্থান বেইলি রোড ও আশপাশের এলাকায়। রাস্তা কাটার ফলে সংকীর্ণ হয়ে গেছে চলাচলের পথ। এতে তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট। স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন কাজে এসব এলাকায় আসা মানুষ পড়ছে প্রবল ধুলার দুর্ভোগে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার মেয়ে এখানকার একটি স্কুলে পড়ে। এক সপ্তাহ ধরে মেয়ের ঠাণ্ডা জ্বর। এখানে রাস্তার এই অবস্থা ও ধুলাবালিতে আর আসতে ইচ্ছা করে না। স্কুলের গেট দিয়ে বের হয়ে রাস্তা পার হওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ। রাস্তার মাঝখানে ছোট একটা পাত দেওয়া। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি, কে কখন গর্তে পড়ে যায়।’
এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাস্তায় ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইন বসানোর জন্য কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এখানে কখনোই পানি ছিটানো হয়নি।

নিউ বেইলি রোড এলাকার বাসিন্দা তাহসীম হোসেন জাবীন তাঁর অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে তাহমিনা তনুকে নিয়ে প্রতিদিন ভিকারুননিসা নূন স্কুলে আসেন। কালের কণ্ঠকে তিনি জানান, সকালবেলা স্কুলে আসার সময় পুরো রাস্তায় ভয়ংকর জ্যাম তৈরি হয়, রিকশা ঢোকে না। রাস্তার কাজের কারণে এখানে প্রচুর ধুলাবালি। কিছুক্ষণ বাইরে থাকলে চোখ লাল হয়ে যায়।

মগবাজার গার্লস হাই স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহানা ফৌজিয়া প্রতিদিন মা সিলভিয়া আফরীনের সঙ্গে এই পথ দিয়ে স্কুলে আসে। ফারহানা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ধুলাবালি নাকে গিয়ে প্রতিদিনই আমার হাঁচি-কাশি হয়। তা ছাড়া রাস্তার একপাশ পুরোপুরি কাটা থাকায় পারাপারে সমস্যা হয়।’

সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সামনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য মাহাবুব আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি কখনোই এই রাস্তায় পানি ছিটাতে দেখিনি। সারা দিন এই ধুলাবালির মধ্যে দায়িত্ব পালন করে খুব সমস্যা হয়। প্রতি রাতেই আমাকে নাকের ড্রপ ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া ফেক্সো এবং মোনাস ট্যাবলেট খাই।’

বেইলি রোডে মহিলা সমিতির সামনে থেকে বাড়তে থাকে ধুলার ঘনত্ব। এরপর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাব পর্যন্ত এই ঘন ধুলার আস্তরণ থাকে। আবার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে থেকে শুরু হয়ে সিদ্ধেশ্বরী রোড, খন্দকার গলি, পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড, রমনা থানা মসজিদ রোড, বড় মগবাজার হয়ে মগবাজার ওয়্যারলেস মোড় পর্যন্ত প্রচণ্ড ধুলার আস্তরণ। অন্যদিকে সিদ্ধেশ্বরী কলেজের পাশের রাস্তা দিয়ে সার্কিট হাউস রোডে তথ্য ভবন পর্যন্ত রাস্তার কাজ চলায় এখানেও প্রচণ্ড ধুলা।

ডিপিডিসির মগবাজার সাবস্টেশন থেকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ৭ নম্বর গেট পর্যন্ত ইট ও বালু ফেলে রাস্তার কাটা অংশ ভরাট করা হলেও রাস্তার কোনো কোনো অংশ উন্মুক্ত দেখা গেছে। বালু দিয়ে রাস্তা ভরাট করায় এই অংশে দিনের বেলায় ধুলায় নৈরাজ্য চলে।

সিদ্ধেশ্বরী রোডে মনোয়ারা হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একপাশে কাটা থাকায় রাস্তা অনেক সরু হয়ে পড়েছে। ধুলাবালিতে রোগীদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ধুলার কারণে আমাদেরও নাকে যন্ত্রণা হয়।’

দুর্ভোগ ও ধুলায় অতিষ্ঠ বড় মগবাজার এলাকার নুসাবা ফার্মেসি অ্যান্ড জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী ডি এম মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এত ধুলাবালির মধ্যে দোকানদারি করা যায় নাকি? কেউ পানিও ছিটায় না। পানি ছিটানোর কি ঠেকা পড়ছে ওদের? ভুগবে তো মানুষ, ওদের কী?’

ডিপিডিসির প্রকল্পটির এই অংশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রনি এন্টারপ্রাইজ। রাস্তা কাটা ও ধুলার কারণে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ সম্পর্কে প্রকল্পের সাইট ইঞ্জিনিয়ার রিশাদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ধুলা কমাতে রাতের বেলায় পানি ছিটানো হয়। আসলে ওই রাস্তায় দিনের বেলায় প্রচণ্ড চাপ থাকে। এ সময় পানি ছিটানোর গাড়ি ঢুকতে পারে না। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করব।’


https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/02/01/1240715